ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

রোহিঙ্গাদের দুঃখগাথা শুনলেন বিশ্ব প্রতিনিধিরা

সায়ীদ আলমগীর | কক্সবাজার | প্রকাশিত: ১১:৪১ এএম, ২৭ আগস্ট ২০২৫

রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করতে কক্সবাজারে চলা তিনদিনের সংলাপ আশ্রয়শিবির পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। সংলাপে অংশ নেওয়ারা ক্যাম্পে যাবেন, এ পূর্ব ঘোষণার কারণে প্রতিদিনের চেয়ে দিনটিতে বেশি ছিল আন্তর্জাতিক মনোযোগ।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে মধুরছড়া চেকপোস্ট দিয়ে প্রবেশ করেন বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক নেতাদের একটি বড় প্রতিনিধি দল। তারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ক্যাম্পের বিভিন্ন কার্যক্রম ঘুরে দেখেন, কথা বলেন শরণার্থীদের সঙ্গে, শোনেন তাদের দীর্ঘ আট বছরের দুঃখগাথা।

মূলত এ সফর ছিল ‘স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ: টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’- সংলাপের অংশ। কক্সবাজারে চলা তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনে ৪০টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। আর সেই সম্মেলনের সমাপ্তি হয় রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফরের মধ্য দিয়ে।

প্রথম দলের নেতৃত্বে ছিলেন ফিনল্যান্ড, রাশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার কূটনীতিকরা। ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপ-প্রতিনিধি ড. রাজেশ নারওয়াল, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের উপ-মহাপরিচালক সোনা শ্রেষ্ঠা, মানবাধিকার সংস্থা ফোর্টিফাই রাইটসের জন কুইনলি, আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল কাউন্সিলের নেতা নায় সান লুইন, আবুল কালাম ও খায়রুল আমিনসহ আরও অনেকে।

তাদের সফরসূচি শুরু হয় ক্যাম্প-৪ এর এ/১১ ব্লকের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) পরিচালিত ই-ভাউচার শপ থেকে। এখানে তারা প্রত্যক্ষ করেন কীভাবে শরণার্থীরা নির্ধারিত কুপনের মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করেন। পরে যান ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশনের সি/১ ব্লকে। সেখানকার প্রোডাকশন সেন্টার ও লাইভলিহুড স্কিল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং সেন্টার ঘুরে দেখেন। শরণার্থী নারীরা হাতে তৈরি হস্তশিল্প দেখান, আর কর্মকর্তারা জানান এই প্রশিক্ষণ কীভাবে তাদের জীবনে নতুন আশার আলো জাগাচ্ছে। সফরের শেষ ধাপ ছিল বালুখালী ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল। সেখানে চিকিৎসা সেবার কার্যক্রম দেখানো হয় প্রতিনিধি দলকে। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে তারা কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন।

অন্যদিকে দ্বিতীয় দলে ছিলেন মিজিমা মিডিয়া গ্রুপের আং নিউ লিন, থাই দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স সুপাওয়াদে ওয়ংসাওয়াসদি, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডোমেনিকো স্কালপেল্লি, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ফরহাদুল ইসলাম, নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের মন্ত্রী ফারিদা ইয়াসমিন, মালয়েশিয়ান উপদেষ্টা লিলিয়ান ফ্যানসহ একাধিক আঞ্চলিক সংগঠনের প্রতিনিধি।

রোহিঙ্গাদের দুঃখগাঁথা শুনলেন বিশ্ব প্রতিনিধিরা

তারা সফর শুরু করেন বালুখালী ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল থেকে। এরপর যান ক্যাম্প-৪ এর ই-ভাউচার শপে এবং ঘুরে দেখেন একই প্রোডাকশন সেন্টার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে তারা কক্সবাজার ফিরে আসেন। সফর জুড়ে দুই দলকেই কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে রেখেছিল পুলিশ। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

এই সফরে কূটনীতিকরা শুধু প্রকল্প পরিদর্শনই করেননি, দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছেন নারী-পুরুষ শরণার্থীদের সঙ্গে। তারা শুনেছেন মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা মানুষগুলোর বেঁচে থাকার লড়াইয়ের কথা। শরণার্থীরা বলেছেন খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার সংকটের কথা এবং নিজের দেশে ফেরার আকুতির কথা।

ক্যাম্প সফর শেষে প্রতিনিধিরা স্বীকার করেছেন, দীর্ঘ আট বছর ধরে মানবিক সহায়তায় টিকে থাকা এই বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরও বাড়াতে হবে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর পাশাপাশি আঞ্চলিক দেশগুলোতেও দায়িত্ব ভাগাভাগি করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

একইসঙ্গে শরণার্থী ক্যাম্প সফর তাদের চোখে নতুন করে উন্মোচন করেছে যে বাস্তবতা- তা হলো, সংকট যতই দীর্ঘায়িত হচ্ছে, ততই শরণার্থীদের হতাশা বাড়ছে, আর সেইসঙ্গে বাড়ছে বাংলাদেশের কাঁধে চাপ। এই বার্তাই তারা বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আগামীতে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি ও চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিতে গিয়ে কক্সবাজারবাসী আজ চরম সংকটে। এদের কারণে মাদক, সংঘাতসহ সীমান্ত শহরের নানামুখী সংকট রাষ্ট্রকেও ভোগাচ্ছে। এ সংকটের টেকসই সমাধানে সহযোগিতা জোরদারে তিন দিনব্যাপী সংলাপ হয়েছে। বাস্তবতা উপলব্দি করেছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। তাদের প্রস্তাবনার ভিত্তিতে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন হলেই রোহিঙ্গা সংকট দূরিভূত হবে বলে আশা করা যায়। এতেই সংলাপের সফলতা উঠে আসবে।

এফএ/জেআইএম