পানির দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির ‘পদ্মা বাঁচাই’ মহাসমাবেশ আজ
যুগ যুগ ধরে ন্যায্য পানির হিস্যা থেকে বঞ্চিত বাংলাদেশ। ফলে শুকিয়ে যাচ্ছে পদ্মাসহ দেশের বিভিন্ন নদ-নদী। অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে হাজারো বসতবাড়ি। নাব্য সংকট ও ভাঙনকবলিত মানুষের এই দীর্ঘদিনের দুর্দশার প্রতিবাদে ‘চলো যাই ভাই, পদ্মা বাঁচাই’— স্লোগানকে সামনে রেখে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মহাসমাবেশের আয়োজন করেছে বিএনপি।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুর ২টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে এ গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সঙ্গে রাজশাহী বিভাগে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তারা সবাই আসবেন। সমাবেশে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ লোক জমায়েতের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে দুই-তিন হাজার লোক আসবে বলে জানা গেছে।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে আয়োজনে চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কলেজ মাঠে তড়িঘড়ি করে নির্মাণ করা হচ্ছে মূল মঞ্চ, কাঠামো দাঁড় করানোর পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে নিরাপত্তা বেড়া ও অতিথি বসার ব্যবস্থা। পুরো আয়োজনস্থল জুড়ে কর্মীদের পদচারণায় এখন উৎসবমুখর পরিবেশ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাঠ ও আশপাশের এলাকায় কাজ করছে সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক দল।
এরই মধ্যে সমাবেশ ঘিরে পুরো শহরে টাঙানো হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টার। বিভিন্ন মোড়ে মাইকিং করে জানানো হচ্ছে সমাবেশের সময়সূচি ও বক্তব্য। শহরের প্রধান সড়কগুলোতে দেখা যাচ্ছে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি, যা সমাবেশকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে।
স্থানীয় ও নেতাকর্মীরা বলছেন, উজানে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় শুকিয়ে যাচ্ছে পদ্মাসহ দেশের অসংখ্য নদ-নদী। পানি সংকটে ভাটির জীবন-জীবিকা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য।

পানির অভাব যেমন বিদ্যমান নদীগুলোকে মরা খালে পরিণত করছে, ঠিক তেমনি বর্ষা এলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। পানি নেমে আসতে না পারায় হঠাৎ বাড়তি স্রোতে পদ্মায় তীব্র ভাঙনে প্রতি বছরই তলিয়ে যাচ্ছে হাজারো বসতবাড়ি, আবাদি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। নদীভাঙনের দুঃসহ চক্রে সাধারণ মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।
পদ্মার এই শুষ্কতা ও ভাঙনে জীবন-জীবিকা হারানো মানুষের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, ক্ষোভ ও অসহায়ত্ব প্রকাশে ‘চলো যাই ভাই, পদ্মা বাঁচাই’— এই স্লোগান সামনে রেখে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। নদী রক্ষায় ন্যায্য পানির অধিকার দাবি, নদীভাঙন রোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং ভাটির মানুষের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই এই মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
অপরদিকে এলাকাবাসী বলছেন, বছরের পর বছর রাজনৈতিক দল পরিবর্তন হলেও পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে কোনো স্থায়ী উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। নির্বাচন এলে প্রতিশ্রুতি শোনা যায়, সভা-সমাবেশে নদী রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে ভাঙনরোধের কার্যকর ব্যবস্থা আজও অধরাই রয়ে গেছে। ফলে প্রতি বর্ষায় নদী তীরবর্তী মানুষের হৃদয়ে তৈরি হয় নতুন ভয়ের ঢেউ— কখন জানি ঘরটি, ফসলের জমি অথবা বহুদিনের বসতভিটা পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ভাঙনের কারণে কেউ হারিয়েছেন জমিজমা, কেউ হারিয়েছেন বাড়িঘর, আবার কেউবা জীবিকার পথ। অনেক পরিবারকে বারবার স্থানান্তরিত হয়ে নতুন করে জীবন গড়তে হচ্ছে। শিশুদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হচ্ছে, বৃদ্ধদের জন্য তৈরি হচ্ছে মানবেতর পরিস্থিতি। প্রতিনিয়ত নদীভাঙনের আতঙ্কে তারা প্রকৃত অর্থেই এক অস্থির জীবনযাপন করছেন।
তাই তাদের দাবি এবার আর শুধু মুখের প্রতিশ্রুতি নয়, চাই বাস্তবসম্মত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে টেকসই বাঁধ নির্মাণ, ড্রেজিং, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের পুনর্বাসন— এসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। স্থানীয়দের প্রত্যাশা, রাজনৈতিক দল যে-ই হোক, এবার অন্তত একটি স্পষ্ট, কার্যকর এবং স্থায়ী সমাধান দেখতে চান তারা।
সোহান মাহমুদ/এফএ/এমএস