ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ডিজিটাল ভূমি জরিপ

কাগজপত্র ঠিক থাকলেও দিতে হয় ঘুস

মো. আকাশ | সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) | প্রকাশিত: ০৭:০১ পিএম, ২৪ জুলাই ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ডিজিটাল ভূমি জরিপ করাতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তাদের অভিযোগ, ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সার্ভেয়াররা। ব্যক্তিভেদে নেওয়া হচ্ছে ৩০ হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকা ঘুস।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় একমাস ধরে সিদ্ধিরগঞ্জে ভূমি জরিপের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জরিপে জমি ও বাড়িঘর সঠিকভাবে রেকর্ড করে নিতে সার্ভেয়ারের দারস্থ হচ্ছেন মালিকপক্ষের লোকজন। তবে অভিযোগ রয়েছে, কাগজপত্র ঠিক থাকা সত্ত্বেও অসাধু কর্মকর্তারা নানা জটিলতা দেখিয়ে অর্থ বাণিজ্য করছেন।

হীরাঝিল এলাকার বাসিন্দা শাহজালাল জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘আমার জমির কাগজে কোনো ভুল নেই। তারপরও ৩০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। এখন অস্বীকার করছে।’

নাসিক ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ভূমিপল্লীর একটি বাড়ির কাগজপত্র সঠিক থাকা সত্ত্বেও জরিপের রেকর্ড করতে ৩০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। হীরাঝিল এলাকার আরেকটি জমির সব কাগজপত্র ঠিক রয়েছে। তবুও তারা প্রথমে দুই লাখ দাবি করেন। শেষমেশ এক লাখ টাকায় করে দেবেন বলে জানান।’

‘আমাদের ভূমিপল্লীর একটি বাড়ির কাগজপত্র সঠিক থাকা সত্ত্বেও জরিপের রেকর্ড করতে ৩০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। হীরাঝিল এলাকার আরেকটি জমির সব কাগজপত্র ঠিক রয়েছে। তবুও তারা প্রথমে দুই লাখ দাবি করেন। শেষমেশ এক লাখ টাকায় করে দেবেন বলে জানান।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বেকারি মালিক জাগো নিউজকে জানান, প্রথমে তারা (সার্ভেয়াররা) টাকা চান না। মোবাইল নম্বর রেখে দেন। পরে ফোন দিয়ে বাসায় আসেন।

তিনি বলেন, ‘আমার কাছে দুই বাড়ির জন্য এক লাখ টাকা চায়। আমি ৭০ হাজার দিয়েছি। কিন্তু আমার জমির কাগজপত্র সব ঠিক।’

বাবু নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমি জানতাম না যে টাকা লাগে। আমার কাছে ৫০ হাজার চেয়েছে। আমি বলেছি, এত টাকা নেই। পরে ৩০ হাজার নিয়ে কাজ করে দিয়েছে।’

কাগজপত্র ঠিক থাকলেও দিতে হয় ঘুসঘুস নেওয়ার অভিযোগে দুই সার্ভেয়ারকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয় ছাত্র-জনতা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারী বলেন, ‘আমার স্বামী বিদেশে। সন্তানরা ছোট। আমি জরিপ করাতে যাওয়ার পর এক লাখ টাকা চায় নজরুল নামের এক লোক। পরে ৫০ হাজার দিয়ে কাজ করিয়েছি।’

এ বিষয়ে সার্ভেয়ার আবুল হাশেম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা টাকা নিই—এই কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়। তবে, কাজ করতে গেলে টুকটাক ভুলত্রুটি হয়, অস্বীকার করছি না।’

‘আমি জানতাম না যে টাকা লাগে। আমার কাছে ৫০ হাজার চেয়েছে। আমি বলেছি, এত টাকা নেই। পরে ৩০ হাজার নিয়ে কাজ করে দিয়েছে।’

একপর্যায়ে প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘আপনি কোথায় আছেন ভাই, একটু দেখা করি আমরা।’

সার্ভেয়ার সামাদ বলেন, ‘আমি ভূমি জরিপের কার্যক্রমে কোনো অর্থ নেই না। আমাদের এখানে অনেকগুলো কর্মকর্তা রয়েছেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন। আমি অর্থ নিচ্ছি না।’

সার্ভেয়ার রুহুল আমিন, মনির ও শফিককে ফোন করা হলেও তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

কর্মকর্তাদের ঘুস বাণিজ্যের বিষয়ে ডিজিটাল ভূমি জরিপের ঢাকা জোনের প্রধান মাহমুদ জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘুস বাণিজ্যের খবর আমার কাছে রয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। ওই এরিয়ায় মোট ৯ জন কর্মকর্তা পাঠানো হয়েছিল। তাদের সবাইকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

‘প্রথমে তারা (সার্ভেয়াররা) টাকা চান না। মোবাইল নম্বর রেখে দেন। পরে ফোন দিয়ে বাসায় আসেন।’

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনূর আলম বলেন, ‘ভূমি জরিপের নামে ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগে দুই কর্মকর্তাকে জনতা আমাদের কাছে সোপর্দ করেছিল। আজ দুপুরে তাদের ১৫৪ ধারায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলার বাদীর অভিযোগ সহকারে দুদকের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবযানী কর বলেন, ‘ভূমি জরিপের বিষয়ে আমার বক্তব্য দেওয়া সম্ভব না। কারণ এটি আমাদের কাজের মধ্যে পড়েনি। এটি ঢাকা জোনের কাজ।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞাকে ফোন দেওয়া হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত, বুধবার (২৩ জুলাই) সিদ্ধিরগঞ্জে ডিজিটাল ভূমি জরিপ কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগে নাসিক ১ নম্বর ওয়ার্ডের হীরাঝিলে অবস্থিত গিয়াসউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মাণাধীন একটি ভবন থেকে সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মহসিন আলী সরদার ও সার্ভেয়ার নজরুল ইসলাম সরকারকে পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন স্থানীয় ছাত্র-জনতা। পরে তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

এসআর/জেআইএম