ভাসমান নৌকার হাটে মৌসুমে বেচাকেনা ১৫-১৬ কোটি টাকা
পিরোজপুরের শত বছরের ঐতিহ্য ভাসমান নৌকার হাটে বেচাকেনা হয় হরেকরকমের নৌকা/ছবি-জাগো নিউজ
পানিতে ভাসমান সারি সারি নৌকা। আকার ও রঙে রয়েছে ভিন্নতা। হরেকরকমের এসব নৌকা বেচাকেনা চলছে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। প্রথম দেখায় এমন দৃশ্য মুগ্ধ করবে যে কাউকে।
পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানায় শত বছরের ঐতিহ্য ভাসমান নৌকার হাট। বেচাকেনা হয় হরেকরকমের নৌকা। প্রতি মৌসুমে ১৫-১৬ কোটি টাকার নৌকা বিক্রি হয় এই হাটে।
বছরে একবার ব্যবহার উপযোগী নৌকা কিনতে ভাসমান এই হাটে ভিড় জমান ক্রেতারা। ঘাস কাটা, মাছ ধরা, পেয়ারা, আমড়া পাড়ার প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার উপযোগী নৌকা কিনতে আসেন বরিশাল, বাকেরগঞ্জ, ঝালকাঠি, নলছিটি, বানারীপাড়া, নাজিরপুর, গোপালগঞ্জ, বৈরাকাটা, কাঠালিয়া, রাজাপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ।

বছরের আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র—এই তিন মাস জমে ওঠে ভাসমান নৌকার হাট। সপ্তাহের সোম ও শুক্রবার ভাসমান এই নৌকার হাটের দেখা মেলে। তবে সপ্তাহের শুক্রবারে পুরোপুরি জমে ওঠে ভাসমান নৌকার হাট। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকের ভিড় লক্ষ্য করার পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকেরও আগমন ঘটে এই হাটে।
‘ভাসমান নৌকার হাট শত বছরের পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী। প্রতিহাটে ২০০-২৫০ নৌকা বিক্রি হয়। আর প্রতি মৌসুমে বিক্রি হয় ১৫-১৬ কোটি টাকার নৌকা।’
নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুরিয়ানায় ভাসমান নৌকার হাটে সরেজমিনে দেখা যায়, সকালে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শাপলা ফুলের মতো ফুটে আছে সারি সারি নৌকা। আটঘর খাল থেকে ট্রলার কিংবা ইঞ্জিনচালিত কোনো নৌকা ভাসমান হাটের গা ঘেঁষে যাওয়ার পরে সূর্যমুখী ফুলের মতো দুলতে থাকে নৌকাগুলো। কখনো বৃষ্টিতে ভিজে আবার কখনো রোদে পুড়ে বেচাকেনা হয় নৌকা।
- আরও পড়ুন:
- ব্যয় ১২ কোটি, সুফল ‘ছিটেফোঁটা’
- স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড সিস্টেম চালু হলে উপকূলীয় কৃষির ক্ষতি কমবে
- অপরাধী ধরা পড়লেও থামছে না অপরাধ
- কাগজপত্র ঠিক থাকলেও দিতে হয় ঘুস
শত বছরের পুরোনো ভাসমান নৌকার হাট দেখতে আসা শফিক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিবছর এই সময়টাতে ঘুরতে আসি। দূর-দূরান্ত থেকে অনেক দর্শনার্থী ভিড় করেন। দেখতে ভালো লাগে।’

কথা হয় বিক্রেতাদের একজন হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, প্রতি হাটে ২০০-৩০০ নৌকা বিক্রি হয়। বরিশাল, ঝালকাঠির রাজাপুর, উজিরপুরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে নৌকা কিনতে আসেন ক্রেতারা। এখানে বসার জায়গা নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি বসার কোনো ব্যবস্থা করে দিতে তাহলে বিক্রেতাদের বৃষ্টিতে ভিজতে হতো না।
নারায়ণপুর থেকে নৌকা কিনতে এসেছেন ওয়াহেজ উদ্দিন হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘এই নৌকা আমাদের সংসারের কাজে ব্যবহার করা হবে। তিন হাজার ২০০ টাকায় নৌকা কিনেছি। খাজনা দিয়েছি ৩২০ টাকা।’
‘প্রতি হাটে ২০০-৩০০ নৌকা বিক্রি হয়। বরিশাল, ঝালকাঠির রাজাপুর, উজিরপুরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে নৌকা কিনতে আসেন ক্রেতারা। এখানে বসার জায়গা নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি বসার কোনো ব্যবস্থা করে দিতে তাহলে বিক্রেতাদের বৃষ্টিতে ভিজতে হতো না।’
নৌকা বিক্রেতা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘বিক্রির জন্য ২৫টি নৌকা নিয়ে এসেছি। আজ বেচাকেনা কম হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯টি নৌকা বিক্রি করতে পেরেছি। তুলনামূলকভাবে এখন নৌকার দাম কম।’

তিনি জানান, দুই হাজার ৫০০ থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকায় নৌকা বিক্রি হয়। এই নৌকা মানুষ পেয়ারা পাড়া, মাছ ধরাসহ নানা কাজে ব্যবহার করে।
বাকেরগঞ্জ থেকে আসা আশরাফ আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘নৌকা কিনতে এসেছি। পছন্দ ও দামে মিললে কিনবো। গরুর ঘাস কাটা, হাট-বাজারে যাওয়াসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করবো।’
- আরও পড়ুন:
- তিস্তা সেতুতে খুলবে উন্নয়নের দ্বার
- ইতালি যেতে গিয়ে নিখোঁজ ওরা, নিঃস্ব পরিবার
- বিএনপিপন্থি শিক্ষকের রেফারেন্সে জাসদ ছাত্রলীগ নেতাকে নিয়োগ
বিক্রেতা রুস্তম আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘নৌকার হাটটি শত বছরের পুরোনো। অনেক বছর ধরে নৌকা বিক্রি করতে আসি। এই নৌকাগুলো তৈরি করা হয় নেছারাবাদ উপজেলার ডুবি ও চামী গ্রামে। প্রতিটি নৌকা পাইকারি ধরে কিনে আনি দুই হাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে। কাঠভেদে নৌকার দাম নির্ধারণ হয়। নৌকাপ্রতি ৫০০ থেকে হাজার টাকা লাভ থাকে। কেনার ওপরে নির্ভর করে কত টাকা লাভ হবে।’

ভাসমান নৌকার হাটের ইজারাদার আবুল বাশার। তিনি বলেন, ভাসমান নৌকার হাট শত বছরের পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী। প্রতিহাটে ২০০-২৫০ নৌকা বিক্রি হয়। আর প্রতি মৌসুমে বিক্রি হয় ১৫-১৬ কোটি টাকার নৌকা।
সমস্যার কথা জানিয়ে আবুল বাশার বলেন, বসার কোনো জায়গা নেই। খাজনা আদায় করতে হয় বৃষ্টিতে ভিজে। এই মৌসুমে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়। তাই উপজেলা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আমাদের একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক; যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই বসতে পারবেন।
এ বিষয়ে নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, ভাসমান নৌকার হাটটি শত বছরের পুরোনো। নৌকা বেচাকেনার পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকরাও এখানে ঘুরতে আসেন। আমরা চাই এটি আরও সমৃদ্ধ হোক।

তিনি বলেন, যারা এখানে আসেন তাদের সুযোগ-সুবিধার কথা আমরা ভাবছি। কীভাবে তাদের জন্য আরও ভালো ব্যবস্থা করা যায়, অন্যান্য বিষয়গুলো কীভাবে আরও বেশি উন্নত করা যায়; সেসব চিন্তা আমাদের রয়েছে।
এসআর/এএসএম
সর্বশেষ - দেশজুড়ে
- ১ ঠাকুরগাঁওয়ে সারের ডিলারশিপ বাঁচাতে পদ ছাড়লেন ইউপি চেয়ারম্যান
- ২ ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ মনোনয়ন না পাওয়া দুই নেতার সমর্থকদের
- ৩ খুলনায় বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে গণমিছিল
- ৪ ১৫ বছরে দেশ থেকে সাড়ে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে: শিবির সভাপতি
- ৫ মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ