ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সড়কের অভাবে পড়ে আছে ৩৪ কোটি টাকার চার সেতু

আব্দুল্লাহ আল-মামুন | প্রকাশিত: ০৩:০৬ পিএম, ১১ মে ২০২৫

ফেনীর ৩ উপজেলায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি সেতু নির্মাণ হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় কাজে আসছে না। দাগনভূঞা, সোনাগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় এসব সেতু থাকলেও সংযোগ সড়কের অভাবে ব্যবহার করতে পারছে না মানুষ। অথচ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে কয়েক বছর আগেই। দ্রুত সংযোগ সড়ক তৈরি করে সেতুগুলো চলাচল উপযোগী করার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ফেনীর দাগনভূঞা, সোনাগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি সেতু নির্মাণ করে এলজিইডি। এর মধ্যে দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা থেকে বেকের বাজার সড়ক ও ছোট ফেনী নদীর ওপর ৬০ মিটার ব্রিজ ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করে মেসার্স ছালেহ আহমদ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো সেতুর সংযোগ সড়কসহ ৩০ ভাগ কাজ বাকি রয়েছে বলে একটি সূত্র দাবি করেছে।

অন্যদিকে একই উপজেলার উত্তর জায়লস্কর থেকে ওমরপুর যাতায়াতের জন্য সিলোনিয়া নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের কাজ করে মেসার্স হক ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮১ মিটার সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর। কিন্তু কাজের মেয়াদ শেষ হলেও সেতুর সংযোগ সড়কের জায়গা জটিলতার কারণে এখনো ৭ ভাগ কাজ বাকি রয়েছে।

অপরদিকে ছাগলনাইয়ার মহামায়া ইউনিয়নে মুহুরী নদীর ওপর ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৬ মিটার মাওলানা ওবায়দুল হক সংযোগ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

সড়কের অভাবে পড়ে আছে ৩৪ কোটি টাকার চার সেতু

এছাড়া সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর থেকে ভোরবাজারে যাতায়াতের জন্য কালিদাস পাহালিয়া নদীর ওপর ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৬ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হলেও এখনো সেতু দুটির সংযোগ সড়কের ভূমি জটিলতার কারণে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

মোমারিজপুর গ্রামের আবদুল কালাম জানান, সেতুটি আমাদের উপকারের জন্য করা হয়েছে। কিন্তু উপকারের পরিবর্তে এখন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেতুতে ওঠার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। সেতুর ওপর উঠতে হলে মই দিয়ে উঠতে হবে। সেতুর সঙ্গে আমার দোকান। সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে আমার দোকান ভেঙে দিয়েছে ঠিকাদার। বলেছিল সেতু নির্মাণ শেষে আমার দোকান ঠিক করে দেবে। কিন্তু সেতুর কাজ বাকি রেখে ঠিকাদার এখান থেকে পালিয়ে গেছে।

সোনাগাজীর নবাবপুর ইউনিয়নের আবুল হোসেন জানান, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু সুফল এলাকাবাসী ভোগ করতে পারছে না। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।

এদিকে সেতুর পাশেই নদীভাঙনের কবলে পড়েছে এলাকাবাসী। মানুষের ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। তাই দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে সেতুগুলো চলাচলের উপযোগী করার দাবি এলাকাবাসীর।

মোমারিজপুর গ্রামের সালমা খাতুন ও রহিমা আক্তার বলেন, ব্রিজের কাজের সময় নদীতে বাঁধ দেওয়া হয়। বন্যার সময় সেই বাঁধ দিয়ে পানি যেতে পারেনি। আমাদের বাড়ির ওপর দিয়ে পানি গড়িয়ে যায়। যার ফলে আমাদের ঘরবাড়ি, টিউবওয়েল, বাথরুমের কিছু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি অংশটুকুও যাওয়ার পথে।

ফেনীর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক বলেন, ৪টি ব্রিজের মধ্যে তিনটি সেতুর সংযোগ সড়কের জায়গা অধিগ্রহণ করতে হবে। একটি অধিগ্রহণ ছাড়া করা যাবে। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে। এরইমধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবর জমি অধিগ্রহণের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি সেতুগুলোর সংযোগ সড়কের জায়গা নিয়ে জটিলতা ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নিরসন হবে।

জানতে চাইলে ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, যেহেতু অবকাঠামো নির্মাণ হয়ে গেছে। প্রত্যাশী সংস্থা যদি আমাদের নিকট প্রস্তাব পাঠায়, সেইসঙ্গে নিয়ম অনুযায়ী যদি ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদান করে তাহলে জনসাধারণকে সেতুগুলো দিয়ে চলাচলের উপযোগী করার ব্যবস্থা করা যাবে।

এফএ/জিকেএস