বাগেরহাট আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার
লবণাক্ত পানিতে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার ইনকিউবেটর
বেলজিয়াম থেকে আমদানি করা ইউকিউবেটরে মরিচা ধরতে শুরু করেছে/ছবি-জাগো নিউজ
লবণাক্ত পানিতে নষ্ট হচ্ছে বাগেরহাটে অবস্থিত আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারের কোটি টাকার ইনকিউবেটর। বেলজিয়াম থেকে আমদানি করা এ মেশিনে মরিচা ধরতে শুরু করেছে। নষ্ট হয়ে পড়ে আছে চিলার মেশিন (পানি কুলিং সিস্টেম)। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা না হলে দ্রুত নষ্ট হতে পারে ইনকিউবেটরসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। এতে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের কাঁঠালতলা এলাকায় তিন একর জমিতে দুই দশক আগে নির্মিত হয় বাগেরহাট সরকারি মোরগ-মুরগি পালন কেন্দ্র। সম্প্রতি দক্ষিণাঞ্চলে হাঁসের খামার বেড়ে যাওয়ায় এই মুরগি পালন কেন্দ্রটিতেই গড়ে তোলা হয় আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার। হাঁস পালন ও প্রজনন, হাঁসের বাচ্চা ও ডিম বিক্রি এবং প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার গড়ে তোলা হয়। খামারটিতে ছয়টি লেয়ার শেড ও একটি করে অফিস ভবন, ডরমেটরি ভবন, হ্যাচারি ভবন, ব্রুডার শেড, গ্রোয়ার শেড, গোডাউন, গ্যারেজ, পাম্প হাউজ, জেনারেটর হাউজ রয়েছে।
কাড়াপাড়া এলাকার খামারি হাসনা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘কাউন্সিলের সামনে খামার থেকে হাঁসের বাচ্চা কিনে আনি ২৫ টাকা করে। হাঁসের বাচ্চার মানও খুব ভালো। আগে বাইরে থেকে নিতে গেলে এইগুলো আরও বেশি দিয়ে নিতে হতো। এগুলো কয়েক মাস লালন-পালন করে একেকটি ৫০০-৭০০ টাকায় বিক্রি করি।’
একই এলাকার আরেক খামারি জোহরা খাতুন বলেন, ‘আমি অল্প কিছু হাঁস পালন করি। লেখাপড়ার জন্য খুব বেশি হাঁস আমি পালন করতে পারি না। একটু বড় হলে খাওয়ার পাশাপশি বিক্রিও করি। এতে মোটামুটি হাত খরচ হয়ে যায়।’
আরও পড়ুন:
দৈনিক ৬৫ হাজার টাকার ডিম বিক্রি করেন জাকির হোসেন
২ কোটি ডিম উৎপাদন: কিশোরগঞ্জের হাওরে হাঁস পালনে সম্ভাবনার আশা
কথা হয় আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারের আউটসোর্সিং কর্মী জয়নুল আবেদীনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি একটি লেয়ার শেডে কাজ করি। লেয়ারে শেডে হাঁস আছে পাঁচশোর মতো। সেখান থেকে দৈনিক ৩০০-৩৫০টি ডিম পাই।’
তিনি বলেন, ‘বাগেরহাটে হাঁসের খামারের মূল সমস্যা পানি। পানি লবণাক্ত ও আয়রনের করণে ইনকিউবেটর মেশিনগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চিলার মেশিনগুলো একেবারে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। মিষ্টি পানির ব্যবস্থা করা গেলেই রক্ষা করা যাবে কোটি টাকার এই সরকারি সম্পদগুলো।’

আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারের পোল্ট্রি টেকনিশিয়ান উজ্জ্বল কুমার রায় জানান, খামারে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার। এর বিপরীতে নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার বাচ্চা উৎপাদন করা গেছে।
প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, তারা পারিবারিকভাবে হাঁসের খামার গড়ে তুলছেন। আমাদের এখান থেকে খামারিরা সরকারি মূল্যে ২৫ টাকা পিস হাঁসের বাচ্চা নিয়ে যান। খামারিরা বসতবাড়ি ও আশপাশে খামারে হাঁস পালন করে নিজেদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন।
উজ্জ্বল কুমার আরও বলেন, বাগেরহাটে দিন দিন হাঁসের বাচ্চা চাহিদা বেড়ে চলেছে। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করে মিঠা পানির ব্যবস্থা করা না হলে বাচ্চা উৎপাদন ব্যাহত হবে।
আরও পড়ুন:
সন্ধ্যা হলেই যেখানে বাতাসে ভাসে হাঁস ভুনার সুবাস
ডাক প্লেগ রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কার বাকৃবির গবেষকদলের
আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এ এফ এম ফয়জুল ইসলাম বলেন, এখানে যেসব বাচ্চা উৎপাদন হয় তা মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, চিতলমারীসহ বাগেরহাটের পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে সরকারি মূল্যে বিক্রি করা হয়। আমরা হাঁসের বাচ্চা উৎপাদনে দেশের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে আছি।
তিনি বলেন, লবণাক্ত পানি ও আয়রনের কারণে ডিম ফোটানো ইনকিউবেটারসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কোটি টাকার এই ইনকিউবেটর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মিঠা পানির বিকল্প নেই। মিঠা পানির জন্য ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করার দাবি জানান এই কর্মকর্তা।
খামারে কোনো নিরাপত্তা প্রহরী নেই। যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় রকমের দুর্ঘটনা। খামারের নিরাপত্তার জন্য দ্রুত নিরাপত্তা প্রহরীর পদ সৃষ্টি প্রয়োজন বলে জানান ফয়জুল ইসলাম।
নাহিদ ফরাজী/এসআর/এমএস