রোগমুক্তির আশা, ইমামের তেল-পানি পড়া নিতে মানুষের ভিড়
তেল-পানি পড়া নিতে মানুষের ভিড়
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার চেউখালি গ্রাম। শুক্রবার এলেই এই গ্রামে ভিড় করেন হাজারও নারী-পুরুষ। সবার হাতে কাচের বোতল। কারও বোতলে রয়েছে পানি আবার কারও বোতলে তেল।
তাদের বিশ্বাস, স্থানীয় ইমাম জাহিদুল ইসলাম বোতলে দোয়া পড়ে ফু দিলেই সারবে অসুখ। এ কারণে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন মানুষ। ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে অনেককে।
চেউখালি গ্রামের বাসিন্দারা জানান, জাহিদুল ইসলাম অনেক দিন ধরেই সুস্থতার জন্য তেল-পানিতে ‘ফুঁ’ দেন। কারও কারও উপকার হয়েছে—এমন বিশ্বাস থেকে লোকজনের মধ্যে বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। গত তিন মাস ধরে প্রতি শুক্রবার সেখানে হাজারও মানুষের ভিড় দেখা যায়।

শুক্রবার (১ আগস্ট) বিকেলে চেঁউখালি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের প্রবেশমুখে যানজট। শত শত রিকশা, ভ্যান ও অটোরিকশায় করে যাচ্ছেন অসংখ্য নারী-পুরুষ। সবার হাতেই তেল-পানির কাচের বোতল। তারা চেষ্টা করছিলেন ইমামের সঙ্গে কথা বলতে। চারপাশে হই হুল্লোর চেঁচামেচি ও টেলাঠেলিতে সরগরম অবস্থা। হুজুরের ফুঁয়ের জন্য আগত লোকজনদের জন্য বসেছে দোকানপাট। বিক্রি হচ্ছে কাচের বোতল ও তেল। চায়ের দোকনগুলোতে অনেক ভিড়।
সেখানে কথা হয় শহিদুল ইসলাম নামে এক বৃদ্ধের সাথে। তিনি জানান, হুজুর ফুঁ দিলে অসুখ সারে—এমন বিশ্বাস নিয়ে তিনি নওগাঁ থেকে এসেছেন। তার নাতনি হাতে-পায়ে বল পায় না। তেল মাখিয়ে যদি সে সেরে ওঠে, এ কারণেই তার আসা।
রাজশাহীর বাঘা থেকে আসা ছাবিহা বেগম বলেন, তার পেটে ব্যথা। অনেক ওষুধ খেয়েছেন কিন্তু সুস্থ হননি। তাই হুজুরের পানি পড়া পান করে সুস্থ হওয়ার আশায় এসেছেন।
শরিফুল ইসলাম নামের আরেকজন জানান, তিনি এর আগে তেল পড়া নিয়েছিলেন। কাজ হয়নি। এবার আবার এসেছন যদি পানি পান করে সুস্থ হন সে আশায়।

তবে নলডাঙ্গা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব ফজলুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ ধরনের চর্চা এর আগেও আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখেছি। কোনো স্থানেই এই চর্চা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি প্রতারণা বলেই প্রমাণিত হয়েছে। নলডাঙ্গাতেও এর ব্যতিক্রম কিছু ঘটবে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চেউখালী গ্রামের একজন বাসিন্দা জানান, তারা এই বিষয়টিকে বিশ্বাস করেন না। তারা এটার প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ হুজুরের পক্ষে থাকায় তারা কিছু করতে পারছেন না। বিষয়টি নিয়ে গ্রামে অশান্তি ও সালিশের ঘটনাও ঘটেছে। ফেসবুকে এ ধরনের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে নাটোরের সিভিল সার্জন মোহাম্মাদ মুক্তাদির আরেফীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সম্প্রতি ঘটনাটি শুনেছি। স্বাস্থ্যকর্মীদের পাঠিয়ে আরও নিশ্চিত হতে হবে। মানুষ যেন প্রতারিত না হন, সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে।’
চেউখালী মসজিদের পেশ ইমাম জাহিদুল ইসলাম বলেন, “আমি কাউকে তেল-পানি পড়িয়ে নেওয়ার জন্য দাওয়াত দিই না। টাকাও নিই না। যারা আল্লাহর কালাম বিশ্বাস করেন, তারা আমার কাছে আসেন। আমি আল্লাহর কালাম পড়ে তেল-পানিতে ‘ফুঁ’ দিয়ে দিই।’ কেউ আরোগ্য হন কেউ হন না। এটা আল্লাহর ইচ্ছা।”
রেজাউল করিম রেজা/এসআর/জেআইএম