ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ঝালকাঠিতে গণহত্যা

চোখের সামনে ১৯৬ জনকে হত্যা করে পাকবাহিনী, পালিয়ে বাঁচেন অমল

জেলা প্রতিনিধি | ঝালকাঠি | প্রকাশিত: ০২:৫০ পিএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

মুক্তিযুদ্ধের সময় দীর্ঘ ৯ মাস হিন্দু, মুসলিম, নারী, পুরুষ নির্বিচারে বাঙালির রক্তনেশায় গণহত্যা চালায় পাক হানাদার বাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় এক রাতেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয় ১৯৬ জনকে। তবে ১০ বছরের এক শিশু সেদিন গুলির মুখ থেকে পালিয়ে জীবন রক্ষা করে। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া সেই অমল কংশ বণিক সুগন্ধা পাড়ের গণহত্যার একমাত্র জীবন্ত সাক্ষী।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতে ঢাকায় প্রথম আক্রমণ করে পাকবাহিনী। ধারাবাহিকতায় ২৭ এপ্রিল ঝালকাঠিতে প্রবেশ করে অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যা শুরু করে। ঝালকাঠি সদর উপজেলা, নলছিটি, রাজাপুর ও কাঠালিয়ায় বাঙালি হত্যায় মেতে ওঠে। ৩০ মে সদর উপজেলার পোনাবালিয়া থেকে ১২৮ জন ও সাচিলাপুরের আশপাশ থেকে ৬৮ জনসহ মোট ১৯৬ জনকে সুগন্ধা নদীর পাড়ে (বর্তমান পৌর খেয়াঘাট) হত্যা করা হয়। গণহত্যার শিকার ১৯৬ জনের মধ্যে ১৯৫ জনই ছিলেন হিন্দু। আনসার আলী খান নামে একজন ছিলেন মুসলিম। তবে ১৯৬ জনের বাইরে ১৯৭তম ব্যক্তি হিসেবে বেঁচে ফেরেন অমল কংশ বণিক। তিনি এই গণহত্যার জীবন্ত ও কিংবদন্তি এক সাক্ষী।

অমল কংশ বণিক বলেন, আমাদের ১৯৭ জনকে পাক বাহিনী ধরে ঝালকাঠি থানায় এক রাত রাখে। ভোর থেকে চারজন করে সুগন্ধা নদীর পাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। চারজন করে গুলি করে হত্যা করা হয়। শেষের দিকে পাকিস্তানি এক পুলিশের দয়া হয় ১০ বছরের আমাকে দেখে। রশি খুলে দিয়ে তিনি আমাকে পালাতে বলেন। আমি নদী সাঁতরে কোনোমতে ওই পারে উঠলে মাঝিরা আমাকে বাঁচায়।

স্থানীয় চাঁদ মোহন কংশ বণিক বলেন, তার আপন বড় ভাই সতীশ চন্দ্র কংশ বণিক, ভাইয়ের দুই ছেলে সুধীর চন্দ্র কংশ বণিক ও সুনীল চন্দ্র কংশ বণিকসহ এই বংশের আরও অনেককে সেদিন হত্যা করা হয়। যার মধ্যে আছেন অনিল কংশ বণিক, সুবল চন্দ্র কংশ বণিক ও রাখাল চন্দ্র কংশ বণিক। এছাড়া মনোরঞ্জন সাহা, গোপাল সাহা, রামপ্রসাদ চক্রবর্তী, নিরুপদী চক্রবর্তী, গৌরঙ্গ দাস (ধোপা), পরান সাহা, যামিনী সাহা, গুপিনাথ সাহা ও মদন সাহাসহ অনেককে হত্যা করা হয় সেদিন।

ঝালকাঠি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোস্তফা কামাল মন্টু বলেন, ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল পাকহানাদার বাহিনী ঝালকাঠিতে প্রবেশ করেই অগ্নিসংযোগ শুরু করে। বিভিন্ন জায়গা থেকে হিন্দু-মুসলিম নারী-পুরুষ ধরে আটকে রাখতে শুরু করে। এরপর ৩০ মে বর্তমান পৌরসভা খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকায় নিয়ে গুলি করে গণহত্যা করে। জানামতে ওই দিন (৩০ মে) ১৯৬ জনকে পাকবাহিনী হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধ শুরু করলে ৮ ডিসেম্বর পাকবাহিনী ঝালকাঠি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. মমিন উদ্দিন জানান, ঝালকাঠি পৌরসভা খেয়াঘাট সংলগ্ন বধ্যভূমির স্মৃতি রক্ষার্থে এবং আত্মদানকারী বীর বাঙালিদের সম্মানার্থে সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। ৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছে। হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভাও করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সূর্য সন্তান। তাদের এবং আত্মদানকারী শহীদদের অবদান অমলিন।

মো. আতিকুর রহমান/এফএ/জেআইএম