ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

কলাগাছের আঁশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিন

আরমান খান | প্রকাশিত: ০১:৪৪ পিএম, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

স্বাস্থ্যসম্মত, পরিবেশবান্ধব ও উচ্চ শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন স্যানিটারি ন্যাপকিন ‘প্রকৃতি’ তৈরি হচ্ছে রাঙ্গামাটিতে। দেশে প্রথমবারের মতো কলাগাছের তন্তু প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করা হচ্ছে এই ন্যাপকিন। নারীদের অতিপ্রয়োজনীয় এই ন্যাপকিনের বিশেষত্ব হচ্ছে এটি পুনর্ব্যবহার যোগ্য।

ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগের পরিকল্পনাকারী একজন নারী উন্নয়নকর্মী। সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে রাঙামাটিতে এই স্যানিটারি ন্যাপকিনের একটি প্রদর্শনীও সম্পন্ন হয়েছে।

পাহাড়ে কলাগাছের আঁশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে সেনিটারি ন্যাপকিন

নাইউ প্রু মারমা মেরী নামের এই উন্নয়নকর্মীর হাত ধরেই রাঙ্গামাটিতে সফলভাবে উৎপাদন শুরু হয়েছে পরিবেশবান্ধব পুনর্ব্যবহারযোগ্য স্যানিটারি ন্যাপকিনের। ভারতের আহামেদাবাদে স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ পরিদর্শনে গিয়ে এই প্রযুক্তির সন্ধান পান তিনি।

নাইউ প্রু মারমা মেরী বলেন, উন্নয়নকর্মী হিসেবে পৃথিবীর অনেক দেশে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। তবে ভারতের আহামেদাবাদে গিয়ে জানতে পারি সেখানকার নারীরা কলাগাছের তন্তু থেকে সুতা তৈরি করে স্যানিটারি ন্যাপকিন উৎপাদন করছে। যা সেখানকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারীরা সহজে ব্যবহার করতে পারছে। আমি তখন থেকেই ভেবেছি রাঙ্গামাটিসহ পার্বত্য অঞ্চলে এমন একটা উদ্যোগ নিতে পারলে এখানকার প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নারীদের খুব উপকার হবে। সেই ভাবনা থেকে দাতা সংস্থা আরএসএফ সোশ্যাল ফাইন্যান্সের সহযোগিতায় আমার সংস্থা উইভ (উমেনস এডুকেশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট) এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে।

সরেজমিনে উন্নয়ন সংস্থা উইভ’র কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি কক্ষে ন্যাপকিন তৈরির কাজ চলছে। বেশ কয়েকজন নারী কর্মী এই ন্যাপকিন উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। কক্ষের সেলফে কলাগাছ থেকে তৈরি সুতার স্তূপ। কোনো সেলফে রাখা হয়েছে কাপড় ও তৈরি করা ন্যাপকিন। পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়া তদারকি করছেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক নাইউ প্রু মারমা মেরী।

কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ন্যাপকিন তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে বেশ কয়েকটি ধাপে কাজ করতে হয়। প্রথমে কলাগাছ থেকে মেশিনের মাধ্যমে এর আঁশ বা সুতা বের করা হয়। পরে সেই আঁশকে কিছু প্লেটের মাধ্যমে একটা কটন স্তর তৈরি করা হয় যা ন্যাপকিনের মূল উপাদান। এরপর কটন স্তরগুলো রোদে শুকিয়ে ন্যাপকিন তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। সঙ্গে ক্যানভাস কাপড় ও পানিরোধক কাপড় দিয়ে সেলাই করে তৈরি করা হয় ন্যাপকিন। এরপর জীবানুমুক্ত করতে ইউভি (আলট্রা ভায়োলেট) মেশিনের ব্যবহার করা হয়। সবশেষে ন্যাপকিনগুলো প্যাকেটজাত করা হয়। কাগজের তৈরি প্রতিটি প্যাকেটে ৮টি করে স্যানিটারি ন্যাপকিন থাকে। যা পরিবেশবান্ধব ও পুনর্ব্যবহার যোগ্য।

পাহাড়ে কলাগাছের আঁশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে সেনিটারি ন্যাপকিন

উইভ কর্তৃপক্ষ জানায়, পণ্যটি বাজারে ছাড়তে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। শিগগিরই অনুমোদন পাওয়া যাবে। অনুমোদন পেলে বাজারজাত শুরু হবে। প্যাকেটের গায়ে ব্যবহার পদ্ধতি, ব্যবহারের পর করণীয় এবং এর উপাদান সমূহের বিবরণ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেওয়া আছে।

উইভের নির্বাহী পরিচালক নাইউ প্রু মারমা মেরী বলেন, এটি একটি প্রকল্প ভিত্তিক উদ্যোগ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাঁচ হাজার কিশোরী ও নারীকে বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়া হবে। এরইমধ্যে বিতরণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্প শেষে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের। তবে আমরা চেষ্টা করছি এর দাম যাতে পাহাড়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নাগালের মধ্যে থাকে।

এফএ/জিকেএস