ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু

টোল আদায় বন্ধ হলেও কমেনি ভাড়া

মো. কামরুজ্জামান মিন্টু | ময়মনসিংহ | প্রকাশিত: ০৪:১৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহর কিংবা ঢাকায় যাতায়াত করতে হলে আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষকে ময়মনসিংহ নগরীর পাটগুদাম এলাকা পার হয়েই যাতায়াত করতে হয়। এই পাটগুদাম এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু। এটি স্থানীয়দের কাছে ‘শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ বা পাটগুদাম ব্রিজ’ হিসেবেও পরিচিত।

১৯৯১ সালে ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৫৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মিত হয়। সেতুটি পারাপারে ওই বছর থেকেই নগরীর চায়নামোড় এলাকায় স্থাপন করা টোলপ্লাজায় টোল দিয়ে আসছিলেন যানবাহনের চালকরা। তবে অনেক আগেই নির্মাণ ব্যয়ের টাকা উঠে গেছে। এরপরও যানবাহন থেকে টোল আদায় করায় ক্ষুব্ধ ছিলেন স্থানীয় লোকজনসহ চালক ও মালিকরা। টোল আদায় বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন তারা।

টোল আদায় বন্ধ হলেও কমেনি ভাড়া

যানবাহনের মালিক-চালকসহ পরিবহন নেতারা বলে আসছিলেন, টোল আদায় বন্ধ হলে যাত্রীদের ভাড়াও কমে যাবে। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছা না থাকায় টোল আদায় বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। ইজারা দিয়ে টোলপ্লাজা সচল রেখেছিলেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা। এরমধ্যে প্রভাবশালী হিসেবে ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিল এমদাদুল হক মণ্ডল। তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা।

বিগত সময়গুলোতে সেতুটির টোল হিসেবে প্রতিবার পারাপারের সময় ট্রাক, বাস, প্রাইভেট করসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন থেকে আদায় করা হতো ২০ থেকে ২৫০ টাকা। সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে ১৫ এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থেকে ১০ টাকা করে টোল আদায় করা হতো।

গত বছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সারাদেশের মতো ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগের নেতারাও পালিয়ে যান। তখন দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়ন করতে টোলপ্লাজায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে টোল আদায় বন্ধ করে দেয় ছাত্র-জনতা। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয় টোলপ্লাজাটি। বলা হয়, বিএনপি ক্ষমতায় এলে টোল আদায় আবারও শুরু হবে। তখন ইজারা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের জায়গায় পকেট ভারী করবেন বিএনপি নেতারা। আগের মতো গুনে গুনে চাঁদা দিতে হবে চালকদের। এমন আলোচনার ঝড় ওঠার মধ্যেই গত ৬ ফেব্রুয়ারি দিনগত মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত বুলডোজার দিয়ে আরেক দফা ভাঙচুর চালান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

টোল আদায় বন্ধ হলেও কমেনি ভাড়া

শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে টোলপ্লাজায় গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন যানবাহন বাধা ছাড়াই টোলপ্লাজা পারাপার হচ্ছে। এক টাকাও টোল দিতে হচ্ছে না। টোলপ্লাজায় যানবাহনকে থামতে না হওয়ায় সময়ও নষ্ট হচ্ছে না চালক-যাত্রীদের।

আরও পড়ুন:

পাটগুদাম ব্রিজ মোড়ে বাসে বসে থাকা আশরাফুল ইসলাম নামের এক যাত্রী জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভেবেছিলাম টোল আদায় বন্ধ হলে যানবাহনের ভাড়াও কমে যাবে। কিন্তু তা আর হলো না। আন্দোলন করে টোল আদায় বন্ধ করে যাত্রীদের কোনো লাভ হয়নি। প্রত্যেক যানবাহনের চালক-শ্রমিকরা আগের নির্ধারিত টাকা যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করছেন। সুযোগমতো আরও বেশি আদায় করা হচ্ছে।’

টোল আদায় বন্ধ হলেও কমেনি ভাড়া

টোলপ্লাজার সামনে চায়নামোড় এলাকার বাসিন্দা রিপন আহমেদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, “টোল আদায়কে স্থানীয় লোকজন বলতো, টোলের নামে ‘চাঁদাবাজি’ করা হচ্ছে। কারণ, সেতু নির্মাণের কয়েকগুণ বেশি টাকা এরইমধ্যে আদায় করা হয়েছে। টোলপ্লাজায় টাকা আদায় বন্ধ করতে আমরা বছরের পর বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। যে প্রত্যাশা নিয়ে টাকা আদায় বন্ধ করা হয়েছে, তার সুফল পাচ্ছে না যাত্রীরা।’

শামসুল আলম নামের একজন বাসচালক বলেন, ‘টোল আদায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের সুবিধা হয়েছে। আমরা আগে যে পরিমাণ ভাড়া আদায় করেছি, এখনো সেই টাকা আদায় করছি। ভাড়া কম আদায় করার নির্দেশনা পেলে কম আদায় করা হবে।’

অটোরিকশাচালক রুবেল মিয়া বলেন, ‘আগে প্রতিবার সেতু পারাপারে ১০ টাকা করে টোল দিতে হতো। বর্তমানে টোল আদায় বন্ধ হওয়ায় আমরা স্বস্তিতে রয়েছি। ভাড়া কম আদায় করার সিদ্ধান্ত এলে নতুন নির্ধারিত ভাড়ায় গাড়ি চালাবো।’

টোল আদায় বন্ধ হলেও কমেনি ভাড়া

ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী নুরুল আমিন কালাম বলেন, ‘এখন টোল আদায় বন্ধ হওয়ায় যানবাহনের সঙ্গে জড়িত সবার উপকার হয়েছে। তবে যাত্রীদের কোনো উপকার হয়নি। তাদের বিষয়টি মাথায় রেখে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করাসহ এই টোলপ্লাজা যেন আর কখনো চালু না হয়, সেই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’

ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি আলমগীর মাহমুদ আলমের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জেলা মোটরযান কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী বলেন, টোল আদায় বন্ধ হওয়ায় যানবাহনের চালক ও মালিকদের সুবিধা হয়েছে। তারা খুশি হয়েছেন। তবে ভাড়া কমাতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে।

স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, তিন বছর পরপর টোল আদায়ের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। সবশেষ ৫ আগস্টের কয়েক মাস আগে তিন বছরের জন্য ৫৬ কোটি টাকার বিনিময়ে ইজারা দেওয়া হয়। সেতু নির্মাণের পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ২১৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে ছোট-বড় মিলিয়ে ৩০-৩৫ হাজার গাড়ি পারাপার হয়। তবে প্রতিদিনের আদায় করা টোলের পরিমাণ কত, তা জানা যায়নি।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী কে বি এম সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছাত্র-জনতার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেতুটির টোল আদায় বন্ধ করা হয়েছে। তবে যাত্রীদের কথা চিন্তা করে ভাড়া কমিয়ে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করতে হলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) উদ্যোগ নিতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবু নাঈম বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এসআর/এমএস