ঝিনাইদহে জুম ধান চাষ, কম খরচে বেশি ফলনে খুশি কৃষক
পাহাড়ি জুম ধান চাষ হয়েছে সমতলের জমিতে, ছবি: জাগো নিউজ
পাহাড়ের ঢালে চাষ হয় জুম ধান। ঝিনাইদহে এবার সেই জুম ধান চাষ হয়েছে সমতলের জমিতে। কম সেচ, সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে কৃষক আব্দুর রহিম পেয়েছেন দারুণ ফলন। জেলার সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম ‘সেন্টু পাজাম ২১’ জাতের ধান চাষ করেন। পাহাড়ি জাতের ধান সমতলের জমিতে চাষ করে বেশি ফলন পাওয়ায় নতুন সম্ভাবনা দেখছে জেলার কৃষি বিভাগ।
জানা যায়, দেশের শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা ও পাহাড়ি অঞ্চলে ‘সেন্টু পাজাম ২১’ জাতের ধান চাষ হয়। পাহাড় ও টিলার ঢালে এ ধানের চাষ হয়। এর উদ্ভাবক শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার কৃষক সেন্টু কুমার হাজং। তার নামেই জাতের নামকরণ করা হয়েছে। শেরপুরের পাহাড়ি জুম ধান ‘সেন্টু পাজাম ২১’ মূলত দেশি পাজাম ও ভারতীয় রঞ্জিত (পাজাম) ধানের মিশ্রণে তৈরি উচ্চফলনশীল জাত। জামালপুর, শেরপুরসহ পাহাড়ি অঞ্চলে জুম ধান হিসেবে এ ধান চাষ হয়ে থাকে।

ঝিনাইদহের কৃষক আব্দুর রহিম ইন্টারনেটে এ ধানের ব্যতিক্রমী চাষাবাদ দেখে আগ্রহী হন। অনলাইনে মাত্র ৩ কেজি বীজ অর্ডার করেন। সেই বীজ রোপণ করেন পতিত জমিতে। কৃষক আব্দুর রহিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনলাইনে যোগাযোগ করে ৩ কেজি বীজ কিনি। কুরিয়ার সার্ভিসে বীজ আমার ঠিকানায় চলে আসে। সেই বীজ রোপণ করেছি। আমন ধানে যে পরিমাণ সেচ লাগে, এই ধান চাষে তার ১০ শতাংশ সেচও লাগেনি। সার-কীটনাশকের ব্যবহার একেবারেই সীমিত। উৎপাদন খরচ বিঘাপ্রতি ৭-৮ হাজার টাকা।’
আরও পড়ুন
আমন ধানের ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতিতে আগ্রহ বাড়ছে
ধানে ফুল ফোটার সময় কৃষকদের করণীয়
তিনি বলেন, ‘আমি ১০ কাঠা জমিতে এ ধান লাগিয়েছি। আমার ভাগিনাসহ আরও একজনকে বীজ দিয়েছিলাম। তারাও দারুণ ফলন পেয়েছেন। আমন ধানের অর্ধেক খরচে বেশি ফলন এ ধানে। আমার ১০ কাঠা জমিতে প্রায় ২৫-২৬ মণ ধান পাবো। আগামী মৌসুমে আরও বেশি জমিতে এটি চাষ করার পরিকল্পনা আছে।’

রামনগর গ্রামের কৃষক এলাহি মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, ‘মাঠে যাওয়া-আসার সময় এ ধান প্রতিদিনই দেখি। প্রতিবেশী আব্দুর রহিম এ ধান চাষ করেছেন। ভাবতাম, বাঁশ বাগানের পাশে পতিত জমিতে এ ধান লাগিয়েছে, ধান হবে না। সেচ দেয় না, সার দেয় না, ধান ভালো হবে না। এখন তো ধানের ফলন দেখে অবাক। এত কম খরচে এত বেশি ফলন খুব কমই দেখা যায়। আগামী মৌসুমে আমিও এ ধান চাষ করবো।’
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নূর এ নবী জাগো নিউজকে বলেন, ‘ধানটির আবাদ প্রক্রিয়া দেখে আমরাও বেশ অবাক হয়েছি। যে জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে, সেই জমি উঁচু জায়গা। এ ধান আবাদে কৃষকের আমন ধানের মতো অতিরিক্ত সেচ লাগেনি। সার-কীটনাশকও সীমিত ব্যবহার করেছেন। ধানটি আকারে কিছুটা মোটা। সমতল জমিতে এ ধানের চাষ ও ফলন অনেক ভালো হয়েছে। প্রতিটি ডগা বা বাইলে প্রায় ৩শ’র বেশি ধান পেয়েছি। আশা করছি, এ ধানের আবাদ আরও বাড়বে।’
এম শাহজাহান/এসইউ/এমএস