ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

জবি শিক্ষক সমিতি: আশ্বাস আর বাস্তবায়নে বিশাল ফারাক

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক | জবি | প্রকাশিত: ১০:২৭ এএম, ২১ জুলাই ২০২২

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জবিশিস) কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন-২০২২ অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ১০ নভেম্বর। এ নির্বাচনে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে তিনটি বাদে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ১২ পদে সংখ্যাগরিষ্ঠভাবে জয়ী হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের (একাংশ) প্যানেল।

ওই নির্বাচনের আগে নানা নির্বাচনী অঙ্গীকার করেছিলেন শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি ড. আবুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ড. লুৎফর রহমানের প্যানেল। তবে নির্বাচনের পর ৮ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও মাত্র ১৬ শতাংশ অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে পেরেছে শিক্ষক সমিতি।

যেসব ইশতেহার এখনো বাস্তবায়ন হয়নি
বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ চালু, উচ্চপদে নিয়োগের ক্ষেত্রে শর্ত পূরণ হওয়ার তারিখ থেকেই কার্যকরণ, অধ্যাপক হওয়ার ক্ষেত্রে পিএইচডি এবং সহযোগী অধ্যাপক হওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীকে কমপক্ষে ২য় মাস্টার্স ডিগ্রি (বিদেশি)/এমফিল/পিএইচডি ডিগ্রি) বাতিলকরণ (বাতিলের পরিবর্তে আরও যুক্ত হয়েছে এবং শিক্ষক সমিতিও এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে)। এছাড়াও অস্থায়ী ও শিক্ষাছুটির বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জন্য ইউজিসির মাধ্যমে নতুন পদ সৃষ্টি, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য সুদবিহীন ঋণ প্রদান এবং তহবিল গঠনসহ বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা, শিক্ষকদের গবেষণায় উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে মাসিক গবেষণা ভাতা প্রদান, গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার ও পদক প্রবর্তন, গবেষণা সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জার্নালে (ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর জার্নাল) প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা, চৌর্যবৃত্তি চেক করার জন্য এ সংক্রান্ত সফটওয়্যারে (Turnitin Software) সব শিক্ষকের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে শিক্ষকদের গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত করা, শিক্ষা কার্যক্রমের গতিশীলতার লক্ষ্যে সব শিক্ষকে কম্পিউটার/ল্যাপটপ দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ব্যবস্থা যুগোপযোগী করাসহ সক্ষমতা ও গতি বৃদ্ধি করা, সরকারি বিধি অনুযায়ী সাধারণ ভবিষ্যতের (জিপিএফ) লভ্যাংশ নির্ধারণ ও প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা প্রাপ্যতার তারিখ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর করার ব্যবস্থা। একই সঙ্গে শিক্ষকদের স্বাস্থ্যবীমা পুনরায় চালু, সান্ধ্যকালীন কোর্সসমূহ পুনরায় চালু, শিক্ষকদের জন্য আধুনিক মানসম্মত ক্লাব প্রতিষ্ঠা, চাকরি স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল করা (প্রভাষক পদে নিয়োগে পুলিশ ভেরিফিকেশন চালু রয়েছে), সব রুটে পূর্ণাঙ্গ দ্বিতীয় শিফট এবং সান্ধ্যকালীন পরিবহন সুবিধা পুনরায় চালু করা এবং শিক্ষার্থীদের পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান ক্যাম্পাসের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ নতুন ও দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের উন্নয়ন কাজ ত্বরান্বিত করা ও আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন।

যেসব ইশতেহার বাস্তবায়ন হয়েছে
শিক্ষকদের সবেতনে পিএইচডি শিক্ষাছুটির মেয়াদ পাঁচ বছরে উত্তীর্ণ করা, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক স্তরে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, সব পদে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য অতিরিক্ত তিনটি স্থায়ী ইনক্রিমেন্ট সুবিধা নিশ্চিত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণা প্রকল্পসমূহে সর্বাধিক সংখ্যক গবেষককে প্রাধান্য দেওয়া এবং স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করা। এছাড়াও প্রতি দুই মাস অন্তর সিন্ডিকেট সভা আয়োজন করা।

যেসব ইশতেহার বাস্তবায়ন এখনো প্রক্রিয়াধীন
শিক্ষকদের ক্যান্টিন পুনরায় চালু করা ও লাউঞ্জ আধুনিকায়নে ৫০ লাখ টাকা অনুদান, প্রতি বিভাগে দুজন শিক্ষককে সম্মানীসহ ছাত্র উপদেষ্টা নিয়োগ, শিক্ষক ডরমিটরি আধুনিকায়ন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যোগদানের প্রথমদিনেই ছাত্র উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়ে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি ডরমিটরি ভবন আধুনিকায়নের কাজ অনেক আগে থেকেই চলমান।

এদিকে, ইশতেহার ঘোষণার সময় (বিজয়ী হলে) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদ এমনকি ডিন ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান পদ না নেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়। তবে এটির ব্যত্যয় ঘটিয়ে খোদ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবুল হোসেন গত ১৭ জুলাই সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে যোগদান করেন। এতে অনেক শিক্ষকের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান বলেন, আমরা যেসব ইশতেহার দিয়েছিলাম সেগুলোর মধ্যে বেশকিছু বাস্তবায়ন হয়েছে, কিছু হয়নি আবার কিছু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শিক্ষকদের জন্য শিক্ষা ছুটির মেয়াদ পাঁচ বছর করেছি। শিক্ষক ক্যান্টিন চালু ও শিক্ষক লাউঞ্জ আধুনিকায়নে ৫০ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে অনুদান পেয়েছি। সামনেই কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি ছাত্র উপদেষ্টা নিয়োগের কাজ চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, আগে ধাপে ধাপে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগতো, তবে এখন শুধু প্রভাষক পদে চালু রয়েছে৷ সান্ধ্যকালীন কোর্সের বিকল্প হিসেবে প্রফেশনাল কোর্স চালু করা হয়েছে। টেলিফোন ভাতা ও শিক্ষকদের জন্য গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি করার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এছাড়াও শিক্ষকদের জন্য সুদমুক্ত ঋণ, বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ চালু, পদ প্রবর্তন, আইসিটির সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যবিমা চালু ও পরিবহন সেবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আমরা বারবার তাগিদ দিচ্ছি।

শান্ত রায়হান/কেএসআর/এএসএম