কিশোরগঞ্জ-৫
দলীয় কোন্দলে বিএনপি, সরব জামায়াতের প্রার্থী
ছবি: বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল ও জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক রমজান আলী
- জাতীয় দলের চেয়ারম্যানকে সহযোগিতায় বিএনপির বার্তা
- জোটবদ্ধ নির্বাচনে আসনটি ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি
- বাজিতপুর উপজেলার কাউন্সিল নিয়ে বিএনপিতে কোন্দল
- নির্বাচনী মাঠে সরব বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী
- খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী ঘোষণা
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনে বিএনপি থেকে অন্তত নয়জন মনোনয়ন চান। বাজিতপুর উপজেলার কাউন্সিল নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে কোন্দল। অন্যদিকে আসনটি বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রার্থীর জন্য ছেড়ে দিতে পারে কেন্দ্রীয় বিএনপি।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মুসলিম লীগ নেতা আবদুল মোনায়েম খান বাজিতপুরের সন্তান ছিলেন। এছাড়া দেশের প্রথিতযশা শিল্পপতি জহুরুল ইসলামও বাজিতপুরের সন্তান। গুরুত্বের কারণে এক সময় পূর্ব পাকিস্তান সরকার এই এলাকা মহকুমা শহর হিসেবে উন্নীত করতে ভূমি অধিগ্রহণ, আদালত ও কারাগার নির্মাণ এবং মিনি এয়ারপোর্টের ব্যবস্থা করেছিল। স্বাধীনতার পর জেলা না হয়ে এর প্রশাসনিক গুরুত্ব কমেছে। বর্তমান এয়ারপোর্টটি বাংলাদেশ বিমানবাহিনী পরিচালনা করছে।
এ আসনে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের আফজাল হোসেনের আধিপত্য থাকলেও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্য দলগুলোর। জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক রমজান আলী দলীয় প্রার্থী হিসেবে এরইমধ্যেই স্থানীয় ইউনিটের সাংগঠনিক কাঠামো নবায়ন ও সামাজিক কর্মকাণ্ড শেষ করে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন। বিএনপিও একইভাবে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা ইউনিটে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন-
বিএনপি আসন ছাড়লেও মিত্রদের ভয় স্বতন্ত্র নিয়ে
অক্টোবরে বিএনপির প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা, নাম দেবে মিত্ররাও
আ’লীগের ঘাঁটিতে বিএনপির কোন্দল, সুবিধা পেতে পারে জামায়াত
কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল, বাজিতপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র এহসান কুফিয়া, প্রবীণ নেতা জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মীর মো. জলিল হোসেন, নিকলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট বদরুল মোমেন মিঠু, কেন্দ্রীয় কৃষকদল নেতা হাজী মাসুক মিয়া, সাবেক এমপি মজিবুর রহমান মঞ্জুর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান মামুন, জেলা বিএনপির সদস্য মো. বদরুল আলম শিপু, অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল ও সাবেক সচিব আব্দুল ওয়াহাব।
এ আসনটি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদাও মাঠে রয়েছেন। তাকে সহযোগিতা করার জন্য এরইমধ্যেই কেন্দ্রীয় বিএনপি বার্তা পাঠিয়েছে স্থানীয় নেতাদের কাছে। ফলে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও সহযোগিতা করছেন বিএনপির অনেক নেতা।
এছাড়াও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুমের বাড়ি বাজিতপুরে। তিনি সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মাওলানা আব্দুল আহাদ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা দিলাওয়ার হোসাইন নূরী। জাসদসহ (রব) সমমনা অন্যান্য বামদল ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) তৎপরতা এখনো দৃশ্যমান হয়নি।
পূর্ববর্তী নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মঞ্জুর আহমেদ, ১৯৭৯ সালে বিএনপির আমির উদ্দিন আহমেদ, ১৯৮৬ সালে মুসলিম লীগের একেএম খালেকুজ্জামান, ১৯৮৮ সালে সম্মিলিত বিরোধী দল ‘কপ’-এর খন্দকার মফিজুর রহমান রোকন, ১৯৯১ সালে বিএনপির আমির উদ্দিন আহমেদ, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির মজিবুর রহমান মঞ্জু এবং ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আফজাল হোসেন এখানে জয়লাভ করেন।
আরও পড়ুন
প্রবাসে বিএনপির ওসমান ফারুক, মাঠে সরব জামায়াতের জেহাদ খান
বিএনপির ঘাঁটিতে জয়ের স্বপ্ন জামায়াতের
জামায়াতসহ ৫ দলে একজন করে প্রার্থী, বিএনপিতে ছড়াছড়ি
জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৬৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ৪৭১ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৬০ হাজার ২৯২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ২ জন।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল বলেন, ‘দলের দুর্দিনে নেতাকর্মীদের পাশে থেকে হামলা-মামলা সহ্য করেছি। এবার স্বচ্ছ পরিবেশে মনোনয়ন পেলে দলকে এই আসন ফিরিয়ে দেবো।’
জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক মো. রমজান আলী বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রসারিত সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের কারণে ভালো ফলাফল আসবে।’
বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবেন তিনি। কেন্দ্রীয় বিএনপি এরইমধ্যে স্থানীয় নেতাদের সহযোগিতা করতে নির্দেশ দিয়েছে।
এফএ/এমএমএআর/জেআইএম