শেরপুরে জাল নোট নিয়ে হুলুস্থুল
শেরপুরে পোস্ট অফিস থেকে সঞ্চয়ের টাকা তুলতে গিয়ে ৫৩ হাজার টাকা জাল নোট পেয়েছেন এক বৃদ্ধা। ছবি-জাগো নিউজ
- পোস্ট অফিস থেকে টাকা তুলে পেলেন ৫৩ হাজার টাকার জাল নোট
- দুই সপ্তাহে অন্তত পাঁচটি জালনোট শনাক্তের ঘটনা ঘটেছে
- বুথেও মিলেছে জাল নোট
শেরপুরে পোস্ট অফিস থেকে সঞ্চয়ের টাকা তুলতে গিয়ে ৫৩ হাজার টাকা জাল নোট পান ষাটোর্ধ্ব শাহিনা বেগম। এর আগে সম্রাট নামের এক যুবক ডাচ-বাংলা ব্যাংক থেকে এক হাজার জাল নোট পান। গত এক মাসে অন্তত পাঁচটি এমন ঘটনা ঘটেছে জেলায়।
সচেতন নাগরিকরা বলছেন, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বিভিন্নভাবে দেশে প্রবেশ করছে এসব জাল নোট। এতে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ নাগরিকরা। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানে জাল নোটের বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য একটি তদন্ত কমিটি করেছে কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অন্যের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ ও ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করেন শাহিনা বেগম। শেরপুর সদর উপজেলার পাকুরিয়া ইউনিয়নের গনইমমিনাকান্দা গ্রামের বাসিন্দা তিনি। রোববার (১২ অক্টোবর) শহরের উত্তরা ব্যাংকে দুই লাখ ৬৯ হাজার টাকা জমা দিতে যান। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টাকা গুনে নেওয়ার সময় দেখতে পায় মোট টাকার মধ্যে ৫৩টি এক হাজার টাকার নোট জাল।
একইভাবে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে শেরপুর সোনালী ব্যাংকে নুহু মিয়া নামের এক ব্যক্তি সরকারি চালানের দুই লাখ ৪৩ হাজার টাকা জমা দিতে যান। ব্যাংক টাকা নেওয়ার সময় ২৫টি এক হাজার টাকার নোট জাল শনাক্ত হয়।
নুহু মিয়া জানান, ওই টাকা তিনি শেরপুর প্রধান ডাকঘর থেকে তুলে ব্যাংকে জমা দিতে যান। সেখানে জাল নোট শনাক্ত হয়।
সম্প্রতি শেরপুর পৌর শহরের নিউমার্কেট এলাকায় সম্রাট নামের এক যুবক ডাচ-বাংলা ব্যাংকে ১০ হাজার টাকা কার্ড দিয়ে তুলে একটি এক হাজার টাকার জাল নোট পান।
ভুক্তভোগী শাহিনা বেগম বলেন, ‘আমি মানুষের বাড়িতে কাজকাম করে। পাশাপাশি ভিক্ষা করে টাকাগুলো জমিয়ে ছিলাম। সঞ্চয়ের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় টাকাগুলো আমি উত্তোলন করি। কিন্তু তারা আমাকে ৫৩টি এক হাজার টাকার নোট জাল দেয়। আমি এর বিচার চাই।’
জাল নোটের বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরা ব্যাংকের ক্যাশিয়ার মাহবুর রহমান বলেন, ‘বৃদ্ধা শাহিনা বেগমের জমা দেওয়া টাকার মধ্যে এক হাজার টাকার ৫৩টি জাল নোট ছিল। আমরা জাল নোটগুলো শনাক্ত করেছি।’
বৃদ্ধা শাহিনা বেগমকে টাকা বুঝিয়ে দেন পোস্ট অফিসের পোস্টাল অফিসার মানিক মিয়া। তিনি বলেন, ‘শাহিনা বেগমের বিষয়টি পাঁচ দিন আগের ঘটনা। আমি গুনে তার পাওনা বুঝিয়ে দিয়েছি। পাঁচদিন পর এসে তিনি জাল নোটের অভিযোগ তুলছেন।’
শেরপুর প্রধান ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার খন্দকার নূর কুতুবুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি জানার পরই আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।’
শেরপুর ‘সম্মিলিত সচেতন নাগরিক উদ্যোগ’র সাংগঠনিক সম্পাদক জিহাদ আহমেদ বলেন, ‘দরিদ্র শাহিনার বিষয়টি নিয়ে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে একটা জিনিস বোঝা যায়, তার টাকা উত্তোলনের আগে দুজন গ্রাহক চার লাখ টাকা জমা রাখেন। সেই দুজনের টাকা জাল ছিল কি-না? সব বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করে রহস্যটি উদঘাটনের দাবি জানাই।’
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি জেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে এসেছে। এটি নিয়ে আমাদের কাজ চলছে।
মো. নাঈম ইসলাম/এসআর/জিকেএস