৫৪ বছরের ঘাটপ্রথা অবসানের অপেক্ষায় চর আষাড়িয়াদহবাসী
ঘাটপ্রথা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে চরবাসী
দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে নিজেদের নৌকায় করে ঘাট পারাপার হচ্ছেন রাজশাহীর চর আষাড়িয়াদহবাসী। তারপরও ঘাটে ঘাটে দিতে হতো টাকা। এই প্রথা বাতিলের দাবিতে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন চরবাসী। এই আন্দোলনের ফলে ৫৪ বছর পর ঘাটপ্রথা বাতিলের আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। এতে খুশি চরবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চর আষাড়িয়াদহ ঘাটের ইজারা দিয়ে আসছিল রাজশাহী জেলা প্রশাসন। ঘাট ইজারার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হতো। কিন্তু সরকারি ইজারামূল্য বেশি হওয়ায় কেউ ঘাট নিতেন না। পরে স্থানীয়ভাবে কয়েকজনকে ২৮ দিনের জন্য দেড় লাখ টাকায় ঘাটটি ইজারা দেওয়া হয়। মাত্র কয়েকদিন তারা ঘাট পরিচালনা করেন। তবে পারাপারের জন্য প্রশাসন যে ভাড়া নির্ধারণ করে দেয় তা তারা মানছিলেন না। তারা অতিরিক্ত টাকা আদায় করে আসছিলেন। এ নিয়ে দীর্ঘ আন্দোলনের পর তিন মাসের জন্য প্রশাসন থেকে ঘাটের ইজারা বাতিল করা হয়। গঠন করা হয় একটি তদন্ত কমিটি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সরেজমিন চরবাসীর সঙ্গে কথা বলতে চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে এসেছিল রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিনিধি দল। এসময় চরবাসী ঘাটপ্রথা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়েছিলেন।

তারা জানান, তাদের এই ঘাট ছাড়া চলাচলের বিকল্প কোনো পথ নেই। কিছুদিন আগে ঘাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। ইজারাদারেরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। একজন মানুষ নৌকা দিয়ে পার হলে সরকার নির্ধারিত টোল পাঁচ টাকার জায়গায় ২০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। এতে এলাকাবাসী পড়েছেন বিপাকে। তবে সম্প্রতি তিন মাস ধরে ইজারাদারেরা না থাকায় তারা বেশ স্বস্তিতে আছেন। তাই তারা এই ঘাট ইজারা প্রথা বাতিল চান।
চরের বাসিন্দা আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, ঘাটমালিকদের কাছে তারা জিম্মি। জেলা পরিষদ থেকে নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা টানিয়ে দেওয়া হলেও তারা সেটি মানছেন না। জোর করে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। তারা অতিরিক্ত টাকা দিতে চান না। এটি বন্ধ করতে হবে। না হলে অচিরেই আমরা আন্দোলনে যাবো।

চরবাসীর উদ্দেশে রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশন হাবিবুর রহমান বলেন, ঘাটের ইজারা বাতিল বা ঘাট পারাপারের যে ভোগান্তিগুলো তুলে ধরলেন, সেই ভোগান্তি লাঘবে আমরা চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে সুপারিশ করবো। আপনারা অপেক্ষা করুন। অবশ্যই আমরা আপনাদের পাশে আছি। আমরাও স্থানীয় সরকার প্রশাসন থেকে কীভাবে এই ঘাটের ইজারা বাতিল করতে পারি সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
এসময় রাজশাহীর স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মো. জাকিউল ইসলাম, জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মু. রেজা হাসান, গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সাখাওয়াত হোসেন/এসআর/জেআইএম