নতুন সংকটে বান্দরবানের পর্যটন শিল্প
বান্দরবানের মানোরম পর্যটন স্পট
পর্যটন শিল্পের অনন্য এক নাম বান্দরবান। পর্যটন মৌসুম ছাড়াও প্রায় সারাবছর দর্শনার্থীরা ছুটেন এ জেলায়। এখানকার নীলগিরি, নীলাচল, বগালেক, থানচি, রাইখিয়াং ও রুমা ভ্রমণ পিপাসুদের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে। প্রতি বছর এসব বিনোদন স্পটে হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক ভিড় জমায়। এখানকার হোটেল-রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, গাইডিং সার্ভিস ও স্থানীয় হস্তশিল্প অর্থনীতিকে বদলে দিয়েছে। তবে কুকি-চিন সংকট ও জাতীয় নির্বাচন এ মৌসুমে পর্যটন শিল্পে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে কুকি-চিন সশস্ত্র গ্রুপ গঠিত হলেও ২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নাথান বম সেটি প্রকাশ করে। এর পর থেকে তারা রুমা-থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলার পরিস্থিতিকে নাজুক করে তুলেছিল। বিভিন্ন সময় সংঘর্ষ, নিহত, সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়। ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর থেকে ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন উপজেলায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর চলতি বছরের ৫ জুন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও ওই তিন উপজেলায় পর্যটকদের যাতায়াত সীমিত রেখেছে প্রশাসন। যার ফলে বান্দরবানের পর্যটন খাতটি বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়েছিল। এনিয়ে অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছেন বলে দাবি ব্যবসায়ী নেতাদের।
যৌথবাহিনীর বিভিন্ন সময় অভিযানের কারণে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় এ মৌসুমে ব্যাপক পর্যটকের সাড়া পেয়েছে আবাসিক প্রতিষ্ঠান গুলো। ফলে ব্যবসায়ীরা আগের ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন।

অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়েত ইসলামী। অন্য দলগুলো তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেনি। প্রার্থী ঘোষণা না করলেও বিএনপির নেতাকর্মীরা জেলাজুড়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশের মাধ্যমে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন
- যাতায়াত দুর্ভোগে ৪০ শতাংশ পর্যটক কমেছে সিলেটে
- পাহাড়-ঝরনার তীর্থস্থান মিরসরাইয়ে আবাসন সংকট
- পর্যটন শিল্প বিশ্বজুড়ে টেকসই উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি
বিশ্লেষকরা বলছেন, বান্দরবান পর্যটন শিল্প আরও বেগবান করতে হলে জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন প্রয়োজন। কুকি-চিন সংকটকে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান না করা গেলে নিরাপত্তাহীনতার ভীতি কাটানো সম্ভব হবে না। আর যদি পর্যটক না আসে তবে যত উন্নয়ন হোক সেটি কার্যকর হবে না।
বান্দরবান হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম জানান, গত পাঁচ বছর হোটেলের রুম ভাড়া বাড়ানো হয়নি। তবে নতুন যে হোটেল বা কটেজ হয়েছে সেগুলোর মান অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে তালিকা দেওয়া হয়েছে।

বান্দরবান মাইক্রোবাস, জিপ ও পিকাপ মালিক সমিতির লাইনম্যান কামাল হোসেন বলেন, ২০১৮ সালের দিকে তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দূরত্ব মোতাবেক ৫০০-১০০০ টাকা ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। এরপর থেকে আজও এ নিয়মে পর্যটকদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক মুজিবুর রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, আগামীতে দল ক্ষমতায় আসলে বান্দরবানের পর্যটন শিল্পকে বেগবান করতে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো। এছাড়া পর্যটন খাতের অন্যতম কুকি-চিন সমস্যাটি দীর্ঘ মেয়াদে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
বান্দরবান ট্যুরিস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বকতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটক আগমনের সম্ভাবনার তথ্য পেয়েছি। এসব পর্যটকের সার্বিক নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে দুর্গম এলাকার পর্যটন কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
নয়ন চক্রবর্তী/আরএইচ/জেআইএম