ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

টাঙ্গাইল

মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে লুটের ঘটনায় ধরাছোঁয়ার বাইরে ‘মূলহোতা’

জেলা প্রতিনিধি | টাঙ্গাইল | প্রকাশিত: ১০:০৩ এএম, ০৯ জুলাই ২০২৫

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে লুটের ঘটনায় জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত হয়েছে। তবে রহস্যজনক কারণে ঘটনার মূল অভিযুক্ত সহকারী উপ-পরিদর্শক শামীম আল আজাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সাবেক কাউন্সিলর সালেহা বেগম ও স্থানয়ীরা। সালেহা বেগম মূল অভিযুক্ত শামীমকে বরখাস্তসহ লুট হওয়া টাকা ফেরতের দাবি করেছেন।

জানা যায়, লুটের ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিস সহকারী উপ-পরিদর্শক শামীম আল আজাদ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর তাকে আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় সংযুক্ত করা হলেও তিনি যোগদান করেননি। প্রসিকিউশন শাখায় যোগদান না করায় মঙ্গলবার (৮ জুন) শামীম আল আজাদকে জেলা অফিসের উপ-পরিচালক আবুল হোসেন কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।

পরবর্তীতে সোমবার (৭ জুলাই) রাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাসান মারুফের সই করা অফিসে আদেশে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৩ কর্মকর্তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। তবে এসময় অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া শামিমকে বরখাস্ত করা হয়নি।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন, টাঙ্গাইল জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম, সহকারী উপ-পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান ও জিয়াউর রহমান।

এর আগে ৬ জুলাই ‘মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে অর্থ লুটের অভিযোগ, তদন্তে কমিটি’ শিরোনামে জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

সাবেক কাউন্সিলর ছালেহা বেগম অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি শামীম আল আজাদসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করেন। কিন্তু সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তিন জনকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৮ জুন সকালে ভূঞাপুরে সাবেক কাউন্সিলর সালেহা বেগম বাড়িতে মাদক বিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেয় সহকারী উপপরিদর্শক শামীম আল আজাদ। শামীমের ইচ্ছেতেই এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এছাড়া অভিযানে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণের আরও ৭ জন ছিলেন। অভিযানে নামে নাটকীয়ভাবে ১০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে ভুক্তভোগী নারীর জবানবন্দি ভিডিও রেকর্ড করা হয়। এসময় তারা ৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা লুট করে নেয়।

মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে লুটের ঘটনায় ধরাছোঁয়ার বাইরে ‘মূলহোতা’

সূত্র আরো জানায়, শামিম ২০২১ সালের থেকে টাঙ্গাইল শাখায় কর্মরত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকলেও অজ্ঞাত কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর জেলা শাখার উপ-পরিচালক আবুল হোসেনের ঢাকার বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে চিঠি দেন। তবে অজ্ঞাত কারণে তাকে বদলি করা হয়নি।

এদিকে শামিমকে শোকজের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘২৯ জুন আপনাকে (শামিম) মাদকবিরোধী অভিযান কার্যক্রম হতে অব্যাহতি দিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ‘খ’ সার্কেল থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিজ্ঞ আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় সাময়িকভাবে সংযুক্ত করা হয় এবং ১ জুলাই আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় যোগদান করে দায়িত্ব পালনের আদেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু আপনি অদ্যাবধি আদেশ পালন করেননি। বরং আপনি বিভিন্নভাবে বিরূপ আচরণ ও মন্তব্য করে যাচ্ছেন মর্মে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। আপনি সরকারি দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে চরম অবহেলা ও গাফিলতি করেছেন। যা অসদাচরণের শামিল। এমন কার্যক্রমের জন্য আপনার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ অনুযায়ী কেন বিভাগীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবর সুপারিশ করা হবে না এবং আপনার বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে (এসিআর) কেন এর প্রতিপালন করা হবে না তার কারণ জানিয়ে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কার্যালয়ে জবাব দাখিলের জন্য আপনাকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।’

ভুক্তভোগী নারী সাবেক কাউন্সিলর সালেহা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, শামীম আল আজাদ টাকার জন্য আমাকে সব চেয়ে বেশি নির্যাতন করেছে। আমার হাত ধরে টানাহেঁচড়া করা হয়েছে। লাঠি দিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে। আমার কাপড় উঠিয়ে কোচের মধ্যে লুকানো টাকাও হাতিয়ে নেয় শামিম।

তিনি আরও বলেন, শামিমের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তি না হওয়ায় আমি হতাশাগ্রস্ত। আমি শামিমের কঠিন বিচার চাই। এছাড়াও আমি সামান্য নরমাল বহিষ্কারে খুশি নই। আমি তাদের উপযুক্ত কঠিন বিচার চাই। একই সঙ্গে লুট হওয়া টাকা ফেরতের দাবি করছি।

অভিযুক্ত জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সহকারী উপ-পরিদর্শক শামীম আল আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, শামিক আল আজাদকে কী কারণে বরখাস্ত করা হয়নি তা আমার জানা নেই। শামিম এ ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অভিযানের নামে টাকা লুটের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি।

তিনি আরও বলেন, শামিমকে আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় যোগদান না করায় শোকজ করা হয়েছে। ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তাকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

আব্দুল্লাহ আল নোমান/এমএন/এএসএম