ভিডিও EN
  1. Home/
  2. কৃষি ও প্রকৃতি

আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করছেন শরিফুল

মোহাম্মদ সোহেল রানা | প্রকাশিত: ০১:৪৪ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

‎বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে যুক্ত। কৃষিখাতকে এগিয়ে নিতে আধুনিক প্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই। তবে এই উন্নয়নের পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মানসম্মত ও টেকসই কৃষি সরঞ্জাম। কৃষিকাজকে সহজ করা এবং উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যেই আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করছেন তরুণ উদ্যোক্তা মো. শরিফুল ইসলাম আকাশ।

‎রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের দেওবাডিয়া গ্রামের মো. মজিবুর মোল্লার ছেলে শরিফুল ইসলাম আকাশ। চাকরি ছেড়ে ২০২০ সাল থেকে তিনি কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। গত দুই বছর ধরে তিনি বিশেষভাবে কৃষি যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করছেন।

‎একসময় কৃষিকাজ মানেই ছিল দীর্ঘসময় ধরে কঠোর পরিশ্রম। তবে সেই ধারণা এখন বদলাতে শুরু করেছে। আধুনিক হ্যান্ড টুলস ও গৃহস্থালি কৃষি উপকরণের ব্যবহারে কম সময়ে বেশি কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। যা কৃষকের দৈনন্দিন জীবনকে করে তুলছে আরও সহজ ও কার্যকর।

যে কাজ একজন কৃষক আগে কয়েক ঘণ্টায় সম্পন্ন করতেন, এখন তা অনেক কম সময়েই শেষ করা যাচ্ছে। মাটি কোপানো, গর্ত তৈরি, আগাছা পরিষ্কার কিংবা ফসল কাটার মতো কাজে আধুনিক কৃষি টুলস ব্যবহারে শ্রম যেমন কমছে; তেমনই বাড়ছে উৎপাদন দক্ষতা।

jagonews

‎উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কৃষকের প্রয়োজন অনুযায়ী বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ধরনের লাঙল, মাটিতে সহজে গর্ত করার বিশেষ হ্যান্ড টুলস, দা, কাঁচি, শাবল, বটি—এমনকি গৃহস্থালি ব্যবহারের উপযোগী সরঞ্জামসহ মোট ৪৫টিরও বেশি আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করছেন।

দেশীয় প্রযুক্তিতে কামার ও লেদ শিল্পের সমন্বয়ে এসব যন্ত্রপাতি তৈরি করা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি ডিজাইনের সমন্বয়ে যত্নসহকারে তৈরি এসব টুলস জমি চাষ থেকে শুরু করে আগাছা পরিষ্কার ও ফসল কাটার কাজে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। এতে একদিকে যেমন কৃষকের সময় বাঁচছে; অন্যদিকে শ্রমের চাপও কমছে।

আরও পড়ুন
আলু চাষে সারের গুরুত্ব এবং সংকটে করণীয় 
আধুনিক কৃষিতে যুগান্তকারী প্রযুক্তি স্প্রে ড্রোন 

‎অফলাইন ও অনলাইন—উভয় মাধ্যমেই এসব যন্ত্রপাতি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ‘এগ্রো মার্ট’ নামের অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেই বিক্রির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি।

jagonews

‎শরিফুল ইসলাম আকাশ বলেন, ‘আমি নিজেও বরই, পেয়ারা ও বিভিন্ন ধরনের ফল ও শাক-সবজি চাষ করি। মাঠে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, জমি প্রস্তুত করা ও হাতের কাজগুলোতে অনেক কষ্ট হয় এবং সময়ও বেশি লাগে। তখনই মনে হয়েছে—কৃষকের কাজ সহজ করার জন্য কিছু করা দরকার। সেখান থেকেই এই উদ্যোগের শুরু।’

‎তিনি আরও জানান, পণ্যের মান অনুযায়ী, ১৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা দামের মধ্যে বিভিন্ন হ্যান্ড টুলস বিক্রি করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২৫-৩০ হাজার পিস বিভিন্ন ধরনের টুলস বিক্রি হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় দেড় থেকে প্রায় ২ কোটি টাকা। শুরুতে পণ্যের প্রচারণা ও বাজারজাতকরণে কিছুটা সময় লাগলেও গত কয়েক মাসে বিক্রির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

‎তবে এ উদ্যোক্তার ভাষায়, ‘লাভই একমাত্র লক্ষ্য নয়। মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের কৃষিখাতকে আরও শক্তিশালী করা এবং কৃষকের কাজকে সহজ করা। সেই লক্ষ্য নিয়েই তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ব্যবসার অগ্রগতির পাশাপাশি কৃষিখাতে অবদান রাখার তৃপ্তিই তাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগাচ্ছে।’

‎তিনি জানান, চীনে উৎপাদিত অনেক কৃষি টুলস আমাদের দেশে ব্যবহৃত হলেও সেগুলোর স্থায়িত্ব কম এবং রক্ষণাবেক্ষণ কঠিন। অনেক সময় অল্পদিন ব্যবহারের পরই সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করা সম্ভব হয় না। সেখানে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি টুলস সহজেই স্থানীয় বাজার থেকে মেরামত করে আবার ব্যবহার করা যায়। ফলে নতুন করে কিনতে না হওয়ায় কৃষকের খরচও কমে।

jagonews

‎শুধু পেশাদার কৃষকই নন, পারিবারিক সবজি চাষে যুক্ত মানুষও এসব পণ্য ব্যবহার করছেন। দেশজুড়ে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান এই উদ্যোক্তা। বর্তমানে তার সঙ্গে আরও কয়েকজন তরুণ খণ্ডকালীনভাবে কাজ করছেন।

‎ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে শরিফুল ইসলাম আকাশ বলেন, ‘দেশের কৃষিখাতকে আরও এগিয়ে নিতে সামনে ভারী ও অধিক কার্যকর কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি করার পরিকল্পনা আছে। লক্ষ্য একটাই—কৃষকের উৎপাদন খরচ কমানো এবং সীমিত জমিতে আরও বেশি ফসল উৎপাদনের সুযোগ তৈরি করা।’

এসইউ

আরও পড়ুন