ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

হত্যা মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা এখন এসএসসি পরীক্ষার হল সুপার!

জেলা প্রতিনিধি | জয়পুরহাট | প্রকাশিত: ০৯:০১ পিএম, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

হত্যা ও বিস্ফোরক মামলার আসামি। নেননি জামিন। তারপরও প্রশাসনের নাকের ডগায় চলমান এসএসসি পরীক্ষায় হল সুপারের দায়িত্ব পালন করছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। এমনই ঘটনা ঘটেছে জয়পুরহাটে।

ওই ব্যক্তির নাম জুলফিকার আলী রনি। তিনি জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক। বর্তমানে ক্ষেতলাল সরকারি পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

গত ১৮ মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকার সহকারী পরিচালক (কলেজ) ফজলুল হক মনি সই করা এক চিঠিতে তাকে হল সুপারের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুলফিকার আলী রনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি সাবেক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের ঘনিষ্ঠজন ও আস্থাভাজন। ক্ষমতার দাপটে কোনো প্রকার নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়ায় ২০১৩ সালে ক্ষেতলাল পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক (হিসাববিজ্ঞান) পদে যোগদান করেন। কলেজে যোগদান করার পরও তিনি আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

জুলফিকার আলী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা মামলার ১৬২ নম্বর আসামি। এছাড়া জয়পুরহাট সদর থানায় তার বিরুদ্ধে একটি বিস্ফোরক মামলাও রয়েছে।

সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ আগস্ট জয়পুরহাট শহরের পাচুঁর মোড় এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা হয়। পাঁচবিবি উপজেলার রতনপুর গ্রামের মতলবের ছেলে ছাত্র বিশাল ওই হামলায় গুলিবিদ্ধ হন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য বগুড়ায় রওয়ানা দিলে পথেই মারা যান বিশাল। এ ঘটনায় বিশালের বাবা জয়পুরহাট চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন।

ক্ষেতলাল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক ইমরানসহ একাধিক শিক্ষক-কর্মচারী জানান, জুলফিকার আলী জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্ব পেয়েছেন। তার নামে যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলা রয়েছে তা তারা জানেন না।

আরও পড়ুন:

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হত্যা মামলার বিষয়টি স্বীকার করেন ক্ষেতলাল সরকারি পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে পদায়নপ্রাপ্ত জুলফিকার আলী রনি।

তিনি আরও বলেন, ২০১৩ সালে কলেজে ঢুকেছি। ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। ২০২২ সাল থেকে কলেজ সরকারি হওয়ার পর থেকে আমি আর তেমন রাজনীতি করি না। হত্যা মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আর জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্ব পেয়েছেন বলে জানান।

জয়পুরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রুহুল আমিন বলেন, আমি মামলা বা এ বিষয়ে কিছু জানি না। তবে আপনার কাছ থেকে শুনলাম। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে আপনাকে জানাবো।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জয়পুরহাট জেলা শাখার আহবায়ক হাসিবুল হক সানজিদ জাগো নিউজকে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের দোসররা এখন কিভাবে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়, এটা প্রশাসনের দুর্বলতা, আবার শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্বে সে কিভাবে এখনো থাকে। আমাদের দাবি দ্রুত তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।

ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ক্ষেতলাল সরকারি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি আসিফ আল জিনাত বলেন, হল সুপারের দায়িত্বে থাকা অধ্যক্ষ জুলফিকার আলীর বিরুদ্ধে যে হত্যা মামলা রয়েছে এ বিষয়ে আমরা জানি না। জানলে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হতো না। আর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এটা মন্ত্রনালয়ের ব্যাপার। পরীক্ষা যেহেতু শুরু হয়েছে এই বিষয়গুলোও আমাদের খেয়াল করতে হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

জয়পুরহাট জেলা পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব বলেন, অধ্যক্ষ জুলফিকার আলীর মামলাটি তদন্তাধীন আছে। তদন্তে ওনি যদি জড়িত থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক অনুবিভাগ-২) মো. মিজানুর রহমানের সরকারি ফোনে কল ও হোয়াটসঅ্যাপে খুদেবার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আল মামুন/এসআর/এমএস