নীলফামারী-৪
নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর ৬০ হাজারের বেশি অবাঙালি ভোটার
ছবিতে আব্দুল গফুর সরকার, হাফেজ আব্দুল মুনতাকিম, সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক, বেবী নাজনীন, বিলকিস ইসলাম, ওবায়দুর রহমান, শওকত চৌধুরী, শওকত হায়াত শাহ
উত্তরের জেলা নীলফামারী-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থীজট থাকলেও জামায়াতে ইসলামী এ আসনে প্রার্থী অনেক আগেই চূড়ান্ত করেছে। এখন পর্যন্ত এ আসনে বিএনপির অন্তত ছয়জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের বেশির ভাগই নানাভাবে মাঠে আছেন। আবার অনেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে না নামলেও ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে দলে দেখা দিয়েছে বিভক্তি। কার পক্ষে ভোট চাইবেন এ নিয়ে নেতাকর্মীরা পড়েছেন শঙ্কায়।
কিশোরগঞ্জ ও সৈয়দপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ১৫ নম্বর আসনটি নীলফামারী-৪। দেশের সর্বপ্রথম ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা কিশোরগঞ্জ। ব্যবসা-বাণিজ্য ও ভৌগোলিক কারণে উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সৈয়দপুরের গুরুত্ব রয়েছে। এ উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ১৫ হাজার ৩৮৩ এবং কিশোরগঞ্জে ২ লাখ ১০ হাজার ৬৫১। এখানে বিএনপির নিজস্ব ভোটব্যাংক আছে। এর বাইরে বড় ফ্যাক্টর হচ্ছে ৬০ হাজারের বেশি অবাঙালি ভোটার। এ ভোটাররা যেদিকে সমর্থন দেবেন, প্রার্থী বিজয়ের ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে। আশার কথা হচ্ছে, এখন অবাঙালিরা বিএনপি, জামায়াতসহ অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পদে থেকে রাজনীতিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করছেন। স্বাধীনতার পরবর্তী প্রজন্ম নিজেকে আর পাকিস্তানি হিসেবে পরিচয় দিতে চান না।
এখানে বিএনপির নিজস্ব ভোটব্যাংক আছে। এর বাইরে বড় ফ্যাক্টর হচ্ছে ৬০ হাজারের বেশি অবাঙালি ভোটার। এই ভোটাররা যেদিকে সমর্থন দেবেন, প্রার্থী বিজয়ের ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে। আশার কথা হচ্ছে, এখন অবাঙালিরা বিএনপি, জামায়াতসহ অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পদে থেকে রাজনীতিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করছেন। স্বাধীনতার পরবর্তী প্রজন্ম নিজেকে আর পাকিস্তানি হিসেবে পরিচয় দিতে চান না।
এ আসনে বিগত নির্বাচনগুলোর ফলাফলে দেখা গেছে, ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে জাতীয় পার্টি পাঁচবার, বিএনপি তিনবার, আওয়ামী লীগ দুবার, ন্যাপ-মোজাফফর একবার এবং সর্বশেষ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছে।
- আরও পড়ুন
- দুর্গ উদ্ধারের লড়াইয়ে জামায়াত, প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি
- জামায়াতের একক প্রার্থী, বিএনপিতে সম্ভাব্য একাধিক
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এ আসনে বিএনপি ও জামায়াত বেশ তৎপর। এর বাইরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাংগঠনিক তৎপরতা সামান্য লক্ষ্য করা গেলেও নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা একেবারেই নেই।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন বাস্তবতায় নীলফামারী-৪ আসনের রাজনীতি মূলত বিএনপিকে ঘিরেই আবর্তিত। জাতীয় দিবসসহ দলীয় কর্মসূচিগুলো বেশ জাঁকজমকভাবে পালন করে আসছে দলটি। দলের নেতারা বলছেন, হাইকমান্ড যাকে মনোনীত করবে, বিভেদ ভুলে তার পক্ষেই কাজ করবেন সবাই।
নীলফামারীর-৪ আসনের রাজনীতি মূলত বিএনপিকে ঘিরেই আবর্তিত। জাতীয় দিবসসহ দলীয় কর্মসূচিগুলো বেশ জাঁকজমকভাবে পালন করছে দলটি। দলের নেতারা বলছেন হাইকমান্ড যাকে মনোনীত করবেন, বিভেদ ভুলে তার পক্ষেই কাজ করবেন সবাই। এদিকে বিগত দিনে জামায়াত ও বিএনপি জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও এবার জামায়াত আলাদা প্রার্থী দিচ্ছে।
এদিকে বিগত দিনে জামায়াত ও বিএনপি জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও এবার জামায়াত আলাদা প্রার্থী দিচ্ছে। সম্প্রতি রংপুরের জনসভায় জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান নীলফামারীর মোট চারটি আসনের মধ্যে তিনটি আসনে দলের প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী চূড়ান্ত করে অনেকটাই নির্ভার আছে।
এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছয়জন। তারা হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য শওকত চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য বিলকিছ ইসলাম, কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল গফুর সরকার, বিএনপি নেতা শওকত হায়াত শাহ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা ওবায়দুর রহমান। জামায়াতের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা আব্দুল মুনতাকিম। এছাড়া এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য শিল্পপতি সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক।
- আরও পড়ুন
- ১৮ বছর পর ফেরা তুহিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত
- লাখের বেশি হিন্দু ভোটারের মন জয়ে তৎপর বিএনপি-জামায়াত
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীরা এলাকায় সভা-সমাবেশ, গত রমজানে ইফতার মাহফিল, ঈদ পুনর্মিলনী, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। এবার পবিত্র ঈদুল আজহার পরও এসব মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা এলাকায় নানা অনুষ্ঠানে তৎপর ছিলেন। ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পাড়া-মহল্লায় তাদের পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার শোভা পেয়েছে। নেতাকর্মীসহ ভোটারদের নিজের পক্ষে টানতে আটছে নানা কৌশল।
এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছয়জন। তারা হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য শওকত চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য বিলকিছ ইসলাম, কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল গফুর সরকার, বিএনপি নেতা শওকত হায়াত শাহ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা ওবায়দুর রহমান।
উপজেলা জামায়াতের আমির ও সম্ভাব্য প্রার্থী হাফেজ মাওলানা আব্দুল মুনতাকিম বলেন, জামায়াত একটি সুসংগঠিত দল। হাসিনা সরকারের পতনের পর মানুষের মধ্যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা জন্ম নিয়েছে। আর তারা জামায়াতকে ঘিরেই তাদের এ নতুন স্বপ্ন পূরণ করতে চায়। এছাড়া দলে কোনো বিভেদ নেই। এ কারণে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।
সৈয়দপুর জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল গফুর সরকার বলেন, দেশে বিএনপি বড় দল। মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগিতা থাকবে, এটিই স্বাভাবিক। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে সবাই তার জন্য কাজ করবে। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
নির্বাচনী পরিবেশ পরিস্থিতি সব কিছু স্বাভাবিক থাকলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ভেঙে যাওয়া সংসদের সাবেক সংসদ সদস্য সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক। এর আগে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয় লাভ করেছিলেন। তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতি করতেন। এ দলের সৈয়দপুর উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। এছাড়া তিনি উত্তরাঞ্চলের বড় প্রতিষ্ঠান ইকু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
সিদ্দিকুল আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নানান প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে দেশে একটি দৃশ্যমান সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে পুনরায় জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এএইচকিউ/এসএইচএস/এমএফএ/জিকেএস