ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

শরীয়তপুরে নজর কেড়েছে ধান দিয়ে তৈরি প্রতিমা

জেলা প্রতিনিধি | শরীয়তপুর | প্রকাশিত: ০৪:১৭ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দিনরাত এক করে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। খুব সূক্ষ্মভাবে প্রতিমার গায়ে ধাপে ধাপে এক একটি করে বসানো হচ্ছে সোনালি ধান। চিরাচরিত রঙের কাজ বাদ দিয়ে আকর্ষণীয় ধানের প্রতিমা তৈরি হচ্ছে শরীয়তপুরের নড়িয়ার ভোজেশ্বর এলাকার ঘোষপাড়া সার্বজনীন দূর্গা মণ্ডপে। মৃৎশিল্পীর হাতে এমন দারুণ কারুকার্যখচিত প্রতিমা এরইমধ্যে নজর কেড়েছে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের। ধান দিয়ে শৈল্পিক কারুকার্যখচিত এমন প্রতিমা এর আগে দেখেননি স্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের কয়েকটি জেলার ব্যয়বহুল ও জমজমাট দূর্গাপূজার মধ্যে শরীয়তপুরের দূর্গাপূজা অন্যতম। পূজা উপলক্ষে জেলার শতাধিক স্থায়ী ও অস্থায়ী মণ্ডপগুলোকে আকর্ষণীয় করে তুলতে প্রতিমার কারুকার্যের পাশাপাশি ঢেলে সাজানো হয় বর্ণাঢ্য আলোকসজ্জায়। ২৮ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে জেলায় এ বছর ১০১টি মন্দির ও মণ্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। মণ্ডপগুলোর মধ্যে নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের ঘোষপাড়া শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ ধাম দূর্গা মন্দিরে প্রতিমা বানানো হচ্ছে সোনালি ধান দিয়ে। ৮ ফুট উচ্চতার এই প্রতিমাটি গড়তে ধান লাগবে প্রায় এক মণ। প্রতিমাটি গড়া হচ্ছ দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে। বর্তমানে প্রতিমার গায়ে ধান বসানোর কাজ চলছে।

শরীয়তপুরে নজর কেড়েছে ধান দিয়ে তৈরি প্রতিমা

ঘোষপাড়া শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ ধাম দূর্গা মন্দিরে পাঁচজন প্রতিমা শিল্পী নিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন খুলনার পাইকগাছা এলাকা থেকে আসা প্রধান শিল্পী রাজিব সরদার। দীর্ঘ চার বছর ধরে এই মন্দিরেই দূর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছেন। এবছর দূর্গাপূজার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে এই ধানের প্রতিমা গড়ার কাজ করছেন তিনি।

প্রধান প্রতিমা শিল্পী রাজিব সরদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘মা দূর্গার কৃপায় ২৫ বছর ধরে প্রতিমা গড়ার কাজ করছি। চার বছর ধরে শরীয়তপুরের ঘোষবাড়িতে প্রতিমা বানাচ্ছি। আমরা সব সময় মাটি আর রঙ তুলির আচরে প্রতিমা বানালেও এবছর বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ধান দিয়ে প্রতিমা বানাচ্ছি। যা এই অঞ্চলে এর আগে কেউ বানায়নি।’

শরীয়তপুরে নজর কেড়েছে ধান দিয়ে তৈরি প্রতিমা

তিনি বলেন, ‘কাজটি যদিও অনেক কষ্টসাধ্য, তবে এটি দেখতে খুবই দৃষ্টিনন্দন। আশা করছি, আমার গড়া প্রতিমাটি এবছর দেশের মধ্যে সেরা প্রতিমা হবে।’

প্রতিমা শিল্পী সবুজ মণ্ডল বলেন, ‘ধান দিয়ে প্রতিমা করার কাজটি সময়সাপেক্ষ। হাতে ধান নিয়ে একটা একটা করে প্রতিমার গায়ে বসাতে হয়। কোনোভাবে ধানটি নড়ে গেলে সেটিকে আবার ঠিক করে বসাতে হয়। আমরা দিনরাত এক করে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি, কয়েকদিনের মধ্যেই প্রতিমাটিতে ধান বসানোর কাজ শেষ করতে পারবো।’

ধান দিয়ে প্রতিমা বানানো হচ্ছে খবর পেয়ে বন্ধুবান্ধব নিয়ে দেখতে এসেছেন সূর্য। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর বিভিন্ন মণ্ডপে প্রতিমা গড়ার কাজ দেখতে আসি। এবার ঘোষবাড়ি মন্দিরে এসে দেখতে পেলাম ধানের প্রতিমা বানানো হচ্ছে। দেখতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে।’

শরীয়তপুরে নজর কেড়েছে ধান দিয়ে তৈরি প্রতিমা

মন্দির কমিটির সভাপতি গোপাল ঘোষ বলেন, ‘আমরা সবসময় আমাদের মন্দিরে ব্যতিক্রমী কিছু করার চেষ্টা করতাম। এবছর ধানের প্রতিমা নির্মাণ করা হচ্ছে, যা এর আগে ফরিদপুর অঞ্চলে বানানো হয়নি। আমরা আশা করছি, এবছর ধানের প্রতিমা দেখতে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম ঘটবে।’

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ শরীয়তপুর জেলার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ ঘোষ বলেন, এবছর আমাদের জেলায় ১০১টি মণ্ডপে মা দূর্গার পূজা উদযাপিত হবে। আশা করছি, খুব সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

বিধান মজুমদার অনি/এসআর/এমএস