ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

৫০ শয্যার জনবলে চলছে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল

হুসাইন মালিক | চুয়াডাঙ্গা | প্রকাশিত: ০৩:৪৮ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০২৫

চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ভেঙে পড়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা। ২৫০ শয্যার বিশাল অবকাঠামো থাকলেও হাসপাতালটি চলছে ৫০ শয্যার জনবলে। গত ১০ মাস ধরে অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্টের অনুপস্থিতিতে অপারেশন থিয়েটার (ওটি) পুরোপুরি অচল। এতে প্রতিদিনই সাধারণ এবং গুরুতর রোগীদের অন্যত্র রেফার করতে হচ্ছে। ফলে হাসপাতালটি এখন চিকিৎসা নয়, যেন দুর্ভোগের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৭০ সালে ৫০ শয্যা নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ২০০৩ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীত হলেও কেবল খাবার ও ওষুধ বরাদ্দই বাড়ানো হয়, কিন্তু জনবল আগের মতোই থাকে। তবে ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবরে হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট করতে ছয়তলা একটি ভবনের উদ্‌বোধন করা হয়। যার ব্যয় ধরা হয় সাড়ে ৩০ কোটি টাকা। তবে উদ্বোধনের সাত বছর পার হলেও পূর্ণাঙ্গ ২৫০ শয্যার কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে এখনো ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে হাসপাতালটি।

তবে এই ৫০ শয্যার জনবলেও রয়েছে সংকট। সিনিয়র চক্ষু কনসালট্যান্ট, সিনিয়র ও জুনিয়র অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট, সিনিয়র শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র মেডিসিন কনসালট্যান্ট, জুনিয়র ইএনটি কনসালট্যান্ট, জুনিয়র রেডিওলোজিস্ট, একজন মেডিকেল অফিসার ও ডেন্টাল সার্জনের পদসহ নয়জন চিকিৎসকের পদ ফাঁকা। এছাড়া ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির ২০টি পদও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।

সম্প্রতি জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন ডা. আ. স. ম. মোস্তফা কামাল ডেপুটেশনে সদর হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন। অ্যানেসথেসিয়া কোর্স সম্পন্ন থাকায় আপাতত তার মাধ্যমেই অপারেশন থিয়েটার চালানো হচ্ছে। তবে রোগীরা বলছেন এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।

৫০ শয্যার জনবলে চলছে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল

হাসপাতালের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট না থাকায় ছোট অপারেশনও বিলম্ব হচ্ছে। এতে প্রতিদিনই সাধারণ ও গুরুতর রোগীদের অন্যত্র রেফার করতে হচ্ছে। ফলে বাড়ছে খরচ, ভোগান্তি এবং মানসিক চাপ।

রোগীদের অভিজ্ঞতাও একইরকম হতাশার। পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডের রোগী উজির আলী বলেন, এক মাস হলো ভর্তি আছি। ডাক্তার বলেছেন সোমবার অপারেশন হবে, কিন্তু এখনো হয়নি। গরিব মানুষের মৃত্যুতেও শান্তি নেই।

আরও পড়ুন
জনবল সংকটে ঢাকা মেডিকেলে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা
চিকিৎসক-জনবল সংকটে ভোগান্তি রোগীদের
সবই আছে, নেই শুধু চিকিৎসক
সাড়ে তিন লাখ মানুষের জন্য তিন চিকিৎসক

মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি কাঞ্চন বেগমের মেয়ে পারভিনা খাতুন বলেন, গত সপ্তাহে অপারেশন হওয়ার কথা ছিল, এখন বলা হচ্ছে আরও অপেক্ষা করতে হবে। আরেক রোগী সেলিনা খাতুন জানান, ১৫ দিন হলো ভর্তি আছি। প্রথমে তারিখ দিয়েছিল, পরে পরিবর্তন করেছে। এখন আর বিশ্বাস করতে পারি না কবে হবে অপারেশন।

হাসপাতালের জুনিয়র সার্জারি কনসালট্যান্ট ডা. এহসানুল হক তন্ময় বলেন, জানুয়ারিতে অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট বদলি হওয়ার পর অপারেশন থিয়েটার কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকদিন পর বিকল্প ব্যবস্থায় চালু করা হয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ডেপুটেশনের মাধ্যমে একজন সহকারী সার্জন হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন এবং তিনি আপাতত অ্যানেসথেসিয়া দিচ্ছেন। তবে এটি কেবল অস্থায়ী সমাধান। অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্টের দুটি পদ পূরণ হলে রোগীদের পূর্ণাঙ্গ সেবা দেওয়া সম্ভব হতো।

চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি শাহজাহান আলী বিশ্বাস বলেন, ১৬ লাখ মানুষের চিকিৎসার ভরসার জায়গা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ জনবল নিয়োগ দ্রুত না হলে এই ভোগান্তি আরও বাড়বে। প্রতিদিনের অপারেশন বিলম্ব, ওষুধের সংকট, চিকিৎসকের অনুপস্থিতি আর অদক্ষ ব্যবস্থাপনার দায়ে হাসপাতালটি এখন চিকিৎসা নয়, দুর্ভোগের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

৫০ শয্যার জনবলে চলছে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল

এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন বলেন, হাসপাতালটি মূলত ১০০ শয্যার, কিন্তু জনবল ৫০ শয্যার, আর ভর্তি থাকে প্রায় ৩৫০ রোগী। অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট না থাকায় অপারেশন থিয়েটারে বিঘ্ন ঘটছে। বিকল্প উপায়ে কিছু অপারেশন করা হলেও গুরুতর রোগীদের অন্যত্র পাঠাতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, গত মাসে ট্রেনিংপ্রাপ্ত একজন সহকারী সার্জনকে সংযুক্তির মাধ্যমে পেয়েছি। তার সহায়তায় সাময়িকভাবে ব্যবস্থা চলছে, তবে এটি স্থায়ী নয়। সরকারের প্রতি দাবি যত দ্রুত সম্ভব অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্টের দুটি পদসহ সব শূন্য পদে যোগদান নিশ্চিত করা হোক।

হুসাইন মালিক/কেএইচকে/এএসএম