ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সেন্টমার্টিনে পর্যটক থাকতে দু’মাসের নিষেধাজ্ঞায় বছরজুড়ে অনিশ্চয়তা

জাহাঙ্গীর আলম | টেকনাফ (কক্সবাজার) | প্রকাশিত: ০৯:২৮ এএম, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

পর্যটন নির্ভর সেন্টমার্টিনে নভেম্বর-ডিসেম্বর দু’মাস পর্যটকদের রাত্রিযাপন নিষেধাজ্ঞায় পুরো বছরের জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। আগে যেখানে ৫-৬ মাসের আয় দিয়ে পর্যটন ব্যবসায়ীরা পুরো বছর চলতেন এখন সেখানে দু’মাস পর্যটকরা রাত্রিযাপন না করলে ব্যবসায়ীদের আয় আরও কমবে। এতে দ্বীপের অর্থনীতিতে ধস নামবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

স্থানীয়রা জানান, প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন তার প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য বহুদিন ধরেই ভ্রমণ পিপাসুদের পছন্দের তালিকায়। কিন্তু দুই বছর আগে বাংলাদেশ-মিয়ানমার রাখাইন সীমান্তে সংঘাতের পর টেকনাফ দমদমিয়া থেকে সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে বিকল্প হিসেবে কক্সবাজারের নুনিয়া ছড়া অথবা উখিয়ার ইনানী থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হলেও এতে পর্যটকদের যাতায়াতে সময় বেড়ে যায়।

টেকনাফ দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে সকাল ৯টায় রওনা দিলে পর্যটকরা বেলা ১১টা বা দুপুরের মধ্যে দ্বীপে পৌঁছে ৫ ঘণ্টা ঘুরে ফিরে আসতে পারতেন, আবার অনেকে রাত্রিযাপন করতেন। কিন্তু ইনানী বা নুনিয়া ছড়া থেকে সকালে রওনা দিলে বিকেলে দ্বীপে পৌঁছে পর্যটকরা আধা ঘণ্টাও ঘুরতে পারেন না। রাত্রিযাপনই একমাত্র সমাধান, যাতে তারা দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।

সেন্টমার্টিনে পর্যটক থাকতে দু’মাসের নিষেধাজ্ঞায় বছরজুড়ে অনিশ্চয়তা

এরমধ্যে নভেম্বর ও ডিসেম্বর হলো পর্যটন মৌসুমের আসল সময়। যদি পর্যটকরা সেন্টমার্টিনে অন্তত ৪-৫ ঘণ্টা অবস্থান বা রাত্রিযাপন করতে না পারেন, তাহলে হোটেল, রিসোর্ট, শুঁটকি ও কাঁচা মাছ ব্যবসায়ী, ডাব বিক্রেতা, ভ্যান ও অটোরিকশাচালক, ইজিবাইক চালক, শ্রমিকসহ পর্যটন নির্ভর মানুষের বড় ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তারা আরও জানান, সরকারের নতুন নিয়মে নভেম্বর ও ডিসেম্বর ২ মাস পর্যটক এলেও রাতে থাকতে পারবে না। এছাড়া দিনে সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক যাওয়ার অনুমতি থাকবে। আগে যেখানে ৫-৬ মাসের পর্যটন ব্যবসায় দ্বীপবাসী সারা বছরের খরচ জোগাতে হিমশিম খেতেন, এখন দিনে দুই হাজার পর্যটক এলেও যদি রাত্রিযাপন করতে না পারে, তাহলে সেন্টমার্টিনবাসীর অর্থনীতি ধসে পড়বে।

তারা দাবি করেন, টেকনাফ দমদমিয়া ঘাট থেকে পুনরায় জাহাজ চলাচল শুরু করতে হবে এবং পর্যটকদের রাত্রিযাপনের অনুমতি দিতে হবে। এ দুটি উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নির্ভর প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের দুঃখ-কষ্ট দূর হবে এবং দ্বীপের অর্থনীতি আবারো ঘুরে দাঁড়াবে এবং স্বাভাবিক হবে।

সেন্টমার্টিনে পর্যটক থাকতে দু’মাসের নিষেধাজ্ঞায় বছরজুড়ে অনিশ্চয়তা

সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা ও হোটেল মারমেইড রিসোর্টের দায়িত্বরত মো. তৈয়ব উল্লাহ বলেন, আমাদের দেশের আবহাওয়া ও ছুটির দিন মিলিয়ে পর্যটকদের উপযুক্ত সময় হলো নভেম্বর-ডিসেম্বর। এ দুই মাসকে পর্যটনের পিক টাইম বলা হয়, কিন্তু ঠিক এই সময়েই সরকার দু’মাস সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করেছে। পিক টাইমে রাত্রিযাপন এভাবে বন্ধ থাকলে পর্যটকরা বিকল্প গন্তব্য বেছে নেবে, সেন্টমার্টিনের পর্যটন নির্ভর অর্থনীতি ভেঙে পড়বে।

আরও পড়ুন-
সেন্টমার্টিন খুলছে নভেম্বরে, শেষ দুই মাস রাতে অবস্থান করা যাবে
সেন্টমার্টিনে পর্যটন কখনোই বন্ধ করা হয়নি: পরিবেশ উপদেষ্টা
সেন্টমার্টিনে এখনো গত মৌসুমের হতাশার ছাপ

তিনি আরও জানান, এক্ষেত্রে দ্বীপবাসী ও ব্যবসায়ীদের একমাত্র দাবি পিক টাইম নভেম্বর-ডিসেম্বরে সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের রাত্রিযাপনের অনুমতি পুনর্বহাল করা হোক।

সেন্টমার্টিনে পর্যটক থাকতে দু’মাসের নিষেধাজ্ঞায় বছরজুড়ে অনিশ্চয়তা

সেন্টমার্টিন হোটেল, রিসোর্ট ওনার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শিবলী আজম কোরেশি জানান, নভেম্বর থেকে ইনানী বা কক্সবাজারের নুনিয়াছড়া থেকে পর্যটকরা পর্যটকবাহী জাহাজে করে সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে আসার কথা। সে লক্ষ্যে হোটেল, রিসোর্টসহ নানান ব্যবসায়ীরা মোটামুটি প্রস্তুতি গ্রহণ করলেও তারা অনেকাংশে হতাশ। দ্বীপের ৯০ শতাংশ মানুষ পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। দু’মাস রাত্রিযাপন বন্ধ মানে তারা কর্মহীন হয়ে পড়বে এবং কোনো বিকল্প পথও থাকবে না। দু’মাস পর দ্বীপে পর্যটকদের চাপ কমে যায়। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে পর্যটননির্ভর দ্বীপের বাসিন্দারা অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়বে।

সেন্টমার্টিনের শুঁটকি ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন জানান, দ্বীপে মানুষের সংখ্যা কম এবং স্থায়ী আয়ের সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। সাগরে যারা মাছ ধরেন শুধু তাদের পরিবার কোনোমতে চলে, কিন্তু শুঁটকি মাছের চাহিদা থাকে শুধুমাত্র পর্যটক এলেই। পর্যটক না এলে দোকান খোলা হয় না, ফলে বছরের বেশিরভাগ সময় আয় বন্ধ থাকে।

তিনি আরও জানান, সেন্টমার্টিনে পুরো পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের রাত্রিযাপনের সুযোগ থাকলে ব্যবসা সচল থাকবে ও দ্বীপবাসী বাঁচতে পারবে।

সেন্টমার্টিনে পর্যটক থাকতে দু’মাসের নিষেধাজ্ঞায় বছরজুড়ে অনিশ্চয়তা

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ফয়েজুল ইসলাম জানান, সাগরে মাছ ধরা আর পর্যটন ব্যবসা ছাড়া দ্বীপের বাসিন্দাদের দৃশ্যমান কোনো জীবিকা নেই৷ পুরো মৌসুমজুড়ে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারলে সেই আয় দিয়ে তারা বাকি সময় চলতে পারে। গত বছর থেকে দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় যে নিয়ম-নীতির মধ্যে পর্যটকরা দ্বীপে আসছেন বা আসার কথা তা নিয়ে পর্যটন নির্ভর বাসিন্দাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহেসান উদ্দিন জানান, পর্যটকরা সেন্টমার্টিনে কক্সবাজারের নুনিয়া ছড়া জেটিঘাট থেকে নাকি উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট থেকে যাবে, কতজন পর্যটক সেন্টমার্টিনে যাবে, কতদিন রাত্রিযাপন করতে পারবে কিংবা নভেম্বর থেকে পর্যটক যাওয়া শুরু করবে কি না তা নিয়ে এখনো বিস্তারিত অফিসিয়াল কাগজ আসেনি। এখনো পর্যন্ত আগের সিদ্ধান্ত বহাল আছে।

এফএ/এএসএম