শেরপুর
বন্যহাতির তাণ্ডব, আতঙ্কে আধাপাকা ধান কাটছেন চাষিরা
হাতি আতংকে আধাপাকা ধান কাটছেন চাষিরা
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে হাতির তাণ্ডব বেড়েছে। প্রায় এক মাস ধরে উপজেলার পোড়াগাঁও, নয়াবিল ও রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় বোরো ধানক্ষেতে তাণ্ডব চালিয়ে আসছে বন্যহাতির দল। বন্যহাতির ভয়ে ফসল বাঁচাতে আধাপাকা ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকেরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা কালাপানি গ্রামের পাহাড়ি ঢালে কিষান-কিষানিরা দলবেঁধে আধাপাকা বোরো ধান কাটছেন।
কৃষকরা জানান, প্রায় ৪০-৫০টি বন্যহাতি প্রতিদিন পড়ন্ত বিকেলে খাবারের সন্ধানে বোরো ধানক্ষেতে নেমে আসে। প্রাণীগুলো ধান খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করছে। এতে তাদের ফসল ঘরে তোলা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাই যেসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার ক্ষেতের ধান পাকতে শুরু করেছে, সেসব ধান তারা কাটা শুরু করেছেন।
উপজেলার বুরুঙ্গা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আব্দুল কাদির জাগো নিউজকে বলেন, ‘পাহাড়ের ঢালে ৭৫ শতাংশ জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছিলাম। এখন ধান ঘরে তোলা নিয়ে সংশয়ে আছি। হাতির দল পাহাড় থেকে নেমে এসে ধান নষ্ট করছে। তাই পেটের খোরাকি ও খরচের টাকা তুলতে বন্যহাতির ভয়ে আধাপাকা ধানই কেটে ঘরে তুলছি।’
একই এলাকার কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, ‘সারারাত জেগে হাতি তাড়ানোর কারণে আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছে। এজন্য দিনের বেলায় ঠিকমতো কাজও করতে পারছি না।’
একইভাবে সংশয়ের কথা জানান কিষানি রত্না আক্তার। তিনি বলেন, ‘হাতির দল আগে রাতের বেলা বোরোক্ষেতে নেমে আসতো। আর এখন দিনের বেলাতেও এসে ধান খেয়ে সাবাড় করছে। হাতিরা এখন আর কোনো কিছুতেই ভয় পায় না। এমনকি কোনো বাধাও মানে না। আমরা হাতির ভয়ে ছোট ছোট সন্তানাদি নিয়ে রাত জেগে বসে থাকি। ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না।’
ওই এলাকার কৃষক আয়নাল হক বলেন, ‘আমার দুটি বসতঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে বন্যহাতি। কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি।’
তবে বন্যহাতির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে বলে জানান ময়মনসিংহ বনবিভাগের মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী। তিনি বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘নিয়ম হলো ৮০ শতাংশ পাকলে ধান কাটতে হয়। কিন্তু পাহাড়ি অঞ্চলে বন্যহাতির তাণ্ডব চলছে। তাই ওই এলাকার ধান যদি ৬০ শতাংশ পাকে, তাহলেও কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে অন্তত কৃষকরা তাদের বছরের খোরাকি ও খরচের টাকা উঠাতে পারবেন।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি বলেন, গারো পাহাড়ে বন্যহাতির তাণ্ডব দীর্ঘদিনের সমস্যা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে বনবিভাগের মাধ্যমে সরকার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
এসআর/জিকেএস