টেকনাফ বিজিবি
এক বছরে ২১৮ কোটি টাকার মাদক-চোরাচালান জব্দ, উদ্ধার ৩৮৭ অপহৃত
কক্সবাজারের টেকনাফে ব্যাটালিয়ন ২ বিজিবির ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। সোমবার (২৭ অক্টোবর) নানা আয়োজনে দিবসটি উদযাপন করা হয়। এসময় প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাটালিয়নের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও গত এক বছরের কার্যক্রম তুলে ধরেন কর্মকর্তারা।
ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, ‘১৯৪৮ সালের ২৭ অক্টোবর ময়মনসিংহের খাগডহরে এই ব্যাটালিয়নটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ৭৭ বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে, ৩৪ জন বীর সেনানীর রক্তে লেখা আমাদের মুক্তির গল্প। বহু সাহসী যোদ্ধা পেয়েছেন ‘বীর প্রতীক’ তাদের আত্মত্যাগ জ্বলজ্বল করে প্রতিটি সূর্যোদয়ে। ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর টেকনাফের কৌশলগত ভূমিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সীমান্ত সুরক্ষা, জাতীয় স্বার্থ ও মাদকবিরোধী যুদ্ধের প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করছে এই ব্যাটালিয়ন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিজিবির ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র ইউনিট হিসেবে অত্যাধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা স্থাপন করে ৩০ কিলোমিটার উপকূল এবং ২৩ কিলোমিটার সমুদ্রসীমা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। মাদকের বিরুদ্ধে অন্তহীন যুদ্ধে ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮- টানা তিন বছর ‘‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি” জয় করে গড়েছে অভূতপূর্ব কীর্তি। ক্রিস্টাল মেথ আইস, ইয়াবা-এই মরণ বিষের বিরুদ্ধে নিরলস যুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য শক্তি টেকনাফ ব্যাটালিয়নের রয়েছে সাফল্যের অবিশ্বাস্য পরিসংখ্যান।’

তিনি জানান, ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মাত্র এক বছরে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন সফলভাবে ১৭৯ জন আসামি গ্রেফতার করেছে, উদ্ধার করেছে ২ কেজি সোনা, জব্দ করেছে ৪ দশমিক ২০৬ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস, আটক করেছে ৫৭ লক্ষাধিক ইয়াবা ট্যাবলেট ও নিষ্ক্রিয় করেছে দেশি-বিদেশি অস্ত্র। এক বছরে ২১৮ কোটি ২৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা মূল্যের মাদক ও চোরাচালান জব্দ করেছে এই ব্যাটালিয়ন। মিয়ানমারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ৩৪ জন নিরাপত্তা বাহিনীর নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিত করেছে।
তিনি আরও জানান, গত এক বছরে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন অপহরণকৃত ৩৮৭ জন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার ও ৮৭ জন মানবপাচারকারীকে আটক করেছে বিজিবি। এছাড়া নিরলস প্রচেষ্টায় আরাকান আর্মির নিকট আটক ১২৪ জন বাংলাদেশি জেলে, কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ১৮টি নৌকা ও বিপুল পরিমাণ জাল ফেরত আনা হয়েছে। এছাড়াও মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন ৪৪০ জনকে শীতবস্ত্র বিতরণ, ৮টি মেডিকেল ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ১০৯৭ জনকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে প্রান্তিক পর্যায়ে প্রায় ১০০০ জন অসহায় মানুষকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই মহেন্দ্র ক্ষণে আমরা নতুন করে আবার শপথ নিয়েছি আত্মপ্রত্যয়ী-সত্যবাদিতা ও ন্যায়-পরায়ণতার মধ্যদিয়ে আমরা আমাদের ওপর অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে পিছপা হবো না। প্রয়োজনে দেশ মাতৃকার অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিতে কুণ্ঠাবোধ করবো না।
জাহাঙ্গীর আলম/এমএন/জেআইএম