ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মধুমতির পেটে আশ্রয়ণের ১০০ ঘর

জেলা প্রতিনিধি | ফরিদপুর | প্রকাশিত: ০৮:৪৫ এএম, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণের ঘর নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। আর এ সুযোগে একটি চক্রের বিরুদ্ধে রাতের আঁধারে নামমাত্র মূল্যে সরকারি ওই ঘরের বিভিন্ন মালামাল ভাঙারি দোকানে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে উপজেলার টগরবন্ধ ইউনিয়নের চাপুলিয়া গ্রামে মধুমতি নদীর তীর ঘেঁষে ১৩০টি পরিবারের আবাসনের জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়। বসবাসের কয়েক বছরের মাথায় নদীভাঙনের কবলে পড়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প। তবে ২০২১ সাল থেকে ভাঙনের তীব্রতা বাড়তে থাকে। ভাঙনের কারণে গত ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিন বছরে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের কমপক্ষে ১০০টি ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অবশিষ্ট ছিল একটি অফিসকক্ষসহ ৩০টি ঘর। চলতি বছর ভাঙনের কবলে পরে অফিস কক্ষসহ চারটি ঘর। চলতি বছর ভাঙনঝুঁকিতে প্রকল্পের চারটি পরিবার অন্যত্র চলে যায়। এ সুযোগে সে সব ঘরের ঢেউটিন, লোহার অ্যাংগেল ও ইট খুলে নিয়ে রাতের আঁধারে ভ্যান ভর্তি করে নামমাত্র মূল্যে ভাঙারির দোকানে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ওই প্রকল্পের কয়েকজন বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে।

jagonews24

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাপুলিয়া গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ইমরুল শেখ ইমুল, আরিফুল শেখ ও মুকুল শেখ রাতের আঁধারে ভ্যানে করে কয়েকটি ঘরের ঢেউটিন ও লোহার অ্যাংগেল পাশের বোয়ালমারী উপজেলার সহস্রাইল বাজারের বিভিন্ন ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে দিয়েছে। এখনো ওইসব ঘরের কিছু মালামাল তাদের বাড়ির সামনে জমা আছে। যে কোনো সময় চক্রটি ওইসব মালামালও বিক্রি করে দিতে পারে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গত ১০ দিনের ব্যবধানে মধুমতি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে প্রকল্পের কমপক্ষে চারটি ঘর ও একটি অফিস ঘর। প্রকল্পের বাসিন্দা ইমরুল শেখ ও আরিফুল শেখের ঘরের সামনে বেশকিছু লোহার অ্যাংগেল ও ইটের স্তূপ রয়েছে।

জানতে চাইলে ইমরুল শেখ বলেন, নদীতে অফিস ঘর ভেঙে যাচ্ছিল। তাই অফিস ঘরের মালামাল খুলে এনে আমার ঘরের সামনে রাখা হয়েছে। এসব দিয়ে নতুন করে আবার ঘর করা হবে। ভাঙারির দোকানে মালামাল বিক্রির অভিযোগটি অস্বীকার করে ইমুল জানান, কয়েক বছর আগে একবার ১০ মণ লোহার মালামাল বিক্রি করেছিলাম। পরে ইউএনও অফিস থেকে জানতে পেরে আমাকে আটক করে। এরপর সেই মালামাল ফেরত দিয়ে আমি মুক্তি পাই। সেই থেকে আমি আর কোনো সরকারি মালামাল বিক্রি করিনি।

jagonews24

আরিফুল শেখের স্ত্রী মর্জিনা বেগম বলেন, নদী ভাঙনে আমার দেবরের ঘর ভেঙে যাচ্ছিল। যার কারণে তারা ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। তাই তার ঘরের মালামাল খুলে নিয়ে আমাদের কাছে রেখে দিয়েছি। এগুলো বিক্রি করবো না, নতুন আরেকটি ঘর করা হবে।

চাপুলিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার সভাপতি আকুব্বর শেখ বলেন, শুরুতে ১৩০ পরিবারের বসবাস ছিল। প্রতিবছর নদীতে ভাঙতে ভাঙতে এখন আমরা মাত্র ৩০ পরিবার আছি। প্রকল্পের ঘরগুলোর মালামাল গোপনে বিক্রি হচ্ছে কিনা আমি জানি না।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) আবুল কালাম কালু বলেন, মধুমতি নদীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভেঙে যাওয়ার সুযোগে ওখানের কিছু লোকজন সরকারি মালামাল বিক্রি করে দিচ্ছে। ঘরগুলি যখন নির্মাণ করা হয় তখন নদী অন্তত এক কিলোমিটার দূরে ছিল। এরপর থেকে নদী ভাঙতে ভাঙতে এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের দিকে এগিয়ে আসে।

এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ঘরগুলি সরকারি সম্পত্তি। সরকারি মালামাল গোপনে বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে জড়িতদের শনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এন কে বি নয়ন/আরএইচ/জিকেএস