ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

গাইবান্ধায় ৮০ পয়সার অ্যানথ্রাক্সের ভ্যাকসিনের দাম ২০ টাকা

জেলা প্রতিনিধি | গাইবান্ধা | প্রকাশিত: ০৪:৫৭ পিএম, ০৪ অক্টোবর ২০২৫

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে গবাদিপশুর তড়কা রোগ (অ্যানথ্রাক্স) প্রতিরোধে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। আর এতে ভয় দেখিয়ে ৮০ পয়সার ভ্যাকসিন ২০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠছে। সে কারণে গবাদিপশুর মালিকদের অর্ধকোটি টাকা চলে যাচ্ছে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের পকেটে। এ দুঃসময়ে তারা সেবা দিতে আসেননি বরং এসেছেন টাকা লুটে নিতে দাবি গবাদিপশুর মালিকদের।

জানা গেছে, রংপুর জেলার পীরগাছা ঘেঁষে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা। অ্যানথ্রাক্স রোগে পীরগাছায় দুজন মারা গেছেন এবং আক্রান্ত আছেন সাত ব্যক্তি। মূলত গবাদিপশুর মাংস থেকে এ রোগের জীবাণু ছড়ায়। পীরগাছা উপজেলা ঘেঁষা সুন্দরগঞ্জেও এ পর্যন্ত শতাধিক গরু মারা গেছে। এদিকে প্রতিনিয়ত জবাই করা হচ্ছে অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত গরু। এসব গরুর মাংস কেটে অসুস্থ হয়েছেন অর্ধশত লোক।

এদিকে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। গবাদিপশুগুলো ভ্যাকসিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় জরুরি এক বৈঠকে। সেই থেকে চলছে অ্যানথ্রাক্স রোগ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন। তবে বিভিন্ন কৌশল ও হয়রানির ভয়ভীতি দেখিয়ে ৮০ পয়সার ভ্যাকসিন নেওয়া হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। এছাড়া সচেতনতায় কোনো প্রচারণা না থাকায় এখনো ৯০ শতাংশ গবাদিপশু ভ্যাকসিনের বাইরে।

এ উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ গবাদিপশুর মধ্যে ভ্যাকসিন পাবে প্রায় ২ লাখ। তাতে অর্ধকোটির বেশি টাকা লুটে নেবেন ভ্যাকসিন কার্যক্রমে জড়িতরা। এমন দুঃসময়ে তাদের মানবিক হওয়ার দাবি জানিয়েছেন পশুর মালিকরা।

গাইবান্ধায় ৮০ পয়সার অ্যানথ্রাক্সের ভ্যাকসিনের দাম ২০ টাকা

বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ফলগাছা গ্রামের গবাদিপশুর মালিক দিনমজুর মো. সজিব মিয়া জানান, আমার ৪টা গরু এবং ২টা বকরি। দুজন লোক এসে ভ্যাকসিন রাখতে বললেন। তখন দাম জানতে চাইলে তারা জানান ২০ টাকা। কম দাম রাখতে বললে তারা বলেন (প্রাণিসম্পদ) অফিসে এই ভ্যাকসিনের আরও দাম রাখবে। তখন আমাদের খুঁজে পাবেন না। পরে ভয়ে আমি ২০ টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন রাখি। দুটা ছাগল ৫ টাকা করে মোট ১০ টাকা এবং চারটা গরু ২০ করে মোট ৮০ টাকা রেখেছে ভ্যাকসিনের দাম।

আরও পড়ুন:
গাইবান্ধায় ৭ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ
গবাদিপশুর অ্যানথ্রাক্স যখন মানবদেহে, করণীয় কী?

টকই গ্রামের ভ্যানচালক মো. ফুল মিয়া (৫২) বলেন, মোটরসাইকেল দিয়ে কয়েকজন ব্যক্তি এসে বলেন ভ্যাকসিন রাখার জন্য। তখন দাম জানতে চাইলে বলেন ২০ টাকা। এই দামেই সবাই ভ্যাকসিন নিচ্ছে। পরে ২০ টাকা দিয়ে একটা ভ্যাকসিন কিনে রাখি।

পশুর মালিক সেজে এ বিষয়ে কথা হয় ভ্যাকসিনেটর চন্দন কুমার রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পশুপ্রতি ২০ টাকা করে ভ্যাকসিনে নিচ্ছি। এ টাকা আমাদের অফিসে জমা দিতে হয়।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কুমার দে গরুপ্রতি ভ্যাকসিন ৮০ পয়সা বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আনুষঙ্গিক কিছু খরচ থাকায় ১০ টাকা করে নিতে বলা হয়েছে। এর বেশি নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, কোনো গবাদিপশুর মালিককে ভয় দেখিয়ে নয় বরং কেউ টাকা দিতে অক্ষম হলেও তাকে ভ্যাকসিন দেওয়ায় নির্দেশনা দেওয়া আছে।

এ পর্যন্ত ২৬ হাজার ৪০০ পিস ভ্যাকসিন এসেছে। দেওয়া হয়েছে ২২ হাজার। বাকিগুলো দিয়ে ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলমান। ৫০ হাজার ভ্যাকসিন চেয়ে নতুন করে আবেদন পাঠানো হয়েছে। প্রায় আড়াই লাখ গবাদিপশু আছে এ উপজেলায়। এরমধ্যে ভ্যাকসিন পাবে ২ লাখ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, ভ্যাকসিনপ্রতি কত টাকা নেওয়া যাবে বিষয়টি প্রাণিসম্পদ ভালো বলতে পারবে। তবে আমি যতটুকু জানি তাতে টিকাপ্রতি ১০ টাকা করে নিচ্ছেন তারা। তবে এটা তাদের সিদ্ধান্ত, এখানে আমাদের বলার কিছু নেই।

আনোয়ার আল শামীম/এনএইচআর/জেআইএম