ধর্ম

নামাজরত অবস্থায় নবিজির (সা.) নাম শুনলে দরুদ পড়তে হবে?

নামাজরত অবস্থায় নবিজির (সা.) নাম শুনলে দরুদ পড়তে হবে?

সাধারণ অবস্থায় আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম) নাম উচ্চারণ করলে বা শুনলে দরুদ পড়া ওয়াজিব। কোনো আলোচনায় বা লেখায় নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাম উচ্চারণ করা হলে বা পাঠ করা হলে লেখক, পাঠক, শ্রোতার জন্য অন্তত একবার নবিজির ওপর দরুদ পাঠ করা ওয়াজিব। একই বৈঠকে বা লেখায় একাধিকবার নবিজির নাম আলোচিত হলে একবার দরুদ বলা ওয়াজিব, আর একাধিকবার দরুদ পড়া মুস্তাহাব।

Advertisement

আলী (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,

الْبخِيلُ مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَم يُصَلِّ علَيَّ

কৃপণ সেই লোক যার সামনে আমার আলোচনা করা হয় অথচ সে আমার ওপর দরুদ পড়ে না। (সুনানে তিরমিজি)

Advertisement

তবে এই বিধান বা নির্দেশনা সাধারণ অবস্থার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কেউ যদি নামাজ আদায়রত থাকে, তখন তার সামনে কেউ নবিজির (সা.) নাম উচ্চারণ করলেও তার জন্য দরুদ পড়া আবশ্যক নয়। অন্যান্য সব কথাবার্তার মতো নবিজির (সা.) নাম শুনে দরুদ পড়া থেকেও সে বিরত থাকবে।

তিলাওয়াতে নবিজির (সা.) নাম এলে করণীয়

নামাজের তিলাওয়াতে কোরআনের আয়াতে নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নাম এলে তিলাওয়াতের মাঝে দরুদ পড়ার নিয়ম নেই। নামাজের বাইরে কোরআন তিলাওয়াতেও নবিজির (সা.) নাম এলে দরুদ পড়ার নিয়ম নেই। এ রকম ক্ষেত্রে তিলাওয়াতের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। যেমন সুরা আলে ইমরানে আল্লাহ বলেছেন,

وَ مَا مُحَمَّدٌ اِلَّا رَسُوۡلٌ قَدۡ خَلَتۡ مِنۡ قَبۡلِهِ الرُّسُلُ اَفَا۠ئِنۡ مَّاتَ اَوۡ قُتِلَ انۡقَلَبۡتُمۡ عَلٰۤی اَعۡقَابِکُمۡ وَ مَنۡ یَّنۡقَلِبۡ عَلٰی عَقِبَیۡهِ فَلَنۡ یَّضُرَّ اللّٰهَ شَیۡئًا وَ سَیَجۡزِی اللّٰهُ الشّٰکِرِیۡنَ

মুহাম্মাদ কেবল একজন রাসূল। তার পূর্বে অনেক রাসূল বিগত হয়েছে। যদি সে মারা যায় অথবা তাকে হত্যা করা হয়, তবে তোমরা কি পেছনে ফিরে যাবে? আর যে ব্যক্তি পেছনে ফিরে যায়, সে কখনো আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারে না। আল্লাহ অচিরেই কৃতজ্ঞদের প্রতিদান দেবেন। (সুরা আলে ইমরান: ১৪৪)

Advertisement

সুরা ফাতহে আল্লাহ বলেছেন,

مُحَمَّدٌ رَّسُوۡلُ اللّٰهِ وَ الَّذِیۡنَ مَعَهٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَی الۡکُفَّارِ رُحَمَآءُ بَیۡنَهُمۡ تَرٰىهُمۡ رُکَّعًا سُجَّدًا یَّبۡتَغُوۡنَ فَضۡلًا مِّنَ اللّٰهِ وَ رِضۡوَانًا

মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়, তুমি তাদেরকে রুকূকারী, সিজদাকারী অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করছে। (সুরা ফাতহ: ২৯)

এ আয়াতগুলো তিলাওয়াতের সময় ‘মুহাম্মাদ’ শব্দের পরে দরুদ না পড়ে স্বাভাবিক নিয়মে তিলাওয়াত করে যেতে হবে।

দরুদ পাঠের ফজিলত

নবিজির রাসুলের (সা.) জন্য দোয়া করা, দরুদ পড়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তাআলা কোরআনে নবিজির জন্য সালাত ও সালাম পাঠের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন,

اِنَّ اللّٰهَ وَ مَلٰٓئِکَتَهٗ یُصَلُّوۡنَ عَلَی النَّبِیِّ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا صَلُّوۡا عَلَیۡهِ وَ سَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا

নিশ্চয় আল্লাহ নবির প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবির জন্য দোয়া করে। হে মুমিনগণ, তোমরাও নবির ওপর দরুদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও। (সুরা আহজাব: ৫৬)অনেকগুলো হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) তার জন্য বেশি বেশি দরুদ পড়তে উৎসাহ দিয়েছেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন,

مَنْ صَلَّى عَلَيَّ وَاحِدَةً، صَلَّى الله عَلَيْهِ عَشْرًا

যে ব্যক্তি আমার জন্য একবার দরুদ পড়বে, আল্লাহ তায়ালা তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন। (সহিহ মুসলিম)

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বার্ণিত আরেকটি হাদিসে এসেছে, আল্লাহর রাসুলের জন্য দরুদ পাঠকারী কেয়ামতের দিন তার কাছে থাকবে। রাসুল (সা.) বলেন,أَوْلَى النَّاسِ بِي يَومَ القِيَامَةِ أَكْثَرُهُمْ عَلَيَّ صَلاَةً

কেয়ামতের দিন লোকদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই আমার অধিক নিকটতম হবে, যে ব্যক্তি আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করবে। (সুনানে তিরমিজি)

ওএফএফ/এমএস