চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সে স্থবিরতা, ঘুরে ফিরে একই নেতৃত্ব
চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে স্থবির অবস্থায় রয়েছে। জেলার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র পুরান বাজার এলাকায় অবস্থিত এ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। নিয়মিত ব্যবসায়ীক কার্যক্রম, উদ্যোক্তা উন্নয়ন বা সমস্যা সমাধানে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ না থাকায় হতাশ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ী মহলের অভিযোগ, ঘুরে ফিরে একই ব্যক্তিরা বছরের পর বছর চেম্বারের নেতৃত্বে থাকায় প্রতিষ্ঠানটি কয়েকজনের ব্যক্তিগত প্রভাববলয়ে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে চেম্বার তার মূল উদ্দেশ্য ব্যবসায়ীদের উন্নয়ন, বাজার স্থিতিশীলতা রক্ষা ও রপ্তানি-আমদানি খাতের সম্প্রসারণ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে।
চেম্বারের সদস্যরা মনে করেন, নতুন নেতৃত্ব ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা না এলে চাঁদপুরের ব্যবসায়ীক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন সুযোগ সৃষ্টি, উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে একটি গতিশীল ও কার্যকর চেম্বার এখন সময়ের দাবি।
আলমগীর পাটোয়ারী নামের এক সদস্য বলেন, চেম্বার অব কমার্স এখন কিছু মানুষের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে। বছরে কয়েকটি সভা-মিটিং করে দায়িত্ব শেষ করে দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীদের বাস্তব সমস্যার দিকে কারও নজর নেই। যদিও এখন নতুন কমিটির জন্য নির্বাচন মুখি হচ্ছে। হয়তো নতুন কমিটির মাধ্যমে চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স কার্যক্রম গতিশীল হবে।

ব্যবসায়ীদের একটি অংশের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে চলা নেতৃত্বের টানাপোড়েন এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে চেম্বারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। কোনো পক্ষই ছাড় দিতে রাজি না থাকায় টানা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নতুন নেতৃত্ব গঠনের উদ্যোগ সফল হচ্ছে না।
বর্তমানে চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের ২০২৪-২৫ পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদও শেষ পর্যায়। এ কমিটিতে দীর্ঘ বছর ধরে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম। যদিও এরমধ্যে বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায় সভাপতি ছিলেন। গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে চেম্বারের সভাপতি জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম অসুস্থ রয়েছেন। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়।
এদিকে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর আরও ধস নামে চেম্বারের কার্যক্রম। যেখানে আগে ৪ শতাধিক সদস্য সংখ্যা ছিল, সেখানে এখন ২৫৮ জন সদস্য আছেন। অধিকাংশ ব্যবসায়ী সদস্য পদ থেকে গুঁটিয়ে নিয়েছেন।
চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি তমাল কুমার ঘোষ বলেন, ব্যবসায়ীদের সংগঠন হচ্ছে চেম্বার অব কমার্স। ব্যবসায়ীরা ভালো থাকলে চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের কার্যক্রম ভালো থাকে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে সবকিছুতে টানাপড়েন শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীক মন্দার কারণে সাংগঠনিক কাঠামোও ঝিমিয়ে পড়েছে। তবে আমাদের কমিটি নিয়ে কোনো সমস্যা তৈরি হয়নি।
সদস্য সংখ্যা কমার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার চেম্বার সদস্যদের ফি কয়েকগুণ বাড়িয়েছে। যে কারণে পুরনো সদস্যরা নতুন করে নবায়ন করছে না এবং নতুন কেউ সদস্য হচ্ছে না। আমরা ফি কমানোর জন্য ইতোমধ্যে দাবি জানিয়েছি। মফস্বল পর্যায় চেম্বারগুলো টিকিয়ে রাখতে এ বিষয়টি দেখতে হবে। তখন আমাদের কার্যক্রম প্রসারিত হবে।
চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায় বলেন, আমরা এখন পুরোপুরি নির্বাচন মুখি। আগে কী হয়েছে সেটি নাই বললাম। সামনে কমিটি না হওয়া পর্যন্ত সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে কিছু বলা যাবে না।
শরীফুল ইসলাম/আরএইচ/এএসএম