ভিডিও EN
  1. Home/
  2. কৃষি ও প্রকৃতি

তিস্তার দুর্গম চরসহ নীলফামারীজুড়ে সূর্যমুখীর চাষ

জেলা প্রতিনিধি | নীলফামারী | প্রকাশিত: ০৩:২২ পিএম, ১৯ মার্চ ২০২১

তিস্তার দুর্গমচরসহ নীলফামারী জেলাজুড়ে ১ হাজার ৮০০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে। গাছে গাছে ফুটেছে ফুল। এ যেন এক ফুলের স্বর্গরাজ্য। এখানে এলে যে কারও মন আনন্দে ভরে যাবে। সবুজেঘেরা প্রকৃতির মাঝে হলুদ রঙের সূর্যমুখী দূর থেকে যে কারও মন কেড়ে নেবে। তাই সূর্যমুখী মাঠে দর্শনার্থীদের পদচারণা বেড়েছে।

মাঠে কৃষকের স্বপ্ন সূর্যমুখী ফুলে রঙিন হয়েছে। সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন গ্রামীণ অর্থনীতিতে সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। সূর্যমুখী দেখতে রূপময় নয় গুণেও অনন্য। সূর্যমুখীর বীজের তেল স্বাস্থ্যর জন্য অসাধারণ। অন্যান্য তেলবীজে যেসব ক্ষতিকারক উপাদান (বিশেষ করে কোলেস্টেরল) থাকে সূর্যমুখিতে তা নেই। বরং আরও উপকারী উপাদান ও পুষ্টিগুণ বিদ্যমান।

কৃষিতে একের পর এক বিপ্লব সৃষ্টি করছে বর্তমান সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষিতে সাফল্যে মুজিববর্ষের অঙ্গীকার হিসেবে সূর্যমুখী চাষে নতুন স্বপ্ন দেখছে কৃষক।

jagonews24

আর্থিকভাবে লাভবানের হাতছানি দিয়েছে কৃষকদের কাছে সূর্যমুখী। সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে সহজে উন্নতমানের তেল ও খৈল উৎপাদন হয়। পাশাপাশি পুষ্টিকর সবজি হিসেবেও সূর্যমুখী জনপ্রিয়। তাছাড়া এই ফুলের মাধ্যমে মৌচাক বসিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মধু উৎপাদন করা সম্ভব।

সেই সাথে জ্বালানির চাহিদা পূরণেও ভূমিকা আছে। সূর্যমুখী বীজ রোপণের চার মাসের মধ্যে কৃষকেরা ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারেন। প্রতি বিঘা জমিতে ছয় থেকে সাড়ে ছয় মণ বীজ পাওয়া যায়। বিঘাপ্রতি কৃষক ১২-১৪ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করতে পারেন।

সূর্যমুখীর প্রতি কেজি বীজ আধা লিটার তেল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি শতক জমিতে ৮ কেজি বীজ উৎপাদন হয়। এতে তেল উৎপাদন হবে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ২৫০ টাকা। প্রতি শতক জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা।

jagonews24

স্বাস্থ্য রক্ষা ও রোগ জীবাণু প্রতিরোধে এই ফুলের উৎপাদিত তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
ডিমলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সেকেন্দার আলী জানায়, কৃষি পুনর্বাসন প্রণোদনা কিংবা রাজস্ব খাতের অর্থায়নে উপজেলায় ৩৬৫ বিঘা জমিতে ৩৬৫ জন কৃষককে সরকারিভাবে বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ, সার বিতরণ করা হয়েছে।

কৃষকের সূর্যমুখীর চাষের ওপর দেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ। বাজারে তেলের চাহিদা পূরণ করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে সূর্যমুখীর তেল। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে প্রতি বিঘায় কৃষকের খরচ বাদে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা লাভ করতে পারবেন। তিস্তা নদীর চরাঞ্চলে বেশির ভাগে সূর্যমুখী চাষের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনে সূর্যমুখী চাষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

এ বছর নতুন চমক হিসেবে সরকারিভাবে কৃষি বিভাগের পক্ষে কৃষকদের এই প্রথম বারের মতো যোগ করা হয়েছে সূর্যমুখী চাষ। রাজস্ব ফলোআপ ও প্রণোদনা কর্মসূচি-২০২১ এর আওতায় সূর্যমুখী আবাদ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। তাছাড়া তামাকের চেয়ে সূর্যমুখী চাষের লাভ বেশি। কারণ সূর্যমুখীর ফলও বীজ দুটোই বিক্রিযোগ্য।

jagonews24

সূত্র মতে, কৃষি পুনর্বাসনে ২০২০-২১ অর্থবছরে নীলফামারী জেলায় এক হাজার ৮০০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি পুনর্বাসনে এক হাজার ৩০০ বিঘা ও কৃষি প্রণোদনায় ৫০০ বিঘা। এতে গড় উৎপাদন ধরা হয়েছে বিঘাপ্রতি ২৬৬ কেজি অর্থাৎ ৬ দশমিক ৬৫ মণ।

এছাড়া সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী কৃষকরা সরকারিভাবে পেয়েছেন বীজ, সার ও উৎপাদনের খরচ। এবার যে সব কৃষক সূর্যমুখী চাষ করেছেন সেই সকল কৃষক আগামী আউশ ও আমন মৌসুমেও সরকারের প্রণোদনার সুযোগ পেতে যাচ্ছেন।

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া গ্রামের সূর্যমুখী চাষি রহিদুল ইসলাম জানান, সুর্যমুখী আবাদ এবারই তিনি প্রথম করছেন। এটি নতুন স্বপ্ন তার। সরকারি প্রণোদনায় এই ব্লকে ৫ জন কৃষক ৫ বিঘা জমিতে একটি প্লটে করে এক সঙ্গেই ঢালাওভাবে সুর্যমুখী আবাদ করছেন। সূর্যমুখীর যে ফুল এসেছে তা দেখে ভালো ফলনের আশা করছেন এই উদ্যোক্তা।

jagonews24

তিনি চান সূর্যমুখী তেলের কারখানা গড়ে উঠুক আর সেখানে এ জেলার কৃষকরা বীজ বিক্রি করে লাভবান হোক। কৃষক আবুল কালাম জানান, সূর্যমুখী চাষে বিঘাপ্রতি চার হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলন ভালো হলে এক বিঘা জমিতে কমপক্ষে ৬-৭ মণ বীজ হবে। প্রতি মণ বীজ সাড়ে তিন হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায় বাজারে বিক্রি হবে। অন্য আবাদের চেয়ে সূর্যমুখী অনেক লাভজনক।

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) মোছা. হোমরায়রা মন্ডল বলেন, সরকারি প্রণোদনা ও রাজস্ব খাতে এবার ব্যাপক সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। গত বছর রাজস্ব খাতে অল্প কিছু আবাদ করা হয়েছিল। এতে দেখা যায় এই অঞ্চল সূর্যমুখী চাষের জন্য আবহাওয়া ও মাটি অত্যান্ত উপযোগী। ফলে চলতি বছরেও সরকারি প্রণোদনায় কৃষকদের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সূর্যমুখী চাষ বাড়ানো হয়। এটি একটি ভালো তেল ফসল।

এমএমএফ/এএসএম

আরও পড়ুন