ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ফরিদপুর

পেঁয়াজের দামে পুঁজিও টিকছে না চাষিদের

জেলা প্রতিনিধি | ফরিদপুর | প্রকাশিত: ০২:৪১ পিএম, ২৫ জুন ২০২৫

ফরিদপুরে বর্তমানে যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে তাতে চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষিরা। উৎপাদন খরচের তুলনায় লাভতো দূরের কথা পুঁজিও টিকছে না পেঁয়াজ চাষিদের। ফলে হতাশায় পড়েছেন চাষিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা-উপজেলার বিভিন্ন ছোট-বড় বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দর মণপ্রতি ১৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে পেঁয়াজ চাষিদের দাবি, সর্বনিম্ন ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা মণ পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারলে তাদের অন্তত আসল খরচ টিকবে। তেমন লাভ না হলেও অন্তত লোকসানে পড়তে হবে না।

সালথা উপজেলার ঠেনঠেনিয়া বাজারে সপ্তাহে রোববার ও বুধবার দুই দিন হাট বসে। সেখানে সকাল থেকেই পেঁয়াজ চাষিরা কেউ ভ্যানযোগে, কেউ নসিমন, কেউ অটোরিকশা, কেউবা বস্তা মাথায় নিয়ে হাটে পেঁয়াজ নিয়ে আসেন। হাট চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এ হাটে স্থানীয় ব্যবসায়ীর পাশাপাশি দেশের দূরদূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন পেঁয়াজ কিনতে। প্রতি হাটে দুই শতাধিক ব্যবসায়ী আসেন এখানে। কমপক্ষে ৩০০ টন পেঁয়াজ কেনাবেচা হয়। যা দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে নিয়ে যাওয়া হয়।

বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর পেঁয়াজ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রকারভেদে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৭০০ টাকায়।

হাটে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা আলিম শেখ বলেন, এবার অন্যবারের থেকে বেশি পেঁয়াজ আবাদ করেছি। ঘরে এখনো আড়াইশো মণের মতো পেঁয়াজ আছে। আশা করেছিলাম ভালো দাম পাবো। প্রতি হাটে দুই-চার মণ করে আনছি আর বিক্রি করছি। তাতে যে দাম পাচ্ছি। লাভ তো দূরে থাক, খরচই উঠছে না।

বোয়ালমারী উপজেলার রুপাপাত ইউনিয়নের সহস্রাইল বাজারে আসা পেঁয়াজ চাষি কপিল বিশ্বাস বলেন, এবার প্রায় তিনশো মণের মতো পেঁয়াজ পেয়েছি। শুরুতে বিক্রি করিনি পরে বিক্রি করলে ভালো দাম পাবো বলে। পেঁয়াজ উৎপাদনে তুলনামূলক ব্যয় বেড়েছে, কিন্তু সেই হারে দাম বাড়েনি। এখন এমন অবস্থা, গত কয়েক মাসে ঘরের চাঙ্গে রাখায় ওজনে কিছুটা ঘাটতি হয়েছে। আবার দামও কম। লাভের আশা আর কী করবো, এখন পুঁজিই টিকছে না।

পেঁয়াজের দামে পুঁজিও টিকছে না চাষিদের

পেঁয়াজ চাষি সুইট মন্ডল বলেন, কয়েক মাস আগে পেঁয়াজ যখন ঘরে তুলি, সেসময় দাম হাজারের মতো ছিল। একটু ভালো দামের আশায় এতদিন ঘরে রেখেছিলাম। কিন্তু এখন বাজার দরে পুঁজি টেকানো কষ্ট। তার ওপর আবার এতদিনে পেঁয়াজের ঘাটতি হয়েছে। বাজারে আমরা যদি ২০০০ থেকে ২২০০ টাকায় প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম পেতাম, তাহলে লাভ না হলেও অন্তত লোকসান হতো না।

পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আরশাদ মোল্লা জানান, জেলার বিভিন্ন বাজার থেকে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ২০ ট্রাক পেঁয়াজ ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাই। আমরা কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করে খরচ বাদে সামান্য লাভে মহাজনের কাছে বিক্রি করি।

সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সোহাগ জানান, সালথা উপজেলা পেঁয়াজের রাজধানী। উপজেলার ঠেনঠেনিয়া বাজারের প্রতি হাটে কোটি টাকার ওপর পেঁয়াজ ক্রয়-ক্রয় হয়। এখানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ বেশ কয়েকটি বিভাগীয় শহর থেকে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ কিনতে আসেন।

জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহেদুজ্জামান বলেন, পেঁয়াজের বাজার দরে আমাদের কোনো হাত নেই। এ বিষয়ে আমাদের কিছু করারও নেই। ফরিদপুরে তিন প্রকারের পেঁয়াজের আবাদ হয়। মুড়িকাটা পেঁয়াজ, হালি পেঁয়াজ এবং দানা পেঁয়াজ। এ তিন ধরনের পেঁয়াজের মধ্যে হালি পেঁয়াজ বেশি আবাদ হয়। এই মৌসুমে জেলায় ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়। এবারের উৎপাদনের হারও বেশ ভালো।

এন কে বি নয়ন/এফএ/এএসএম