জবির নতুন ভবনের কাজ শেষ হবে কবে?

চতুর্থ মেয়াদেও শেষ হয়নি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নির্মাণাধীন নতুন একাডেমিক ভবনের কাজ। পরপর চারবার মেয়াদ বাড়িয়েও ভবনের কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। ২০১৪ সালে চতুর্থ মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শুরু করে ৩০ শতাংশ কাজ বাকি থাকতেই ২০২০ সালে ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পঞ্চম মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ শুরু হয়। পঞ্চম মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। নির্মিতব্য ১৩ তলা ভবনের ৯ তলা পর্যন্ত কাজ শেষ। বাকি চার তলার কাজ শেষ হবে আগামী মার্চ মাসে বলে জানিয়েছে নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান।
জানা যায়, ২০১৪ সালের শেষের দিকে তৃতীয় মেয়াদে টেন্ডার আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তখন কাজটি পায় দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড দেশ উন্নয়ন লিমিটেড (জেপি) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের ওয়ার্ক পারমিট ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে সময় লেগে যায় ছয় মাসের মতো। প্রতিষ্ঠানটি কাজ করতে গিয়ে ভবনের ভিত্তিতে দুর্বলতার বিষয়টি টের পায়। তাদের কাজ করার সময় নতুন ভবনের বেজমেন্টে একটি পিলারে ফাটল দেখা দেয়। তখন নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান বুয়েটের অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের দ্বারস্থ হলে তারা ভবনের ভিত্তি ও মাটি পরীক্ষা করেন। এতে তারা ভবনের ভিত্তির দুর্বলতা খুঁজে পান। তখন তারা ১৩ তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণের জন্য প্রশাসনের কাছে সিদ্ধান্ত জানান।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২০১১ সালের ১ জুলাই ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে উন্নয়ন প্রকল্প চালু হয়। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এ প্রকল্পের মেয়াদ তিনবার বৃদ্ধি করা হয়। ২০১৪ সালে এসে তৃতীয় মেয়াদে কাজ শুরু করে নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে দেখা যায়, নতুন এই ভবনের ৯ তলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। আর বিভাগগুলোর কার্যক্রম চলছে। বাকি তলাগুলোতে কাজ চলছে ধীরগতিতে। ১০, ১১, ১২, ১৩ তলায় টাইলস লাগানো, রং করা, থাই গ্লাস লাগানোসহ নানাবিধ কাজ বাকি রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড দেশ উন্নয়ন লিমিটেডের (জেপি) চিফ ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রথম দিকে ভবনের কিছু ত্রুটি ও জটিলতা থাকার কারণে কাজ দীর্ঘায়িত হয়েছে। আমরা প্রকল্প পাই ২০১৪ সালে, কিন্তু এর মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০-এর ডিসেম্বরে। আবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে আমি আশা করি চলতি বছরের মার্চ মাসেই একাডেমিক ভবনের কাজ সম্পূর্ণ করতে পারব।’
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি খোঁজ-খবর রাখি না। এটা পরিকল্পনা, উন্নয়ন দফতর জানে।’
নতুন একাডেমিক ভবনের সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কাস দফতরের পরিচালক প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত জানি না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানকে টাকা দিয়েছি, এখন তারা জানে। এ বিষয়ে নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ারদের কল দাও তারা ভালো বলতে পারবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর ২০ তলাবিশিষ্ট নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণে সরকার ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। ওই বছর প্রথম দফায় ভবনটির সাততলা পর্যন্ত নির্মাণকাজের জন্য ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু ভবনটির প্রথম দফার এ নির্মাণকাজ নিয়েও গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ‘দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবনটির নির্মাণ কাজ করে। কিন্তু নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করায় কয়েক বছরের মধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দেয়।
বিজ্ঞাপন
তখন বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়, ১৩ তলা পর্যন্ত এ ভবনের সম্প্রসারণ করা যাবে। সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তখন টেন্ডার আহ্বান করে। ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই নির্মাণকাজের জন্য আট-দফা টেন্ডার আহ্বান করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই অংশ নেয়নি। আবার যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে তারা ১৯-২৯ শতাংশ অধিক মূল্যে দরপত্র দাখিল করায় তা অনুমোদন হয়নি। পরে ২০১৪ সালের শেষের দিকে কাজটি পায় নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড দেশ উন্নয়ন লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠান টানা দুই মেয়াদে ছয় বছর থেকে কাজ করেও এখনো কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেনি।
রায়হান আহমেদ/জেডএইচ/বিএ/এমএস
বিজ্ঞাপন