ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

চোখে দেখেন না তবুও তিনি নিখুঁত মিস্ত্রি

হুসাইন মালিক | চুয়াডাঙ্গা | প্রকাশিত: ০৫:০০ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০২৫

জন্ম থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তারপরও একজন দক্ষ মেকানিক। বাইসাইকেল, ভ্যান, শ্যালো মেশিন, পাওয়ারট্রলির যন্ত্রপাতি ঠিক করেন নিখুঁত হাতে। এমনকী একাই টিউবওয়েল স্থাপন করতে পারেন তিনি।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাঁস ইউনিয়নের বুড়োপাড়ার গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব জহুরুল ইসলাম মঙ্গল। তিনি চোখে না দেখলেও তার দক্ষতা হার মানাবে যে কোনো অভিজ্ঞ মিস্ত্রিকে।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী জহুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘চোখে না দেখেও কাজ করতে পারি, এটা আল্লাহর রহমত। আমার বাইরের চোখ নেই, তাই অন্তরের চোখ দিয়েই দেখি। কোন স্ক্রু কোথায় লাগবে, কোন রেঞ্চ ধরতে হবে—হাতই আমাকে বলে দেয়।’

চোখে দেখেন না তবুও তিনি নিখুঁত মিস্ত্রি

মাত্র সাত বছর বয়সে সাইকেলের প্রতি আগ্রহ থেকে এক দোকানে মিস্ত্রির কাছ থেকে কাজ শেখেন জহুরুল ইসলাম। ১৯৮৪ সালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের গেটসংলগ্ন স্থানে নিজের দোকান খুলে কাজ শুরু তিনি। পরে গ্রামে ফিরে শ্যালো মেশিন, পাওয়ারট্রলি ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি মেরামত শেখেন। ২০০৪ সাল থেকে বুড়োপাড়াতেই চলছে তার স্থায়ী দোকান।

সরেজমিনে দেখা যায়, এক কৃষকের নষ্ট শ্যালো মেশিন ঠিক করছেন জহুরুল ইসলাম। কিছুক্ষণ পরেই ইঞ্জিন সচল। এরপর আবার আরেক বাসিন্দার বাড়িতে টিউবওয়েল মেরামতে ছুটে যান তিনি।

চোখে দেখেন না তবুও তিনি নিখুঁত মিস্ত্রি

গ্রামের কৃষক তাইজাল শেখ জাগো নিউজকে বলেন, ‘৪০ বছর ধরে মেশিন চালাই কিন্তু একটা নাটও খুলতে পারি না। মঙ্গল ভাই না দেখেই মেশিন ঠিক করেন। এটা আল্লাহর দেওয়া ক্ষমতা।’

নাজিম উদ্দিন নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘দৃষ্টিহীন হলেও তিনি পুরো ইঞ্জিন খুলে আগের মতো সেট করে দিতে পারেন। কাজের মান অসাধারণ।’

চোখে দেখেন না তবুও তিনি নিখুঁত মিস্ত্রি

জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘এই কাজ করেই সংসার চলে। ছেলেমেয়েদের আলাদা সংসার। তাদের কাছ থেকে কিছু চাই না। তবে সমাজে অনেকেই প্রতিবন্ধীদের অবহেলা করেন, এটাই কষ্ট।’

আইলহাঁস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিনাজ উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘দৃষ্টি হারালেও জহুরুলের হাতের কাজে জাদু আছে। টিউবওয়েল বসানো থেকে শুরু করে শ্যালো ইঞ্জিন—সব কাজই তিনি নিখুঁতভাবে করেন। তিনি প্রতিবন্ধী ভাতা পান।’

হুসাইন মালিক/এসআর/এমএস