ভাঙা হলো কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য

ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরে এটি ভাঙা হয়। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদ এবং পুরাতন কলা অনুষদ ভবনের মাঝখানে পুকুর পাড়ে ছিল ভাস্কর্যটি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জানুয়ারিতে উদ্বোধন করা হয় ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য। কবির লেখা ‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’ গানের নামানুসারে তৈরি করা হয়েছিল এটি। চার কোটি টাকার সৌন্দর্যবর্ধনের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এটি তৈরি করা হয়। তখন উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম। এরপর নতুন প্রশাসনের নির্দেশেই এটি ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়।
ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান তুষার বলেন, পুকুরের সৌন্দর্য বর্ধনে ‘অঞ্জলি লহ মোর’ নির্মাণ করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশেই তা ভেঙে ফেলা হয়েছে। এটা দুঃখজনক।
বিজ্ঞাপন
ভাস্কর্যটির নির্মাতা হলেন ভাস্কর মনিন্দ্র পাল। তিনি বলেন, ভাস্কর্য নির্মাণে ১৫ লাখ টাকায় চুক্তি হলেও ৮ লাখ টাকা পেয়েছি। কবি নজরুলের ‘অঞ্জলি লহ মোর সংগীতে’ গানকে ভিত্তি করে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি ভাঙা হবে ভাবতে পারিনি।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সৌখিন আহমেদ বলেন, পুরাতন কলা ও বিজ্ঞান ভবনের মিলিত স্থানে আগে একটি পুকুরঘাট ছিল, যেখানে বসার ব্যবস্থা ছিল। তা ভেঙে সৌমিত্র শেখর তার সময়কালে তৈরি করেছিলেন ‘অঞ্জলি লহ মোর’। এখন সেটা আবার ভেঙে ফেলা হয়েছে। আমি মনে করি, এটা ভেঙে নজরুলের কর্ম প্রচার প্রয়াসকে ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বক্তব্য জানতে চাইলে ময়মনসিংহ বিভাগীয় চারুশিল্প পর্ষদের সভাপতি মো. রাজন বলেন, ভাস্কর্যটি ভেঙে না ফেলে এটাকে আরও কীভাবে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা যায় তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভাবা উচিত ছিল।
পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ভাস্কর্যটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন গ্রহণ করছে না। প্রশাসনের সিদ্ধান্তে এটি ভাঙা হয়েছে। উপাচার্যে পক্ষ থেকে ভাঙার সিদ্ধান্ত এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বিজ্ঞাপন
তবে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করা ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী বলেন, অনেক আগেই বিভিন্ন বিভাগের ডিনসহ সবাইকে নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্যটি সম্ভবত সেই সিদ্ধান্তের কারণেই ভাঙা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের পরিচালক প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ভাস্কর্যটি আমাদের মূল নকশায় ছিল না। সাবেক উপাচার্যের একক সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিয়েই এটি করা হয়েছিল। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এটি ভাঙার জন্য অনেক ছাত্রদের পক্ষ থেকে চাপ ছিল।
কামরুজ্জামান মিন্টু/জেডএইচ/এএসএম
বিজ্ঞাপন