চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের এসএম ফজলুল হক ও ব্যারিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকীর নেতৃত্বাধীন কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে হাইকোর্টের জারি করা রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রুলটি নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ সোমবার (২৮ জুলাই) এ আদেশ দেন।
আদালতে ওইদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাবেক বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট রোকন উদ্দিন মোহাম্মদ ফারুক ও কেএম সাইফুল ইসলাম। অন্যদিকে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
এর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের এসএম ফজলুল হক ও মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকীর নেতৃত্বাধীন কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশনের গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে কেন এ কমিটিকে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে তা জানতে রুলও জারি করেন আদালত।
সংগঠনের সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন সোহেলের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি আকরাম হোসাইন চৌধুরী ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এরপর এ সংক্রান্ত বিষয়ে আপিল করেন এসএম ফজলুল হক। পাশাপাশি সমাজসেবা অধিদপ্তরও আপিল করেন। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার জজ আদালত গত ১৬ জুলাই বিষয়টি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এরপর গতকাল সোমবার আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ শুনানি নিয়ে এসএম ফজলুল হকের লিভ টু আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের রুল নিষ্পত্তির আদেশ দেন।
রিটকারী আইনজীবীর দাবি, এ আদেশের ফলে এস এম ফজলুল হক ও মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকীর কমিটি অগঠনতান্ত্রিক ও অবৈধ হিসেবে সর্বোচ্চ আদালতেও বিবেচিত হলো।
এর আগে গঠনতন্ত্র অনুসারে সংগঠনের তৎকালীন সভাপতি আব্দুল করিমের নির্দেশনায় গত ২ মে বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়। এতে উপস্থিত প্রায় তিন হাজার সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি নির্বাচনের লক্ষ্যে তিন মাস মেয়াদি একটি এডহক কমিটি গঠন করা হয়। এতে আহ্বায়ক হিসেবে লায়ন মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরী, সদস্য হিসেবে মো. একরামুল করিম, মাহবুবের রহমান শামীম, এম এ হালিম ও মো. কামরুল হাসান হারুনকে মনোনীত করা হয়।
এরপর ওই কমিটির অনুমোদনের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়। কিন্তু সমাজসেবা অধিদপ্তরের এ কমিটি অনুমোদন না দিয়ে আগের মাসের ২৮ এপ্রিল দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি অনুমোদন দেখানো হয় বলে দাবি করেন রিটকারীরা।
গঠনতন্ত্র অনুসারে এডহক কমিটি অনুমোদনের দিন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে এডহক কমিটি একটি নির্বাচন আয়োজন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটির হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন বলে আবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
বিশেষ সাধারণ সভার আলোচনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এডহক কমিটি এরই মধ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছে। তাদের উদ্যোগে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ জুলাই। তবে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান’র শহীদদের স্মরণে এ তারিখ পরিবর্তন করে ৮ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৮ জুলাই শহীদদের স্মরণে ও আহতদের সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল ও স্মরণ-সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রিটকারী আইনজীবী জানান, এস এম ফজলুল হক ও মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী কেউই অ্যাসোসিয়েশনের বৈধ আজীবন সদস্য নন। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, শুধু আজীবন সদস্যই সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন। জেলা কার্যালয়ে এডহক কমিটি অনুমোদনের আবেদন করা হলেও সংশ্লিষ্ট উপপরিচালক ফরিদুল আলম এখনো আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেননি।
রিটকারী সৈয়দ মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন সোহেল বলেন, ফজলুল-ফারুকীর কমিটির কোনো আইনগত বৈধতা নেই। উনারা সংগঠনের গঠনতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো পকেট কমিটি করেছেন। অনৈতিকভাবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালককে ম্যানেজ করে কমিটি অনুমোদন করিয়ে নিয়েছেন। এটা আইনের বরখেলাপ। তাই একজন সচেতন সদস্য হিসেবে আমি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আদালত তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছেন।
এর আগে গত ১১ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) সাবেক ভিপি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ এস এম শামসুজ্জামান হীরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে চাকসুর সাবেক ভিপি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম ফজলুল হককে সভাপতি ও ব্যারিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
এফএইচ/এমকেআর/এমএস