ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ভিসেরা রিপোর্টে সাজিদ হত্যার ইঙ্গিত, বিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস
সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর ভিসেরা রিপোর্টে হত্যার ইঙ্গিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা।
রোববার (৩ জুলাই) সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর ভিসেরা রিপোর্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ পুলিশ সি আই ডি মহাখালীর রাসায়নিক পরীক্ষাগারের প্রধান নজরুল ইসলাম ও খুলনা বিভাগীয় পরীক্ষক জনি কুমার ঘোষ।
বিষয়টি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে না পারলে ক্যাম্পাস শাটডাউনের হুঁশিয়ারি দেয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে শাখা ছাত্রদলের সদস্য নূর উদ্দিন, ছাত্রশিবিরের আন্তর্জাতিক ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক হাসানুল বান্না আলী, মোহাম্মদ জাকারিয়া, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইসমাইল রাহাত ও আল কুরআন বিভাগের শিক্ষার্থীসহ অন্যরা বক্তব্য দেন।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমার ভাই সাজিদ আব্দুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে। এটা একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এ প্রশাসন যদি সুষ্ঠু তদন্তে ব্যর্থ হয়, তাহলে তারা নিজেদের পঙ্গু প্রশাসন হিসেবে প্রমাণ করবে। এ ঘটনার অনেকদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো মামলা হয়নি। প্রশাসন তালবাহানা করছে। আমরা চাই অবিলম্বে পিবিআইয়ের মাধ্যমে তদন্ত হোক এবং প্রশাসন স্ব উদ্যোগে হত্যা মামলা দায়ের করুক। আমরা খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। আর যেন কোনো সাজিদ প্রাণ না হারায় তা প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষার্থী জাকারিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরে আমাদের ভাইয়ের মরদেহ ভেসে উঠেছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই সাজিদকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। সাজিদের মায়ের চোখের কান্না ঝরিয়েছে অতি দ্রুত তাদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা সাজিদ হত্যার বিচার এবং সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করা পর্যন্ত আমরা মাঠ থেকে উঠবো না।
শিক্ষার্থী নূর উদ্দিন বলেন, সাজিদের হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১৭ তারিখ থেকে আমরা রাজপথে ছিলাম। যদি পিবিআই কিংবা বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে এ হত্যাকারীদের ধরা না হয়, তাহলে ক্যাম্পাসকে শাটডাউন করে দেওয়া হবে। আমাদের প্রশাসন বারবার আশ্বস্ত করেছে যে তারা কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা এখনো তদন্তের রিপোর্ট পাইনি। এখনো সাজিদের হত্যাকারী কাউকে এখনো গ্রেফতার করা হয় নাই। প্রশাসনকে বলছি আপনারা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাজিদ হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে না পারলে বিশ্ববিদ্যালয়কে শাটডাউন করে দেওয়া হবে।
ভিসেরা রিপোর্ট মতে, সাজিদের শরীরে কোনো বিষাক্ত পদার্থেও উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। রিপোর্টে শ্বাসরোধের ফলে সাজিদের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। পোস্টমর্টেমের সময় থেকে আনুমানিক ৩০ ঘণ্টা আগে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। শ্বাসনালীর বাধা বা বাতাস চলাচলে প্রতিবন্ধকতার ফলে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু ঘটে। এটি দুর্ঘটনাবশত বা আত্মহত্যা নয়।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ভিসেরা রিপোর্টে যেটা এসেছে সেটা থেকে বোঝা যাচ্ছে এটা হত্যাকাণ্ড।
এদিকে রাত পৌনে ৮টার দিকে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, মৃত্যুর কারণ উদঘাটনের জন্য আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমাদের সদস্যরা দিনরাত নিরলসভাবে পরিশ্রম করেছেন। সংশ্লিষ্টসহ শতাধিক মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তাছাড়া ময়নাতদন্ত, সুরতহাল ও ভিসেরা রিপোর্টের পাশাপাশি তার ফোন কল লিস্ট, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সব তথ্য ক্রস চেক করে ফাইনাল রিপোর্ট প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের উচ্চপদস্থ তদন্ত সংস্থাগুলো দিয়ে এ ঘটনার তদন্তের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
গত ১৭ জুলাই বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুর থেকে সাজিদের ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পৃথক দুই কমিটি করা হয়। এরপর কয়েক দফায় মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন।
এর আগে ২১ জুলাই প্রকাশিত ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে মৃত্যুর আনুমানিক সময় উল্লেখ থাকলেও মৃত্যুর ধরন ও কারণ নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলা হয়নি। ফলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ণয়ে ভিসেরা নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় রাসায়নিক বিশ্লেষণের জন্য। রোববার (৩ আগস্ট) ভিসেরা রিপোর্টে সাজিদকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। রিপোর্টে স্বাক্ষরকারী মেডিকেল অফিসারও এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
ইরফান উল্লাহ/আরএইচ/জিকেএস