চবি ভর্তিপরীক্ষা
প্রধান সমন্বয়কের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ
চবির ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. হেলাল নিজামী
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) চলছে স্নাতক সম্মান ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। পরীক্ষার হলে ডিউটি দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এসেছে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ‘সি’ ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ও ডিন প্রফেসর ড. হেলাল নিজামীর বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়মের তোয়াক্কা না করে বয়োজ্যেষ্ঠতা ডিঙিয়ে নিজের পছন্দের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের পরীক্ষাকেন্দ্রের পরিদর্শক হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ও সহকারী সমন্বয়করা পরীক্ষার হল পরিদর্শকের দায়িত্ব বণ্টন করেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের শিক্ষকরা প্রথমে দায়িত্ব পেয়ে থাকেন। এরপর অন্য বিভাগের শিক্ষকরা বয়োজ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে দায়িত্ব পেয়ে থাকেন।তবে চলতি বছর সি-১ ও সি-২ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বয়োজ্যেষ্ঠতার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের পছন্দের শিক্ষকদের হল পরিদর্শকের দায়িত্ব দিয়েছেন হেলাল নিজামী।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, আইন অনুষদের সিনিয়র অধ্যাপকদের বাদ দিয়ে অধ্যাপক সিফাত শারমিন এবং অধ্যাপক ড. সাজেদা আক্তার, অধ্যাপক এ বি এম আবু নোমান ও সহকারী অধ্যাপক হোসাইন মোহাম্মদ ইউনুস সিরাজী, ফয়সাল বিন মনির জনিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। অন্যদিকে, সমাজতত্ত্ব বিভাগের ১৪ শিক্ষককে হল পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়া হলেও বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নাজমুল ইসলাম খান এবং সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও সিনিয়র প্রফেসর মনিরুল হাসানকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া কয়েকটি বিভাগে চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব না দিয়ে সহকারী অধ্যাপককে দায়িত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সমাজতত্ত্ব বিভাগে ১৪ শিক্ষককে দায়িত্ব দিলেও ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের কোন শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এদিকে, প্রধান সমন্বয়কের এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে শনিবার এবং রোববারের হল পরিদর্শকের সম্মানি গ্রহণ করবেন না কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক।

এ বিষয়ে জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. নাজনীন নাহার ইসলাম বলেন, বিভাগের সভাপতিরা ভর্তি পরীক্ষার কোর কমিটির মেম্বার। প্রতিবছর ডিন, সিন্ডিকেট মেম্বার, চেয়ারম্যান ও সিনিয়র শিক্ষকদের বয়োজ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু সি-১ ও সি-২ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে এটি মানা হয়নি। আমিসহ অনেক বিভাগের সভাপতিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এমনকী কয়েকজন সিন্ডিকেট ও সিনেট সদস্যকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক থাকা সত্ত্বেও একজন সহযোগী অধ্যাপককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিন থেকে প্রচলিত নিয়মের লঙ্ঘন করে বয়োজ্যেষ্ঠ প্রফেসরদের বাদ দিয়ে সহকারী অধ্যাপকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটি অনেক সিনিয়র শিক্ষকের আত্মসম্মানের সঙ্গে জড়িত। এর প্রতিবাদে আমি আজকে এবং আগামীকাল হল পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করলেও নির্ধারিত সম্মানি গ্রহণ করবো না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মেম্বার ও আইসিটি সেন্টারের ডিরেক্টর প্রফেসর ড. খাইরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিষয় একটি নিয়মের আওতায় চলে। কিন্তু সে নিয়ম লঙ্ঘন করে ডিউটি দেওয়ার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ নিজের পছন্দের শিক্ষকদের মধ্যে বিলি-বণ্টন করার ব্যবস্থা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি সিনিয়র শিক্ষকদের প্রতি এক ধরনের অপমান। আমার বঞ্চিত সহকর্মীদের প্রতি সম্মান রেখে আমি আগামীকাল পরীক্ষা অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করলেও কোনো সম্মানি গ্রহণ করবো না।
এ বিষয়ে ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের প্রধান সমন্বয়ক প্রফেসর ড. হেলাল নিজামী বলেন, ইউনিট প্রধান যাকে ইচ্ছে তাকে পরীক্ষার হল পরিদর্শনের দায়িত্ব দিতে পারেন। পরীক্ষার হল পরিদর্শন নিয়ে যেসব অভিযোগ অন্যরা করেছেন তা মিথ্যা।
এ বিষয়ে জানতে চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকীর মোবাইলফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আহমেদ জুনাইদ/এমআরআর/এএসএম