ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

৩০ বছরে নেননি অতিরিক্ত ছুটি, প্রধান শিক্ষককে রাজকীয় বিদায়

জেলা প্রতিনিধি | শেরপুর | প্রকাশিত: ১০:০১ পিএম, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫

শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকে নৈমিত্তিক ছুটি ছাড়া একদিনও ছুটি নেননি। তাই তার চাকরি জীবনের শেষদিনে রাজকীয় বিদায় জানালেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে শেরপুর সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের চরসাপমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিকুর রহমানের অবসর উপলক্ষে এমন বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দা মোহসীনা সোবহান।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম রাব্বানী। স্থানীয় মো. আল আমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মানপত্র পাঠ করেন প্রাক্তন শিক্ষার্থী মাহদী মাসুদ।

আলোচনা শেষে প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমানকে ফুলেল শুভেচ্ছা, ক্রেস্ট ও উপহারসামগ্রী দেওয়া হয়। পরে ফুল সজ্জিত ছাদখোলা গাড়িতে সামনে পেছনে মোটরসাইকেলের শোডাউন দিয়ে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষক-অভিভাবকরা। এসময় গাড়ির দুই পাশে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে তাকে অভিবাদন জানানো হয়।

jagonews24

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিদায়ী প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান ১৯৯৫ সালে সদর উপজেলার ফটিয়ামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে তিনি বদলি হয়ে চরসাপমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন। এরপর থেকে তিনি দীর্ঘ ২৬ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আহসান হাবিব বলেন, ‘আমি সিদ্দিক স্যারের ছাত্র ছিলাম। অসুস্থ থাকলেও স্যার স্কুলে এসেছেন। স্যারকে কখনো ছুটি নিতে দেখিনি।’

প্রাক্তন শিক্ষার্থী বর্ষা আক্তার বলেন, ‘সিদ্দিক স্যার আমাদের সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। তার আদর-শাসনেই আমরা মানুষ হয়েছি। তার বিদায়ে আমাদের অন্তর ভারাক্রান্ত। আমরা স্যারের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।’

আবেগাপ্লুত হয়ে বিদায়ী প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সরকারি ছুটি বাদে আমি কখনোই নৈমিত্তিক ছুটি কাটাইনি। বিদ্যালয়টিই আমার পরিবার। আজ বিদায় বেলায় শিক্ষার্থীদের দেখে আমি খুবই আনন্দিত, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমার সকল সন্তানেরা ভালো থাকুক।’

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘অনেকেরই ধারণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা হয় না। সেই ধারণাকে বদলে দিয়েছিলেন সিদ্দিক স্যার। আমরা তার সাফল্যের সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই।’

সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দা মোহসীনা সোবহান বলেন, ‘বিদায় বা অবসর রুটিনমাফিক প্রক্রিয়া। প্রতিমাসেই কোনো না কোনো শিক্ষক অবসর নিলেও সবাই এমন বিদায় পায় না। সত্যিই তিনি কর্মকালীন জীবনে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেলেন। এটি তার জন্য একটি অনন্য অর্জনের পাশাপাশি আমাদের জন্যও গৌরবের।’

মো. নাঈম ইসলাম/এসআর