ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

এইচএসসি

বিপর্যয়ের মাঝে দীপ্তি ছড়িয়েছে সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজ

জেলা প্রতিনিধি | নীলফামারী | প্রকাশিত: ১২:২১ পিএম, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে বড় ধরনের ফল বিপর্যয়ের মাঝেও সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ। বোর্ডের ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হলেও এ কলেজের পাসের হার শতভাগ। জেলার মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক জিপিএ-৫ অর্জনের রেকর্ডও করেছে কলেজটি।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) প্রকাশিত ফল থেকে এ তথ্য জানা যায়।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি থেকে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ২৯৭ জন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৭০ জন। হিসাব অনুযায়ী এটি প্রায় ৯০.৯১ শতাংশ। যা রীতিমতো বিস্ময় ছড়িয়েছে জেলাজুড়ে।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বোর্ডে ১ লাখ ৫ হাজার ৮৯১ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ৬০ হাজার ৮৮২ জন পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী কৃতকার্যের হার ৫৭.৪৯ শতাংশ। অকৃতকার্য হয়েছে ৪৫ হাজার ৯ জন। যার মধ্যে সাড়ে ৩৫ হাজার ৮৩৮ শিক্ষার্থী ইংরেজিতে ফেল করেছেন। বোর্ডের এমন ফল বিপর্যয়েও সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের সাফল্যের প্রশংসা করছেন সবাই।

আরও পড়ুন:
বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পেলেন সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজের ১৬ শিক্ষার্থী
মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেলেন সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজের ৩৯ শিক্ষার্থী
যে কারণে সেই কলেজ থেকে এত শিক্ষার্থী মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পান

জানা যায়, সৈয়দপুর বিমানবন্দর সড়কের পাশেই সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬৪ সালে। এর আগের নাম ছিল সৈয়দপুর সরকারি টেকনিক্যাল কলেজ। ২০২০ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর নাম বদল করে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ করে। কলেজের শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিক ভালো ফলাফল অর্জন করে ছড়িয়ে যাচ্ছে মেধার দৃপ্তি।

একাধিক শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয়। নবম শ্রেণি থেকে রয়েছে শুধু বিজ্ঞান শাখা। আসন অনুযায়ী এখানে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষকরা অতিরিক্ত ক্লাস নেন। এমনকি বাড়িতে গিয়েও খোঁজখবর নেন। নিয়মিত অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। এসব কারণে এসএসসি, এইচএসসি, মেডিক্যাল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধে ভালো করছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিপর্যয়ের মাঝে দীপ্তি ছড়িয়েছে সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজ

দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার হলদিবাড়ি গ্রামের আরিফুল ইসলাম। মেধাবী এ তরুণ এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে যেন স্বপ্নপূরণের সিঁড়িতে পা ফেলেছেন এবার। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন তার। আরিফুল জানায়, শিক্ষকরা ক্লাসের পড়া, ক্লাসেই করান। প্রতিটি অধ্যায়ে শেষ হলে সারপ্রাইজ টেস্ট নেন। এতে কেউ খারাপ করলে তাকে আলাদাভাবে ক্লাসেই বুঝান এবং তাদের পুনরায় পরীক্ষা নেন। এতে ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। বিশেষ করে গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞানের বিষয়গুলো শিক্ষকরা খুব যত্ন করে ক্লাস নেন। কোনো শিক্ষার্থী পড়া না পারলে শিক্ষকদের বিরক্ত হতে দেখা যায় না।

প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণি থেকেই স্বপ্ন দেখাই তোমাকে জিপি-৫ পেতে হবে। কারণ মেডিকেল, বুয়েট কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতে হলে এ ফলাফল লাগবে। তা না হলে তুমি ভর্তিযুদ্ধে পিছিয়ে যাবে।’

অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের ভাষ্য, এটি রাজনৈতিক কোলাহলমুক্ত প্রতিষ্ঠান। পারিবারিক বলয়ে এখানকার শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। শতভাগ মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। মন্ত্রী, এমপিসহ অনেকেই জানেন এখানে সুপারিশে কাজ হয় না। তাই তারা অহেতুক সুপারিশও করেন না।

তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির বৈশিষ্ট্য হলো, চাপমুক্ত পরিবেশে নিবিড় তদারকির মাধ্যমে পাঠদান। সরকারি কারিকুলামের বাইরে পড়াশোনা ও পরীক্ষা নেওয়া হয়। তাই প্রতি বছর উত্তীর্ণ বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী মেডিকেল কলেজ, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর সুনাম রয়েছে।

আমিরুল হক/এমএ/এমএস