জবিতে উদীচীর কক্ষে গাঁজার গন্ধ, প্রতিবাদ করায় সাংবাদিককে হুমকি
মাদক সেবনের অভিযোগ জানানোর পর এক শিক্ষার্থী তেড়ে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসে উদীচী জবি শাখার কক্ষে নিয়মিত গাঁজা সেবনের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার রাতে গাজা সেবনের সময় সে বিষয়ে প্রতিবাদ করে গাজা সেবন করতে নিষেধ করায় সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নেতৃত্ব দেন নাট্যকলা বিভাগের ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাকিনসহ সৌমিক বোস, রুদ্র ও তার সহযোগীরা।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাশ ভবনের চতুর্থ তলায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অবকাশ ভবনের চতুর্থ তলায় প্রেস ক্লাবের সদস্যদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চলছিল। এ সময় উদীচীর কক্ষ থেকে তীব্র গাঁজার গন্ধ পাওয়া গেলে কয়েকজন সাংবাদিক গন্ধের উৎস জানতে নম্রভাবে সেখানে যান। তারা জানতে চান, উদীচীর কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি উপস্থিত আছেন কি না, তার সঙ্গে কথা বলতে চান। তখন নাট্যকলা বিভাগের ১৬ ব্যাচের শোভন নামের এক শিক্ষার্থী নিজে দায়িত্বে আছেন বলে জানালে সাংবাদিকরা তাকে জানান এখান থেকে তীব্র গাঁজার গন্ধ আসছে। কাউকে আপনারা গাঁজা সেবন করতে দেখেছেন কি না।
তখন নাট্যকলা বিভাগের শোভন নামের ওই শিক্ষার্থী বলেন অনেকেই সেখানে যাওয়া-আসা করছে। কে গাঁজা সেবন করেছে তাকে তারা দেখেননি। পরে সাংবাদিকরা উদীচীর জানালার পাশে সেবন করা গাঁজার ছাই দেখতে পান। সেখান থেকে তীব্র গাঁজার গন্ধও ভেসে আসছিল। পরে সাংবাদিকরা বলেন, এখান থেকেই গাঁজার গন্ধ আসছিল। এখনও আছে। আপনাদের মধ্যে হয়তো কেউ হতে পারে। এগুলো এখানে করা ঠিক না। গাঁজার গন্ধে পাশের রুমগুলোতেও থাকা যায় না। এই কথা বলে সাংবাদিকরা সেখান থেকে চলে আসতে চাইলে গাঁজা সেবনের অভিযোগ অস্বীকার করে শোভন জানান, এখানে অনেকেই আসে, তাদের মধ্যে কেউ হতে পারে; আমরা কিছু জানি না।
তবে সাংবাদিকরা জানান, ঘটনার সময় বাইরে থেকে কেউ ভেতরে প্রবেশ করেনি বা বের হননি। গন্ধের কারণে পাশের কক্ষে থাকতে অসুবিধা হচ্ছে, এ কথা জানিয়ে তারা বের হয়ে আসার চেষ্টা করলে উদীচীর কক্ষের ভেতর থেকে নাট্যকলা বিভাগের ১৬ ব্যাচের মনন মোস্তাকিন নামের এক শিক্ষার্থী তেড়ে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন। তখন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, এ সময় উদীচীর কক্ষ থেকে নাট্যকলা বিভাগের ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাকিন এসে সাংবাদিকদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সাংবাদিকরা তাকে উদীচীর দায়িত্বশীল কি না জানতে চাইলে তিনি উল্টো চিৎকার করে বলেন, আমিই উদীচীর দায়িত্বশীল। কী করার আছে কর। তখন সাংবাদিকরা তাকে বলেন, এখান থেকে গাঁজার গন্ধ আসছিল, আশপাশে থাকা যাচ্ছে না গন্ধে। আপনাদের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবো। তখন মোস্তাকিন সবার উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে এসে চিৎকার করে বলেন, আমি গাঁজা খাই। ভিসি ভবনের সামনে চল, মাইকিং করে সবাইকে বলবো আমি গাঁজা খাই।
এরপর তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক এগিয়ে এসে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলে তাদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করা হয়। এ সময় কক্ষে উপস্থিত দুই নারী শিক্ষার্থীও সাংবাদিকদের উদ্দেশে অশোভন অঙ্গভঙ্গি করেন। এ সময় নিজেদের উদীচীর সদস্য পরিচয় দিয়ে নাট্যকলা ১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী সৌমিক বোসসহ উপস্থিত রুদ্র, মোস্তাকিনসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত সাংবাদিকদের হুমকি দেন।
এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে অভিযুক্ত ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাকিন বলেন, ওরা মব সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে। আমরা ভেতরে কোনো গাঁজা সেবন করছিলাম না। ওরা হুট করে এসে আমাদের সঙ্গে ঝামেলা শুরু করে দেয়। যদি কিছু হয়েও থাকে তা রুমের বাইরে, তার দায়ভার আমাদের ওপর বর্তায় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। একজন সহকারী প্রক্টরকে সেখানে পাঠিয়েছিলাম। ঘটনাটি তদন্ত করে দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টিএইচকিউ/এএমএ/এএসএম