কুড়িগ্রাম ১
বিএনপির চ্যালেঞ্জ হবে ইসলামি দলগুলোর জোট
ছবিতে সাইফুর রহমান রানা, আনোয়ারুল ইসলাম, আব্দুল হাই মাস্টার, বিন ইয়ামিন মোল্লা ও ডা. ইউনুস আলী
কুড়িগ্রাম জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন কুড়িগ্রাম-১। এ দুই উপজেলার বেশিরভাগ অঞ্চল সীমান্তবর্তী ও নদীবেষ্টিত দুর্গম চরাঞ্চল। এখানকার অধিকাংশ মানুষের পেশা কৃষি বা ব্যবসা। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসায় জনসাধারণের মাঝে চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা। সাধারণ মানুষ বিগত সংসদ সদস্যদের নিয়ে তাদের পুরোনো সমস্যার কথা তুলে আলোচনা-সমালোচনা করছেন।
নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নিয়ে কুড়িগ্রাম-১ আসন। ২৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ আসনে মোট ভোটার পাঁচ লাখ ২৯ হাজার ১৬৩। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৬৩ হাজার ২৫৩ ও নারী ভোটার দুই লাখ ৬৫ হাজার ৯০৭, তৃতীয় লিঙ্গের তিনজন। দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টির দখলে থাকলেও আসনটি উদ্ধারে মরিয়া বিএনপি।
অন্যদিকে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন জোট হলে আসনটি তাদের দখলে যাবে বলেও শোনা যাচ্ছে। ফলে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির জন্য আসন উদ্ধারে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।
এ আসনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাইফুর রহমান রানা, নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম রসুল রাজা, জেলা বিএনপির সদস্য ড্যাব নেতা ডা. ইউনুছ আলী, জেলা বিএনপির সদস্য ড্যাব নেতা ডা. মাহফুজার রহমান মারুফ মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে। বিএনপির এই চার মনোনয়নপ্রত্যাশী এলাকায় গণসংযোগ করছেন বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন
এছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রার্থী হিসেবে অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আলহাজ হারিছুল বারী রনির নাম ঘোষণা করেছে। জাকের পার্টির আব্দুল হাই মাস্টার, গণ অধিকার পরিষদের বিন ইয়ামিন মোল্লাও এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। তবে জাপার মোস্তাফিজুর রহমান প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেলে ভোটের হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে পারে বলে মনে করেন ভোটাররা। অন্যদিকে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন জোট হলে আসনটি তাদের দখলে যাবে বলেও শোনা যাচ্ছে। ফলে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির জন্য আসন উদ্ধারে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।
স্বাধীনতার পর এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও তৃতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে দশম সংসদ পর্যন্ত (৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদের ১৫ ফ্রেব্রুয়ারির নির্বাচন ছাড়া) ছিল জাপার দখলে। আগামী নির্বাচনে আসনটি দখলে নিতে মরিয়া বিএনপি। তবে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে ইসলামি দলগুলোর জোট।
আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির চার প্রার্থীর মধ্যে সাইফুর রহমান রানা ভোটের মাঠে এগিয়ে থাকলেও এ আসনে বিএনপির দুটি সক্রিয় গ্রুপ রয়েছে। একটি সাইফুর রানার গ্রুপ অন্যটি রানাবিরোধী গ্রুপ। দুটি গ্রুপ একত্রিত না হলে ভোটের রাজনীতিতে তৃতীয় পক্ষ সুবিধা নিতে পারে বলে জানিয়েছে দলের একাধিক সূত্র।
বিএনপির প্রার্থী সাইফুর রহমান রানা ১৯৯৬ থেকে ২০১৮ সালে ধারাবাহিকভাবে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করলেও হেরে গেছেন।
আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির চার প্রার্থীর মধ্যে সাইফুর রহমান রানা ভোটের মাঠে এগিয়ে থাকলেও এ আসনে বিএনপির দুটি সক্রিয় গ্রুপ রয়েছে। একটি সাইফুর রানার গ্রুপ অন্যটি রানাবিরোধী গ্রুপ। দুটি গ্রুপ একত্রিত না হলে ভোটের রাজনীতিতে তৃতীয় পক্ষ সুবিধা নিতে পারে বলে জানিয়েছে দলের একাধিক সূত্র।
তথ্যমতে, এ আসনে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে মোস্তাফিজুর রহমান লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে মোস্তাফিজুর রহমান তার জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। ২০১৮ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আসলাম হোসেন বিজয়ী হন। এরপর ফের ২০২৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান আসনটি পুনরুদ্ধার করেন।
আরও পড়ুন
আসনটি সীমান্তবর্তী অঞ্চল হওয়ায় কাঁটাতারের নিরাপত্তা, মাদক ও গবাদি চোরাচালান রোধ জনপ্রতিনিধিদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ভূরুঙ্গামারীর একাধিক ইউনিয়ন ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা হওয়ায় গবাদি চোরাচালান, মাদক, অনুপ্রবেশ এবং নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে। তরুণদের একটি অংশ মাদকে জড়িয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে।
এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হারিছুল বারী রনি। জাকের পার্টির আব্দুল হাই মাস্টার, গণ অধিকার পরিষদের বিন ইয়ামিন মোল্লাও এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। তবে জাপার মোস্তাফিজুর রহমান প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেলে ভোটের হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে পারে।
ভোটারদের প্রত্যাশা, দলীয় প্রতীক কিংবা নেতা নয়। প্রয়োজন বাস্তব উন্নয়ন, সমস্যা সমাধানের দিকনির্দেশনা। এমন একজন প্রতিনিধি চান, যিনি দুর্যোগে-দুর্দিনে পাশে থাকবেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক বৈষম্যহীন একটি সমাজ কায়েম করতে চায়। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমাদের যাদের দল মনোনয়ন করেছে আমরা সেইসব এলাকার সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে প্রধান সমস্যাগুলো নির্বাচন করছি।
স্বাধীনতার পর এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও তৃতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে দশম সংসদ পর্যন্ত ছিল জাপার দখলে। আগামী নির্বাচনে আসনটি দখলে নিতে মরিয়া বিএনপি। তবে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে ইসলামি দলগুলোর জোট।
তিনি আরও বলেন, কুড়িগ্রাম জেলা দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যের শিকার। আমরা ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে কুড়িগ্রাম জেলাকে বৈষম্যমুক্ত করব। আমি প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। আল্লাহপাক যদি জনগণের খেদমত করার তৌফিক দান করেন, তাহলে আমার আসনে মানুষের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে পর্যায়ক্রমে কাজ করব ইনশাআল্লাহ।
আরও পড়ুন
নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী গোলাম রসুল রাজা বলেন, নাগেশ্বরী-ভূরুঙ্গামারী নিয়ে কুড়িগ্রাম-১। আসনটি ব্রহ্মপুত্র ধরলা দুধকুমার নদীবেষ্টিত। এখানে অধিকাংশ ইউনিয়ন হলো চরকেন্দ্রিক। এখানকার প্রধান সমস্যা নদীভাঙন। এ আসনে একবার আওয়ামী লীগ এরপর থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। আসনটিতে বিএনপির ভোটব্যাংক থাকলেও জোট মহাজোটে বিএনপির প্রার্থীর পরাজয় হয়। আসন্ন নির্বাচনে আসনটি পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা কাজ করছি। তবে দল থেকে যাকেই মনোনয়ন দেবে আমরা সেই প্রার্থীর হয়ে কাজ করবো।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজেও একজন মনোয়নপ্রত্যাশী। দল আমাকে মনোনীত করলে এ অঞ্চলের শিক্ষা-স্বাস্থ্যের পাশাপাশি চরাঞ্চলে মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘবে কাজ করবো ইনশাআল্লাহ।’
এমএএনইউ/এসএইচএস/এমএফএ/জেআইএম