গাছেই পুরো জীবনচক্র সম্পন্ন করে গেছো শামুক: রাবিতে গবেষণা
গেছো শামুক
‘প্রকৃতির মুক্তা’ খ্যাত বিলুপ্তপ্রায় গেছো শামুকের (অ্যামফিড্রোমাস গ্লোবোনেভিল্লি) প্রজনন বিষয়ে বিশ্বে প্রথমবারের মতো এক অভিনব আচরণ শনাক্ত করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গবেষকেরা। গবেষণা বলছে, প্রজাতিটি সম্পূর্ণরূপে গাছে বসবাস ও প্রজনন করে থাকে। বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে বিস্তৃত অ্যামফিড্রোমাস প্রজাতির শামুকের ক্ষেত্রে এটাই প্রথমবারের মতো ডিম পাড়ার প্রামাণ্য তথ্য হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে।
গবেষণাটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নাল ফোলিয়া মালাকোলজিকায় প্রকাশ পেয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের বিভিন্ন জায়গায় পাঁচ দিনব্যাপী পরিচালিত মাঠ পর্যায়ের জরিপে এটি দেখা গেছে বলে জানানো হয়েছে।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেন রাবির মলাস্কান রিসার্চ ল্যাবরেটরির প্রধান প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহরিয়ার শোভন এবং নেদারল্যান্ডসের ভ্রিজে ইউনিভার্সিটি ড. তাকুমি সাইতো। দলের অন্য সদস্যরা হলেন মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা টি এস রূপময় তঞ্চঙ্গ্যা এবং প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের দুজন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী রহিম বাদশা ও জায়িদ হাসান।
গবেষণায় উঠে এসেছে, অ্যামফিড্রোমাস গ্লোবোনেভিল্লি প্রজাতির গেছো শামুক গাছের ছোট ছোট গহ্বরে ১০-৫০টি করে গোলাপি-সাদা ডিম পাড়ে। কিছু ডিম শামুকের খোলসে লেগে থাকতে দেখা গেছে। কিছু ডিম গহ্বরের বাইরেও দৃশ্যমান ছিল। এই অভিনব আচরণ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, শামুকটির পুরো জীবনচক্রই গাছেই সম্পন্ন হয়, যা আগে কোথাও নথিভুক্ত হয়নি।

শুধু আমগাছ নয়, কাঁঠালসহ অন্যান্য বৃক্ষেও এরা ডিম পাড়ে বলে গবেষকরা ধারণা করছেন। পূর্ববর্তী গবেষণায় যেখানে পাতার নিচে বাসা তৈরি করে ডিম পাড়ার তথ্য ছিল, এবার তা পরিবর্তন করে গাছের গহ্বরে ডিম পাড়ার আচরণ ধরা পড়েছে।
গবেষণায় সহযোগী প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী রহিম বাদশা (সোহান) বলেন, বিরল প্রজাতির শামুক নিয়ে গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে। এরইমধ্যে পাঁচটি নতুন প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়েছে এবং একটি অনন্য আচরণগত পর্যবেক্ষণ প্রকাশিত হয়েছে। আরও গবেষণা ও প্রকাশনা প্রক্রিয়াধীন।

এ বিষয়ে প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহরিয়ার শোভন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিশ্বে এ ধরনের শামুকের প্রজাতি অত্যন্ত বিরল। এটি খুবই চ্যালেঞ্জিং অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকৃতির গহ্বরে বিপুলসংখ্যক ডিম একসঙ্গে রাখা। আমরা পাঁচজন গবেষক মিলে এই গবেষণাটি সম্পন্ন করেছি। গেছো শামুকের প্রজনন আচরণ সংক্রান্ত এই প্রামাণ্য তথ্য সংরক্ষণনীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
প্রসঙ্গত, অধ্যাপক শোভনের নেতৃত্বাধীন মলাস্কান রিসার্চ ল্যাবরেটরি এরইমধ্যে বাংলাদেশে গেছো শামুকের পাঁচটি নতুন প্রজাতি শনাক্ত করেছে। তারা বিশ্বের প্রথম সফল কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাও সম্পন্ন করেছেন, যা বিলুপ্তপ্রায় এই প্রাণীর সংরক্ষণে যুগান্তকারী অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মনির হোসেন মাহিন/এসআর/এমএস
সর্বশেষ - ক্যাম্পাস
- ১ জাবির ‘বি, সি ও ই’ ইউনিটের ফল প্রকাশ আজ রাতেই
- ২ আওয়ামী শিক্ষকদের বেঁধে রাখার কথা বলায় রেগে গেছে ছাত্রদল: আম্মার
- ৩ আবরার ফাহাদ-ওসমান হাদির নামে দুই ভবনের নাম রাখলেন শিক্ষার্থীরা
- ৪ জাবিতে প্রক্সি দিতে এসে ঢাবি শিক্ষার্থী আটক, ১৫ দিনের কারাদণ্ড
- ৫ ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে লাখো হাদি তৈরি হবো