সেতুর নিচে যেন দৌলতপুরের ‘ডাস্টবিন’

• দৌলতপুরের বিভিন্ন এলাকার মায়লা ফেলা হয় সেতুর নিচে
• হিসনা নদীতে ফেলা হচ্ছে মুরগির দোকানের ময়লা
• ফেলা হয় গরুর হাটের ময়লা, পচা সবজি ও ফল
• দুর্গন্ধের তীব্রতায় সেতুর ওপর দিয়ে হাঁটা দায়
হিসনা নদী। এই নদীর তীরে অবস্থিত কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার প্রাণকেন্দ্র নামে পরিচিত আল্লাহর দর্গা। এখানে বিভিন্ন ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বসবাস। আল্লাহর দর্গা বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম একটি সেতু। এই সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় তিনটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত। দৌলতপুর উপজেলায় হিসনা নদীর ওপর দিয়ে যতগুলো সেতু আছে, তার মধ্যে আল্লাহর দর্গা বাজারের সেতুর নিচের অবস্থা সবচেয়ে বেশি দূষিত।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
একদিকে ফেলা হচ্ছে পচা সবজি, পচা ফল, ময়লা-আবর্জনা; অন্যদিকে দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাজারের ময়লা ট্রাকে করে এনে ফেলা হয় সেতুর নিচে। সবমিলিয়ে সেতুর ওপর দাঁড়াতেই যেন দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়। প্রয়োজন ছাড়া কেউই যেন ঘেঁষতে চান না সেতুর আশপাশে। অথচ একসময় এ সেতুর ওপর ছাত্র ও যুবকেরা আসতেন অবকাশ যাপনে!
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
আল্লাহর দর্গা বাজারের আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেতুর নিচে ফেলা হচ্ছে সবজি বাজারের পচা সবজি, সেলুনের চুল, পচা ফল, হোটেলের উচ্ছিষ্ট, মুদি দোকান ও মুরগির দোকানের ময়লা-আবর্জনা। ফলে এসব ময়লা পানির সঙ্গে মিশে সৃষ্টি হচ্ছে দুর্গন্ধ। প্রতি মুহূর্তে সেতুর নিচে ফেলা হচ্ছে পানি দূষণকারী বর্জ্য।
স্থানীয়রা জানান, হিসনা নদীকে খনন করা ও দূষণমুক্ত করতে এখনো কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে। ফলে দূষণ ও দখলকে ধারণ করেই নিভু নিভু প্রদীপের ন্যায় বেঁচে আছে দৌলতপুরের এই ঐতিহ্যবাহী নদী।
বিজ্ঞাপন
বাজারে ঘুরে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, হিসনা নদী সুরক্ষা ব্যানারে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক ও এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে সেতুর নিচে ময়লা না ফেলতে ব্যানারসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচারণা চালান। এরপরও মানুষ ময়লা ফেলা বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেননি।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
সেতুর পাশে ব্যবসা করা আব্দুস সালাম বলেন, ‘এখানকার দোকানি ও ব্যবসায়ীরা অনেকেই নদীতে ময়লা ফেলেন। এটা ঠিক না। ফলে দুর্গন্ধে আমাদের কষ্ট হয়। তবুও মানুষ বুঝতে চায় না।’
সেতুর ওপর কথা হয় পথচারী আলমগীর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শুনেছি সন্ধ্যার পর মানুষ চায়ের আড্ডা দেওয়ার জন্য ব্রিজের ওপরে আসতো। এখন আমরা প্রয়োজন ছাড়া এদিকে আসি না। দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। কোনোমতে মাস্ক লাগিয়ে ব্রীজ পাড় হয়ে বাড়ি যাচ্ছি।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘দেখেন তো কাণ্ড! বাজারের মধ্যে ব্রিজের নিচে নদীটা এখন আস্ত একটা ভাগাড় হয়ে গেছে। দিনের পর দিন এত নোংরা আবর্জনা পড়ছে কিন্তু কারও কোনো হেলদোল নেই। প্রশাসন কি ঘুমিয়ে আছে? নাকি তারা চোখ বুজে সব দেখেও না দেখার ভান করছে?’
বিজ্ঞাপন
ব্যবসায়ী মাহামুদুল হাসান মাহি বিশ্বাস বলেন, ‘এটা তো অন্যায়! শুধু এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে না। আমরা শারীরিক ও মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। মাস্ক ছাড়া ব্রিজ পার হওয়া কঠিন। দূরের নোংরা ময়লা এনে এখানে ফেলা হচ্ছে। এই নদীর ওপর কত মানুষের জীবন নির্ভর করে আছে। সেটা কি ওরা একবারও ভাবে না? যারা অন্য জায়গা থেকে এনে ময়লা ফেলছেন, তাদের তো আরও কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।’
স্বেচ্ছাসেবক রিজভী আহমেদ তুষার ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘ব্যানারগুলোর ছিঁড়ে পড়ে আছে। ময়লা ফেলতে লজ্জা হয় না কিন্তু এগুলো ঠিক করতে লজ্জা লাগে। নাহলে এভাবে ব্যানারগুলো ছিঁড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে; এ পথ দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন, একটু ঠিক করে বেঁধে দিতে পারেন না।’
বিজ্ঞাপন
এসইউ/এমএস
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন