ঘরের মাঠে খেলা মানেই নির্বাচকদের ‘পোয়া বারো’। প্রধান নির্বাচকও টিম ম্যানেজমেন্টের অংশ হয়ে যান। দেশের মাটিতে যেকোনো ফরম্যাটে একাদশ সাজানোয় নির্বাচকদের; বিশেষ করে প্রধান নির্বাচকের ভূমিকা থাকে অনেক বেশি।
সেই সত্যের দেখা মিললো গতকাল শনিবারর পড়ন্ত বিকেলে বাংলাদেশের অনুশীলনে। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগে শেরে বাংলায় সেন্টার উইকেটে বাংলাদেশের নেট প্র্যাকটিসের প্রায় পুরো সময় মাঠে দেখা মিললো প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর।
সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা লিপু মাঠে ঢুকে তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, নাইম শেখ, তাওহিদ হৃদয়, শামীম পাটোয়ারী, জাকের আলী অনিক, মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাসকিন আহমেদের ব্যাটিং দেখলেন পাখির চোখে। আজ রোববার সন্ধ্যায় হোম অব ক্রিকেটের যে পিচে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি, সেই পিচের দু'দিকেই নেট টানিয়ে ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন করেছে টিম বাংলাদেশ।
বোঝাই গেল, কন্ডিশনের সঙ্গে যতটা সম্ভব মিল রেখে অনুশীলন করেছে টাইগাররা। সেই কন্ডিশনের কার ব্যাটিং কেমন, কে কেমন বোলিং করলেন, তা যাচাই বাছাই করেই একাদশ সাজানোর চিন্তা বাংলাদেশের।
এদিকে ভক্ত ও সমর্থকদের মধ্যে একাদশ নিয়ে রাজ্যের কৌতূহল। কয়েকটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে প্রায় সবার মনেই।
প্রথম প্রশ্ন অনেকটা এমন, ‘শ্রীলঙ্কায় ৩ ম্যাচে রান না পাওয়া (৩৮, ০, ০) পারভেজ ইমনকেই ওপেনার হিসেবে খেলানো হবে নাকি নাইম শেখকে ‘ট্রাই’ করা হবে? দ্বিতীয় প্রশ্নটা হলো- শ্রীলঙ্কার মাটিতে সুবিধা করতে না পারলেও শেরে বাংলায় মেহেদী হাসান মিরাজের ট্র্যাক রেকর্ড ভালো। তাকে কি আরও একবার বিচেনায় আনা হবে? মিরাজ যদি খেলেন, তাহলে শেখ মেহেদীর কী হবে? যেহেতু শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করে ৪ উইকেট পেয়েছেন তিনি। তাই অফস্পিনার শেখ মেহেদীকে কি বাদ দেওয়া যায়?
এর বাইরে পেসারদের মধ্যে শেরে বাংলার গতি-প্রকৃতির সঙ্গে যার বোলিংয়ের মিল বেশি, সেই মোহাম্মদ সাইফউদ্দীনকে কি বাইরে রাখা হবে? আবার সাইফউদ্দীন খেললে তাসকিনের কী হবে? পেসার কোটায় মোস্তাফিজুর রহমান অবশ্যই থাকবেন। শেরে বাংলার স্লো পিচে শরিফুল ইসলামের কার্যকরিতা নিয়েও আছে সংশয়। সেক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ও পরিণত তাসকিনই কি বিবেচনায় থাকবেন? তাছাড়া টিমের ফরমেশন নিয়েও আছে প্রশ্ন। দলে পেসার থাকবেন ক'জন? তিন পেসার ও দুই স্পিনার ফর্মুলাই কি বহাল থাকবে? নাকি উল্টোটা হবে। বলে রাখা ভালো, শেরে বাংলার স্লো ও লো পিচে বাড়তি পেসারের চেয়ে বরাবরই স্পিনার খেলানোর নজির বেশি। হোম অব ক্রিকেটে বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান ও শান মাসুদের মতো অভিজ্ঞ ও দক্ষ ব্যাটার ছাড়াই এই সিরিজ খেলবে পাকিস্তান। বাংলাদেশে প্রথমবার খেলতে এসেছেন এ সিরিজের অধিনায়ক সালমান আলি আগা।
পাকিস্তান দলে থাকা মোহাম্মদ হারিস, ফখর জামান ও সাইম আইয়ুব- তিনজনই হাত খুলে খেলতে অভ্যস্ত। তাদের ফ্রি স্টোক প্লে বন্ধ রাখতে পেসারদের চেয়ে স্পিনাররাই হতে পারেন বেশি কার্যকর। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশ একজন পেসার কমিয়ে তিন স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজাতে পারে। সেক্ষেত্রে দুই অফস্পিনার শেখ মেহেদী ও মেহেদী হাসান মিরাজ, লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন এবং বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদের মধ্য থেকে ৩ জনকে খেলানো হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
পেসার কোটায় তখন মোস্তাফিজ, সাইফউদ্দীন ও তাসকিনের মধ্য থেকে যেকোনো দুজনকে বেছে নিতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। স্লো উইকেটে সাইফউদ্দীন কার্যকর হবেন। বাড়তি গতিতে বল করার চেষ্টায় থাকা বাঁহাতি শরিফুলের চেয়ে অনেক পরিণত ও কন্ডিশন বুঝে বল করায় দক্ষ তাসকিনকেই খেলানোর কথা ভাবতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট।
কঠিন সত্য হলো, আজ রোববার প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশ সাজানোর কাজটা সহজ হবে না। কোনো চমক না থাকলেও অভিনব অন্তর্ভূক্তি দেখা যেতে পারে। এবার সম্ভাব্য একাদশ মিলিয়ে নিন: তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ ইমন/নাইম শেখ, লিটন দাস, তাওহিদ হৃদয়, শামীম পাটোয়ারী, জাকের আলী অনিক, রিশাদ হোসেন, শেখ মেহেদী, মোস্তাফিজুর রহমান, নাসুম আহমেদ/মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ/মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন।
এআরবি/এমএইচ/