ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

একমাত্র জনবল একজন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান সপ্তাহে একদিন

এম মাঈন উদ্দিন | প্রকাশিত: ০২:৩১ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ঘড়ির কাঁটা দুপুর ১২টা ছুঁই ছুঁই। তখনও বন্ধ চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ওয়াহেদপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। প্রায় সময় বন্ধ থাকে প্রান্তিক মানুষের জন্য প্রতিষ্ঠিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। দায়িত্বে থাকা একমাত্র ভিজিটর আসেন সপ্তাহে তিনদিন। এছাড়া এখানে জনবল হিসেবে একজন মাত্র চিকিৎসক নিয়োগ থাকলেও তিনি ডিউটি করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডিউটি করেন সপ্তাহে একদিন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ ছোট কমলদহ বাজারে অবস্থিত ওয়াহেদপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। তবে লোকবল ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা খুবই নাজুক। আসেন না চিকিৎসক। মাতৃ ও শিশু সেবার জন্য ভিজিটর নিয়োগ থাকলেও নেই ওষুধ এবং সরঞ্জাম। মৃতপ্রায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে চরম হতাশ এলাকাবাসী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালে চিকিৎসক এবং সহকারীর রুমে তালা ঝুলছে। নেই কোনো ফার্মাসিস্ট। রোগী বসার ওয়েটিং রুমও ফাঁকা। রোগী শোয়ানোর চৌকি ধুলোবালিতে ঢাকা।

হাসপাতালের বাইরে ঘুরতে থাকা খাজুরিয়া গ্রামের সাবিনা আক্তার (৪২) ও বড় কমলদহের আবুল বাশার (৫০) বলেন, আমরা রোগী নিয়ে অনেকক্ষণ ডাক্তারের অপেক্ষায় বসেছিলাম। ডাক্তার আসবে না জানার পর চলে যাচ্ছি।

এলাকার বাসিন্দা নুরুল আবছার বলেন, এখানে নিয়মিত কোনো ডাক্তার আসেন না, দূর-দূরান্ত থেকে অনেক রোগী এসে হতাশ হয়ে চলে যায়। অথচ একটা সময় এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি এখানকার মানুষের আস্থার প্রতীক ছিল। প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। তদারকির অভাবে এটি এখন প্রায় অচল।

জানা গেছে, এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কিশোর কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা, নারীদের গর্ভকালীন এবং প্রসব পরবর্তী সেবা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা এবং শিশুদের টিকা প্রদানের জন্য পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা থাকার কথা থাকলেও নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো সেবা প্রদানকারী নেই। সপ্তাহে তিন দিন কমরআলী সাব সেন্টার থেকে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা সীতা রানী দে অতিরিক্ত দায়িত্বে এসে সেবা প্রদান করেন।

আরও পড়ুন-
‘সারাদিন মানুষের ক্ষোভের কথা শুনছি, ওরস্যালাইনও নেই যে দেবো’
স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত চরবেষ্টিত ৭ ইউনিয়নের লাখো মানুষ
কর্মীদের বেতন বন্ধ ৭ মাস, কবে পাবেন জানেন না কেউ

সীতা রানী দে বলেন, আমি সপ্তাহে তিনদিন গর্ভকালীন ও পরবর্তী সেবা, কিশোর কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা, পরিবার পরিকল্পনার যাবতীয় সেবা এবং শূন্য থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি।

ওয়াহেদপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডা. মৌমিতা রায় নামের একজন নিয়োগপ্রাপ্ত এমবিবিএস চিকিৎসক রয়েছেন। তিনি সপ্তাহে তিন দিন আসার কথা থাকলে আসেন একদিন। কোনো সপ্তাহে আবার আসেনই না।

ওয়াহেদপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়োগপ্রাপ্ত একমাত্র চিকিৎসক ডা. মৌমিতা রায় বলেন, প্রতিমাসে ৪ থেকে ৫ দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে আমাকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এছাড়া অন্য সময় হাসপাতালের আউটডোরে ডিউটি থাকে। আজও ৪০ জন রোগী দেখেছি। সপ্তাহে একদিন ওয়াহেদপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে ডিউটি করে থাকি। একেবারে যাই না, কথাটি সত্য নয়। সেখানে অনেক পদে লোকবল সঙ্কট। আমার একার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব হয় না।

পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের সুপারভাইজার ইয়াসির আকরাম সাকিব বলেন, এখানে নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ না থাকার ফলে সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

মিরসরাই উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, লোকবল সঙ্কটের কারণে নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো ভিজিটর এই সাবসেন্টারে নেই। কমরআলী সাব সেন্টার থেকে এসে সপ্তাহে তিন দিন এখানে ডিউটি করে থাকেন।

তিনি আরও জানান, ১৩টি সাব সেন্টারের মধ্যে নিয়মিত নিয়োগপ্রাপ্ত ভিজিটর আছেন মাত্র ৬ জন। এছাড়া পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরঞ্জামাদি নেই বলেও স্বীকার করেন তিনি। তবে নতুন অর্থবছরে এর সংকট কাটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মিনহাজ উদ্দিন বলেন, এখানে একজন ডাক্তার, একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন ঝাড়ুদার নিয়োগ থাকার কথা থাকলেও কাগজে-কলমে একজন ডাক্তার ছাড়া আর কোনো জনবল নেই। নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তারকেও আবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত ডিউটি করতে হয়। তারপরও সপ্তাহে ২/১ দিন এখানে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন ওই ডাক্তার। জনবল সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

এফএ/এএসএম