ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

চবি ছাত্রলীগকর্মী ফারাবী

শিবিরে যুক্ত হই ২০২৩ সালে, ৫ আগস্টের পর বলে হাইফ তোলা হচ্ছে

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক | চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় | প্রকাশিত: ০৪:৪৬ পিএম, ২১ জুলাই ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাখা ছাত্রশিবিরের সোহরাওয়ার্দী হল সভাপতি আবরার ফারাবীর তিন বছর আগের ছাত্রলীগ সম্পৃক্ততার কিছু ছবি ও জামায়াত-শিবির নিয়ে বিতর্কিত কিছু মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

তবে ফারাবীর ভাষ্যমতে, ২০২৩ সালে শিবিরের রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি। ২০২১-২২ সালের কিছু ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে। তিনি ৫ আগস্টের পর শিবিরে যোগ দিয়েছিন বলে হাইফ তোলা হচ্ছে।

সোমবার (২০ জুলাই) এক ফেসবুক পোস্টে নিজের ছাত্রলীগ সম্পৃক্ততার বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন আবরার ফারাবী।

ফেসবুক পোস্টে আবরার ফারাবী বলেন, ‘২০২০ সালের জানুয়ারিতে আমি আরবি বিভাগে ভর্তি হয়ে আমার এলাকার এক ভাইয়ের মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী হলে উঠি। কিন্তু মাত্র ২৪ দিনের মধ্যে আমার রুম চারবার পরিবর্তন করা হয়। কোভিডের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে সবার মতো আমিও বাড়ি চলে যাই। ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর কিছুদিন সোহরাওয়ার্দী হলে এবং ২০২২ সালের ১৭ জুন পর্যন্ত আব্দুর রব হলে অবস্থান করি। সবার মতো ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গেই হলে থাকি।’

‘তবে তখন আমার ছাত্রশিবিরের কোনো দায়িত্বশীলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না এবং ইচ্ছাকৃতভাবেও করিনি। সেসময় আমার জীবনে কিছু পরিবর্তন আসে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল নামাজে অবহেলা ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। পরে তাবলিগের ভাইদের সঙ্গে ওঠাবসা এবং তালিম-মাশোয়ারায় অংশ নেওয়া শুরু করি এবং ছাত্রশিবিরের বর্তমান বায়তুল মাল সম্পাদক মুজাহিদ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তার মাধ্যমেই আমি সংগঠনে আসি। একপর্যায়ে হল ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’

২০২২ সালের ২২ জুনের ঘটনা উল্লেখ করে ফারাবী ফেসবুকে লিখেছেন, “ভারতের নবীন জিন্দাল ও নুপুর শর্মা মহানবী (সা.)-কে অবমাননা করলে চবিয়ান দ্বীনি পরিবার শহীদ মিনারে মানববন্ধনের আয়োজন করে। তৎকালীন প্রশাসন মানববন্ধনের অনুমতি না দেওয়ায় আমি তাদের সঙ্গে তর্কে জড়াই। এর ফলে আমাদের তিনজনের স্টুডেন্ট আইডি কার্ড নিয়ে নেওয়া হয়। অবশেষে আমরা মানববন্ধন সফলভাবে সম্পন্ন করি। এই ঘটনার জেরে এবং হলে না থাকার কারণে তখন আমাকে ‘শিবিরকর্মী’ বলে সন্দেহ করা হয়। অথচ তখনো আমি ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত হইনি।”

“চবিয়ান দ্বীনি পরিবারের সঙ্গে একে একে দাওয়াতি কার্যক্রম এবং ক্যাম্পাসে ইসলামি পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করে যাই। ২০২৩ সালে আমি ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত হই এবং সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করি। পাশাপাশি একটি মানবাধিকার সংগঠনে কাজ করি। ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে দুটি বড় সংহতি সমাবেশ করি। যার একটিতে আমি সঞ্চালক এবং আরেকটিতে আহ্বায়ক ছিলাম। ফিলোসফি বিভাগের প্রফেসর মোজাম্মেল স্যার আমাদের মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করায় আমাকে ‘শিবিরকর্মী’ বলে আখ্যায়িত করেন (সেসময় আমি সত্যিই ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম)।”

শিবিরবিরোধী কিছু পোস্ট প্রসঙ্গে ফারাবী লিখেছেন, ‘আমার ক্লাস বন্ধ হয়ে গেলেও আমি আমার দাওয়াতি ও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাই। তবে মাঝে মাঝে পিঠ বাঁচাতে কিছু পোস্ট করেছিলাম। ২০২৪ সালে যখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার কর্মসূচি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়, তখন আমি মোহাম্মদ আলী ভাইয়ের পরামর্শে চবিতে গণইফতারের ডাক দেই। এতে আমার ছাত্রশিবির পরিচয় প্রকাশিত হয় এবং আমি পুরোপুরি ক্যাম্পাস থেকে আউট হয়ে যাই। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আমি সোহরাওয়ার্দী হলের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি।’

“২০২৪ সালের ৫ জুন, সরকার যখন আবারও কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের চেষ্টা করে, তখন চবিয়ান দ্বীনি পরিবারের সঙ্গে মিটিং করে আমরা আন্দোলন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিই। ‘কোটা পুনর্বহাল চাই না’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করি। প্রথম দিকে লোকবল একেবারেই কম থাকায় আমাদের জনশক্তিকেই মিছিলে পাঠাই। এরপরের ইতিহাস আপনারা সবাই জানেন।”

ফারাবী আরও লিখেছেন, ‘এখন বিতর্কিত কিছু বিষয় নিয়ে আমার বক্তব্য হলো– প্রথমত, আমরা কী পোস্ট করবো তা আমাদের সিদ্ধান্তে নির্ধারিত হতো না। ছাত্রলীগের বড় ভাইয়েরা গ্রুপে পোস্ট দিতেন এবং সবাইকে সেটি শেয়ার ও ট্যাগ করতে বলতেন। আমার সে সুযোগ ছিল না যে পোস্টগুলো কাটছাঁট করবো। যেভাবে ওরা লিখতো সেভাবেই পোস্ট করতে হতো। আর তখনো আমি ছাত্রশিবিরের কোনো ভাইয়ের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম না। তবুও স্বীকার করছি, সেই পোস্টগুলো এবং নিকৃষ্ট শব্দচয়ন করা আমার ভুল ছিল। এজন্য আমি চবি শিবিরের বর্তমান ও তৎকালীন দায়িত্বশীলদের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’

‘অনেকে প্রশ্ন করেছেন, সেই পোস্ট ডিলিট করিনি কেন? উত্তর হচ্ছে, আমি জানতামই না এমন একটি পোস্ট আমি করেছিলাম। গতকাল বিষয়টি সামনে আসায় দেখতে পেলাম। আর আমার আগের আইডিটা অনেক দিন ধরে আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। একবার হ্যাক হওয়ার পর জিডি করে এপিবিএন পুলিশের মাধ্যমে আইডি উদ্ধার করি। এর কিছুদিন পর কোনো এক অজানা কারণে আইডিতে আর লগইন করতে পারিনি।’

আ জ ম নাছিরের (সাবেক মেয়র ও চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা) সঙ্গে ছবি প্রসঙ্গে ফারাবী লিখেছেন, ‘সেটি অ্যাসোসিয়েশনের কাজে আমাদের একজন উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তোলা হয়েছিল। তিনি আ জ ম নাছিরের বন্ধু ছিলেন। ওই ছবিতে রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক অনেক ভাই-ই উপস্থিত ছিলেন।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি মোহাম্মদ আলী জাগো নিউজকে বলেন,‌ ‌‘আবরার ফারাবীর যে বিষয়গুলো সামনে এসেছে, এগুলো তিন বছর আগের পোস্ট। ২০২২ সালের দিকে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি করলেও ২০২৩ সালের দিকে শিবিরে যুক্ত হন। এরপর থেকে ছাত্রশিবিরেরে সংবিধানের নিয়মনীতি অনুসরণ করে তিনি মানোন্নয়নের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।’

সোহেল রানা/এসআর/জিকেএস