ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

একই উঠানে শতবর্ষের সম্প্রীতি: লালমনিরহাটে মসজিদ-মন্দির

জেলা প্রতিনিধি | লালমনিরহাট | প্রকাশিত: ০৭:০৪ এএম, ০১ অক্টোবর ২০২৫

‌‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু, মোসলমান। মুসলিম তার নয়ন, মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ’ এভাবেই লালমনিরহাটের মানুষ সাজিয়ে রেখেছেন ধর্মীয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত। সদর উপজেলার কালীবাড়ী এলাকায় একই উঠানে অবস্থিত পুরান বাজার জামে মসজিদ ও কালীবাড়ী কেন্দ্রীয় মন্দির যুগ যুগ ধরে এই সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণ বহন করছে।

স্থানীয়রা জানান, ১৮৩৬ সালে কালীবাড়ী মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই সময় বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মুসলিম ব্যবসায়ীরা নামাজের জন্য মন্দিরের পাশেই একটি ছোট ঘর নির্মাণ করে মসজিদ গড়ে তোলেন, যা বর্তমানে পরিচিত ‘পুরান বাজার জামে মসজিদ’ নামে। তখন থেকে আজও একই প্রাঙ্গণে চলছে দুই ধর্মের উপাসনালয়। পূজা শুরুর আগে মসজিদ ও মন্দিরের কমিটি বসে পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন। এ পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

jagonews24

এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবে জেলার ৪৬৯টি পূজা মণ্ডপের মধ্যে কালীবাড়ী কেন্দ্রীয় মন্দিরটি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছেন এই বিরল সম্প্রীতির নিদর্শন দেখতে। এমনকি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরাও এই মসজিদ-মন্দির পরিদর্শন করেছেন।

ধর্মীয় আচারে পারস্পরিক সহযোগিতার দৃষ্টান্তও উল্লেখযোগ্য। জানা গেছে, নামাজের আজান থেকে প্রথম জামাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্দিরের ঢাক-ঢোল ও মাইকসহ সব শব্দযন্ত্র বন্ধ রাখা হয়। নামাজ শেষে পূজা-অর্চনা স্বাভাবিকভাবে শুরু হয়। লালমনিরহাটের এই মসজিদ, মন্দির এখন শুধু ধর্মীয় উপাসনালয় নয় বরং ধর্মীয় সহাবস্থানের এক জীবন্ত পাঠশালা।

jagonews24

মন্দিরের প্রধান পুরোহিত শ্রী শংকর চন্দ্র বলেন, ১৮৩৬ সালে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান আমলে এর পাশে মসজিদ গড়ে ওঠে। মসজিদে নামাজ হয়, মন্দিরে পূজা চলে। আজান শুরু হলে আমরা ঢাক ঢোল থামিয়ে দিই, আবার নামাজ শেষে পূজা শুরু করি। উভয়েই মিলেমিশে একাকার হয়ে আছি। আমাদের আশা, পরবর্তী প্রজন্মও এই ঐতিহ্য ধরে রাখবে।

দর্শনার্থী শ্রী অজয় কুমার রায় জানান, ছোটবেলা থেকে দেখছি মসজিদ-মন্দির একই উঠানে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করেছে। যখন নামাজ হয় আমরা পূজার শব্দ বন্ধ রাখি। আবার পরে পূজা চলতে থাকে। এটি অন্যরকম এক অনুভূতি।

jagonews24

নামাজ শেষে এক মুসল্লি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি অন্য ধর্মের সঙ্গে দাঙ্গা-হাঙ্গামা করা যাবে না। ছোটবেলা থেকে দেখছি, পূজায় মুসলমানরা সহযোগিতা করে। ইনশাল্লাহ ভবিষ্যত প্রজন্মও এই সম্প্রীতিকে ধরে রাখবে।

মসজিদের ইমাম আলাউদ্দিন বলেন, এটি সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন। শত বছরের ঐতিহ্য এখানে। মসজিদে নামাজ হয়, মন্দিরে পূজা হয়। কোনো হিংসা নেই, কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমরা যার যার ধর্ম পালন করি এবং সব সময় সহযোগিতা করি।

মহসীন ইসলাম শাওন, লালমনিরহাট/এমআরএম