জবির নতুন ক্যাম্পাস
বালু ভরাট-লেক-পুকুর খননে ৯ বছর পার, অবকাঠামো কবে?

• সীমানা প্রাচীর-লেক-পুকুরে সীমাবদ্ধ নতুন ক্যাম্পাসের কাজ
• শিক্ষার্থীরা হতাশ, চান দুর্বিষহ উচ্চ শিক্ষাজীবনের অবসান
• সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন, ‘যুগান্তকারী’ বলছে জবি কর্তৃপক্ষ
• চলতি বছর দৃশ্যমান হবে অবকাঠামো—দাবি জবি উপাচার্যের
কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ২০ বছর পরও নানামুখী সংকটের বৃত্তে আটকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শ্রেণিকক্ষ সংকট প্রকট, আবাসিক হল নেই। নেই গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগও। খেলাধুলার কোনো মাঠ না থাকায় পড়ালেখার বাইরে আড়মোড়া ছাড়ার উপায়ও নেই শিক্ষার্থীদের।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
অথচ এ দুই দশকের মধ্যে দেশে প্রতিষ্ঠিত অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলামেলা দৃষ্টিনন্দন ও আবাসনসমৃদ্ধ ক্যাম্পাস হয়েছে। এ নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের শেষ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ২০১৬ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের ঘোষণা দেয়। ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও সেখানে দৃশ্যমান কোনো অবকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। ধু-ধু মাঠ আর ঝোপ-জঙ্গলে ভরা পুরোনো রূপেই রয়েছে নতুন ক্যাম্পাসের জন্য নির্ধারিত জায়গাটি।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
- আরও পড়ুন
- পুলিশের ‘লাঠিপেটা’ নিয়ে উপদেষ্টা মাহফুজের দুঃখপ্রকাশ করা উচিত ছিল
- উপদেষ্টা মাহফুজের মাথায় বোতল নিক্ষেপকারী সম্পর্কে যা জানা গেল
- রাস্তায় শুয়ে, স্লোগান দিয়ে চলছে জবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন
- আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা জবি শিক্ষার্থীদের
নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের অগ্রগতি বলতে ভূমি অধিগ্রহণ, লেক নির্মাণ ও সীমানা প্রাচীর করা হয়েছে। বর্তমানে চলছে বালু ভরাটের কাজ। ফলে কবে নাগাদ নতুন ক্যাম্পাসের কাজ শেষ হবে তা নিয়ে সংশয়ে শিক্ষার্থীরা। এজন্য আবাসনবৃত্তিসহ নানান ধরনের অস্থায়ী সমাধানের দাবি তুলে ধরছেন তারা। এ নিয়ে দফা দফায় আন্দোলনে নামছেন শিক্ষার্থীরা।
বিজ্ঞাপন
সীমানা প্রাচীর-লেক-পুকুরে সীমাবদ্ধ নতুন ক্যাম্পাসের কাজ
ঢাকার কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের মুজাহিদনগরে ২০০ একর জমি কিনেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির নতুন ক্যাম্পাস।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরো জমি সীমানা প্রাচীরে ঘেরা হয়েছে। একটি লেক ও দুটি পুকুর খনন শেষ। পুকুরপাড়ে ঘাট নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। তবে লেকপাড় বৃষ্টিতে ভেঙে আবারও ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া ভেতরে উঁচু-নিচু জায়গা সমান করতে বালু দিয়ে ভরাট করছেন শ্রমিকরা। অবকাঠামো বলতে ১০ তলা একটি ভবনের নির্মাণকাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে, যা এখনো দৃশ্যমান নয়। এছাড়া ২০০ একর জমিতে আর কোনো অবকাঠামো দেখা যায়নি।
বিজ্ঞাপন
সেখানে দায়িত্বরত প্রহরীরা জানান, নির্মাণকাজের জন্য তেমন কাউকে আসতে দেখেন না তারা। লেক খননের পর মাটি দিয়ে পাড় বাঁধা হয়েছিল। বৃষ্টিতে সেই পাড় ভেঙে আবারও লেকের ভেতরে পড়ছে। সেগুলোও দেখার কেউ নেই। কবে ভবন নির্মাণে পুরোদমে কাজ শুরু হবে, সে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই।
হতাশ শিক্ষার্থীরা চান দুর্বিষহ শিক্ষাজীবনের অবসান
বছরের পর বছর পার হলেও নতুন ক্যাম্পাসে একটি অবকাঠামো পর্যন্ত গড়ে তুলতে না পারায় হতাশা শিক্ষার্থীরা। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতিবাজরা জবির নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পে লুটপাট করতে চেয়েছিল। ফলে কাজ এগোয়নি। এখন সেনাবাহিনীর অধীনে দুর্নীতিমুক্তভাবে কাজ এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা। দুর্বিষহ উচ্চ শিক্ষাজীবনের অবসান ঘটবে জবি শিক্ষার্থীদের, সেই প্রত্যাশায় তারা।
বিজ্ঞাপন
- আরও পড়ুন
- শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান তথ্য উপদেষ্টার
- ‘চল চল যমুনা যাই’ এই রাজনীতি আর হতে দেবো না: মাহফুজ আলম
- দাবি আদায় না করে জবিয়ানরা ঘরে ফিরবে না: শিবির সভাপতি
- শিক্ষার্থীদের তিন দাবি: যমুনার বার্তার অপেক্ষায় জবি প্রশাসন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি রাকিব হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয়টি পদে পদে বঞ্চিত। ২০১৮ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ শুরু হলে এখনো তা চলছে ঢিমেতালে। ভূমি অধিগ্রহণ করতেই লেগেছে সাত বছর। কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন রাজনৈতিক ব্যক্তি, প্রকল্প পরিচালক ও প্রকৌশলীরা টেন্ডার বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছে। ফলে নতুন ক্যাম্পাসে এখনো চলছে বালু ভরাট। কবে আবাসিক হল নির্মাণের মতো পরিবেশ তৈরি হবে? কবে শিক্ষার্থীরা সেখানে পড়াশোনা শুরু করতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’
বিজ্ঞাপন
জবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৈমুর মোবিন। তিনি বলেন, ‘নতুন ক্যাম্পাসের কাজের যে অগ্রগতি, তাতে আগামী বছরও অবকাঠামো নির্মাণ তেমন দৃশ্যমান হবে বলে মনে হচ্ছে না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমরা জবির প্রকল্পে কয়েকশ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ শুনেছি। আর দুর্নীতি দেখতে চাই না। সবার আগে নতুন ক্যাম্পাসে আবাসিক হল নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি। এতে শিক্ষার্থীরা অন্তত মেসে বসবাসের মতো দুর্বিষহ জীবন থেকে মুক্তি পাবে।’
সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন, ‘যুগান্তকারী’ বলছে কর্তৃপক্ষ
সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের সংশোধিত প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে এ নিয়ে সরকারি আদেশ (জিও) জারি করা হয়েছে। এটিকে ‘ঐতিহাসিক অর্জন’ ও ‘যুগান্তকারী অগ্রগতি’ বলে অভিহিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পে ৩৪৬ কোটি ১২ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন করা হয়েছিল। সংশোধিত প্রকল্পে বাজেট বেড়েছে নাকি কমেছে; তা জানায়নি কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞাপন
তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে জানান, এবার বড় অঙ্কের বাজেট পাচ্ছে জবি। এ বাজেট যদি কার্যকরভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আর কোনো সংকট থাকবে না।
- আরও পড়ুন
- পুলিশের লাঠিচার্জে আহত জবির ৩৭ শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেলে
- চিকিৎসা নিয়ে ফের আন্দোলনে জগন্নাথের আহত শিক্ষার্থীরা
- ৩ দাবিতে সংহতি জানিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে জবি উপাচার্য-কোষাধ্যক্ষ
- সড়ক ছাড়েননি জবি শিক্ষার্থীরা, সতর্ক অবস্থানে পুলিশ
এদিকে, গত ৩০ মে নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ও গুণগত মান নিশ্চিত করতে গঠিত তদারক কমিটি প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে। কমিটির সদস্যরা নির্মাণকাজের বর্তমান অবস্থা, গঠনশৈলী, নিরাপত্তা ও মাননিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিষয়গুলো খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করেন। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনাও করেন তারা।
সেনাবাহিনীর হাতে কাজ, আশা দেখছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
অনিয়ম-দুর্নীতির সীমাহীন অভিযোগে জবির নতুন ক্যাম্পাসের কাজ আরও পিছিয়ে গেছে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সেজন্য তারা এ প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করানোর দাবিতে আন্দোলনে নামেন। তাতে সফলও হয়েছেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে করা সবশেষ আন্দোলনে বাধ্য হয়ে সেনাবাহিনীর হাতে কাজ দেওয়া হয়। গত ১৬ জানুয়ারি ‘জবির নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন: ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের কাজ অর্পিত ক্রয়কাজ হিসেবে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর ও বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে সেনাবাহিনী এখনো কাজ বুঝে নিয়ে তা ভালোভাবে শুরু করতে পারেনি।
চলতি বছরের শেষে কাজ দৃশ্যমান হবে বলে মনে করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা এখন রানিং (চলমান) কাজগুলো এ বছরের মধ্যে শেষ করার প্রত্যাশা করছি। পরিকল্পনা কমিশনে সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। সেনাবাহিনীও দায়িত্ব নিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু করবে। আশা করি, চলতি বছরের শেষদিকে অনেকগুলো কাজ দৃশ্যমান হবে।’
শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আবাসিক হল নির্মাণের দাবি তুলেছেন। এ প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, ‘নতুন ক্যাম্পাসে আমাদের মোট ২০০ একর ভূমি, যার মধ্যে সাত একর আলাদা। সেখানে হল নির্মাণের জন্য প্রকল্প জমা দিয়েছি। এটি অনুমোদন হলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। সবকিছু তো একদিনে করে ফেলা সম্ভব নয়। একসঙ্গে আমাদের অনেকগুলো কাজ করতে হচ্ছে। তারপরও হল সমস্যা সমাধানে আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আমাদের চুক্তি আছে। সেখানে কিছু শিক্ষার্থীর সাময়িকভাবে আবাসন হচ্ছে। দ্রুত তারাও স্থায়ী আবাসন পাবে।’
এএএইচ/আরএএস/এমএমএআর/এমএফএ/এএসএম
বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ - ক্যাম্পাস
- ১ ঢাবির হলে খাওয়ানো হচ্ছে পচা মাছ-মাংস, সত্যতা পেয়েছে সিওয়াইবি
- ২ শাকসু ছাড়া শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নির্বাচন হতে দেবেন না শিক্ষার্থীরা
- ৩ জুলাই অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবেই: জবি উপাচার্য
- ৪ ভোটার তালিকা হালনাগাদে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ভর্তি সম্পন্নের নির্দেশ
- ৫ রাবির ট্যুরিজম বিভাগের নতুন সভাপতি ড. জাহিদ হোসেন