ভিডিও EN
  1. Home/
  2. কৃষি ও প্রকৃতি

মালয়েশিয়া ফেরত সারোয়ার সেলিমের মরিচ চাষে বাজিমাত

জেলা প্রতিনিধি | দিনাজপুর | প্রকাশিত: ১১:৫৬ এএম, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মালচিং ও ফেরোমন হলুদ ফাঁদ পদ্ধতিতে মরিচ চাষ করে সফল হয়েছেন মালয়েশিয়া ফেরত সারোয়ার সেলিম (৩৫)। তিনি ৪৮ শতক জমিতে বিজলি প্লাস-২০২০ চাষ করে সাড়ে ৩ লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন। আরও ২ থেকে আড়াই লাখ টাকার মরিচ বিক্রির আশা করছেন।

সারোয়ার সেলিম দিনাজপুরের বিরল উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের হালজাই শালতলা গ্রামের বাসিন্দা। পাকা রাস্তার ধারে ৪৮ শতক জমিতে তিনি মরিচ চাষ করছেন। এর আগে তিনি করলা চাষেও সফলতা পেয়েছেন।

উপজেলার হালজাই ঝিনাইকুড়ি পাকা রাস্তার ধারে দেখা মিলবে মরিচ ক্ষেত। মরিচের গাছগুলোয় প্রচুর পরিমাণে ফুল ও মরিচ ধরেছে। কাছে গিয়ে দেখা যায়, মরিচ চাষের প্রচলিত পদ্ধতি বাদ দিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে মালচিং ও ফেরোমন হলুদ ফাঁদ। এ পদ্ধতিতে খুব কম সময়ে কম খরচে ফসল উৎপাদন করা যায়। এ ছাড়া রোগবালাইয়ের আক্রমণও কম।

মালয়েশিয়া ফেরত সারোয়ার সেলিমের মরিচ চাষে বাজিমাত

বর্ষা মৌসুমে মালচিং ও ফেরোমন হলুদ ফাঁদ পদ্ধতিতে মরিচ চাষ করে ব্যাপক সফলতার পাশাপাশি বাজিমাত করেছেন সারোয়ার সেলিম। তার দেখাদেখি অনেকেই এ পদ্ধতিতে মরিচ চাষে ঝুঁকছেন।

জানা যায়, সারোয়ার সেলিম শুরুর দিকে ইউটিউব দেখে চাষাবাদ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন। পরে বিরল উপজেলা কৃষি অফিসারের কাছে পরামর্শ নিয়ে প্রথমে করলা ও পরে বর্ষাকালীন মরিচ চাষ শুরু করেন। মরিচ চাষ করে এক মৌসুমে ৬ লাখ টাকা আয় করবেন বলে আশা করছেন।

সারোয়ার সেলিম বলেন, ‘মালয়েশিয়া ৭ বছর থেকে গত বছরের অক্টোবরে দেশে চলে আসি। এসে মালচিং পদ্ধতিতে করলা ও মরিচ চাষ শুরু করি। করলার মাঠ শেষ করে এখন মরিচ নিয়ে ব্যস্ত আছি। মরিচ চাষে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বিক্রি করবো কমপক্ষে ৬ লাখ টাকা। এরই মধ্যে সাড়ে ৩ লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করেছি।’

তিনি বলেন, ‘মরিচের গাছ থাকবে আরও ২ মাস। এই দুই মাসে ৬-৮ বার মরিচ হারভেস্ট করবো। এতে আরও আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করতে পারবো। এবার সর্বোচ্চ ২২০ টাকা ও সর্বনিম্ন ১২০ টাকা কেজি দরে পাইকারের কাছে মরিচ বিক্রি করেছি।’

মালয়েশিয়া ফেরত সারোয়ার সেলিমের মরিচ চাষে বাজিমাত

এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে অনেক সুবিধা। ফসলের ক্ষেতে আর্দ্রতা সংরক্ষণে মালচিং বিশেষভাবে উপকারী। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে ফসল ক্ষেতের জলের সূর্যের তাপ ও বাতাসে দ্রুত উড়ে যায় না। ফলে জমিতে রসের ঘাটতি হয় না। সেচ লাগে অনেক কম। মালচিং ব্যবহার করলে জমিতে প্রায় ১০ থেকে ২৫ ভাগ আর্দ্রতা সংরক্ষণ করা সম্ভব। ফেরোমন হলুদ ফাঁদ মরিচ ক্ষেতের জন্য ক্ষতিকারক পোকামাকড় থেকে রক্ষা করে।

সারোয়ার সেলিম বলেন, ‘বাপ-দাদার আমলের সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে বর্তমানে সফলতা পাওয়া যাবে না। অবশ্যই স্মার্ট পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করতে হবে। কোন সময় কোন ফসলের দাম পাওয়া যাবে। কোন সময় কোন ফসল লাগাতে হবে, তা-ও জানতে হবে। তাহলেই সফলতা সম্ভব।’

মরিচের পাইকার খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মরিচ আনি। বাহাদুর বাজারের আড়তে রেখে বিক্রি করি। চারবার সারোয়ার সেলিমের কাছ থেকে ২০২০ জাতের মরিচ কিনেছি। বর্ষা মৌসুমে সাধারণত মরিচ কম হয়। সে কারণে মরিচের দাম ভালো থাকে। সেলিমও ভালো দাম পেয়েছেন। তার কাছ থেকেই এবার ২৩০ টাকা কেজি পর্যন্ত মরিচ কিনেছি।’

বোটানিস্ট শরিফুল ইসলাম শরিফ বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে মরিচ চাষ সাহসিকতার কাজ। বৃষ্টিতে মরিচের গাছ মরে যায়। সে জায়গায় আধুনিক পদ্ধতিতে মরিচ করে সারোয়ার সেলিম সফলতা পেয়েছেন। সন্দেহ নেই তিনি ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, ‘সারোয়ার সেলিম মালয়েশিয়া প্রবাসী ছিলেন। গত বছর দেশে ফিরে মরিচ, করলাসহ রবিশষ্য চাষের পরামর্শ নিতে আসেন। আমরা তাকে সব ধরনের পরামর্শ দিই। চলতি বছর তিনি ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। তার দেখাদেখি অনেকে এখন মরিচ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’

এমদাদুল হক মিলন/এসইউ/জেআইএম

আরও পড়ুন