ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ভিডিও ভাইরাল

গাজীপুরে চুরির অপবাদে কারখানার ভেতর শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা

জেলা প্রতিনিধি | গাজীপুর | প্রকাশিত: ১০:৪১ এএম, ০১ জুলাই ২০২৫

গাজীপুরে চুরির অপবাদ দিয়ে কারখানায় মো. হৃদয় (১৯) নামে এক পোশাক শ্রমিককে রশি দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোনাবাড়ীর গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড কারখানায় এ ঘটনা ঘটে। মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনায় শনিবার (২৮ জুন) রাতে নিহতের বড় ভাই লিটন মিয়া বাদী হয়ে নগরীর কোনাবাড়ী থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

পরে পুলিশ রোববার (২৯ জুন) অভিযান চালিয়ে হাসান মাহমুদ মিঠুন (২৮) নামে ওই কারখানার এক শ্রমিককে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার মিঠুন টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি উপজেলার থোড়া গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে। কোনাবাড়ির কুদ্দস নগরের মো. আয়নালের বাসায় ভাড়া থেকে ওই কারখানায় কাজ করতেন।

নিহত শ্রমিক হৃদয় টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শুকতার বাইদ গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। তিনি কোনাবাড়ির গ্রিনল্যান্ড কারখানার বয়লার মিস্ত্রি ছিলেন।

এদিকে পোশাক শ্রমিক হৃদয় হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেলে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে একটি গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠন।

এর আগে ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার (২৮ জুন) অন্য শ্রমিকরা কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন। তাদের অভিযোগ, কারখানা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গোপন করতে চেয়েছিল।

এদিকে ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা গেছে, হৃদয়কে কারখানার একটি কক্ষের জানালার সঙ্গে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে খালি গায়ে একটি সোফার ওপর বসিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে হৃদয়ের মুখ ও নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। তার জিন্সের প্যান্টেও রক্তের দাগ লেগে ছিল।

গাজীপুরে চুরির অপবাদে কারখানার ভেতর শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা

এসময় আশপাশের কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়, ‘এত করে পিটানো হইছে, তারপরও কিছুই হয় নাই, মরে নাই।’

ভিডিওর আরেকটি অংশে দেখা যায়, হৃদয়কে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় একটি কক্ষ থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করছেন কয়েকজন। তাদের মধ্যে একজনের হাতে কাঠের লাঠি ছিল। তখনো পিঠের দিকে হাত মুড়িয়ে রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় ছিলেন হৃদয়। রশির একটি অংশ দিয়ে তার দুই পা বাঁধা ছিল। ওই অবস্থায় কয়েকজন তাকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু হৃদয় ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছিলেন না।

মামলার বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, হৃদয় ডিউটি শেষে বাসায় না ফেরায় শনিবার বিকেলে তার ভাই লিটন ও মা কারখানায় খুঁজতে যান। সেখানে গিয়ে শ্রমিকদের বিক্ষোভ দেখে জানতে পারেন চুরির অপবাদ দিয়ে হৃদয়কে হত্যা করা হয়েছে। মরদেহের সন্ধান চাইলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে আছে বলে জানানো হয়। সেখানে গিয়ে তারা মরদেহ শনাক্ত করেন।

মামলার বাদী লিটন মিয়া বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ড কারখানার ভেতরে আমার ভাইকে ম্যালা (অনেক) মারধর করে হত্যা করা হইছে। পরে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য তার মরদেহ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। আমি ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।’

হৃদয়কে পিটিয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাহউদ্দিন।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে মিঠুন নামে এক শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার পর কারখানার সবাই পালিয়ে গেছে। রোববার কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে গ্রিনল্যান্ড কারখানার উপ-মহাব্যবস্থাপক কামরুল হাসানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, শুনেছি চুরির অপবাদ দিয়ে ওই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কি চুরির ঘটনায় তাকে মারধর করা হয়েছে তা পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।

মো. আমিনুল ইসলাম/এমএন/জেআইএম